পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭৮
হারানাে খাতা।

মা আছে, মেয়েরা বউয়েরা আছে, তাদের মধ্যে আমি বেশ থাকতে পারবো। আপনার বাগান বাড়ীতে আমি আর যাবো না।” সুষমার কণ্ঠে ভৎর্সনার ভাব প্রকাশ পাইল।

 সেকথা কানে না তুলিয়াই নরেশ কহিলেন—“বেদানা! আমার স্ত্রী হয়ত ঠিকই মনে করিয়ে দিয়েছেন, আজও হয়ত আমি তোমায় ভালবাসি। অথচ এই আমার জন্যই তুমি বিশ্বের ঘৃণা ও লাঞ্ছনার তরঙ্গে প’ড়ে, হাবুডুবু খেতে খেতে অসহায় অনাদৃত ভেসে ভেসে বেড়াচ্চো, আর আমি নিজেকে নিয়ে গৌরব ও সুখ সম্ভোগ করাচ্চি! না, আর তা হবে না। আজ রাত্রেই তোমায় আমি বিয়ে করবো। বলতে তো কেউ কিছুই বাকি রাখেনি, আরও তাদের যতখুসী নিন্দা করুক না। আমি কার কথাই আর শুনবো না, তুমি আমার স্ত্রী!”

 সুষমা নরেশের কথার ভঙ্গীতে ও তাঁহার দৃঢ় কণ্ঠশব্দে অবাক ও আশ্চর্য্য হইয়া গিয়া সভয়চক্ষে তাঁহার ক্রোধ ও আবেগোত্তেজিত মুখের দিকে বারেক চকিত কটাক্ষ করিল, তারপর তাঁর পায়ের কাছে পড়িয়া আকুল ক্রন্দনোচ্ছ্বাসের মধ্যে বলিল “না, না, সে আমি হতে দেব না। আমি এইবার জন্মের মতন চলে যাচ্চি, আর কক্ষনো আমার নামও আপনি শুনতে পাবেন না, এবারকার কথা শুধু ভুলে যাবেন।”—সে কাঁপিতে কাঁপিতে উঠিয়া দাঁড়াইবার চেষ্টা করিল।

 নরেশ তাহার কাছে একটুখানি অগ্রসর হইয়া দাঁড়াইলেন, স্থিরকণ্ঠে কহিলেন “তুমি ভুলে যাচ্চো বেদানা! তোমায় কখন ত্যাগ করবো না বলে যে তোমার মার কাছে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলেম। বিবাহ ভিন্ন অন্য রকমে তোমায় আশ্রয় দেওয়া আমার পক্ষে ক্রমেই যে কত কঠিন হয়ে উঠছে সে তুমি দেখচোই তো? অতএব ভালমন্দ যাই হোক এই আমাদের পথ, এর পরিণাম যা হবার হবে—উপায় কি তার?”