পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৭৯

 সুষমা তখন তাহার বিষাদসমাচ্ছন্ন অধৌত মুখখানি উন্নমিত করিল; দুঃখের অশনি প্রহারে ফাটিয়া পড়া অন্তরের ব্যথা চাপিয়া সেই অশ্রু প্রবাহের মধ্যেই অত্যন্ত করুণ একটুখানি হাসিয়া সে তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল “আরও একটা উপায় আমার আছে সেটা ভুলে যাবেন না। অপরের অত্যাচার থেকে বাঁচবার জন্যে সেটা আমি নির্ব্বাচন করতে ভরসা করিনি বটে; কিন্তু যিনি রক্ষক তিনিই যদি ভক্ষক হন, তা’হলে অগত্যাই সেই পথটাকেই আমায় বেছে নিতে হবে। আমি মরবো।”

 নিরতিশয় ব্যথা ও লজ্জানুভব করিয়া নরেশ জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাহলে তুমি কি করতে বলো? স্রোতের মুখে তোমায় ভাসিয়ে দেব?”

 সুষমা তাহার গম্ভীর ও শোকাহত মুখের দিকে চাহিয়া মৃদু ও শান্তভাবে জবাব দিল, “সামান্য কিছু টাকা দিন, কানাই সিংয়ের দেশেই আমি যাব।”

 নরেশ চলিয়া গেলেন, কিছু পরে আসিয়া দেখিলেন, সুষমা একা নাই, তার সঙ্গে নিরঞ্জন অত্যন্ত আগ্রহ ও আনন্দের সহিত কি কথাবার্ত্তা কহিতেছে।

 নরেশকে প্রবেশ করিতে দেখিয়াই নিরঞ্জন একঝলক আনন্দের হাসির সহিত তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল “এ যে আমার আনন্দময়ী—”

 সুষমা ত্রস্তে বাধা দিল “আমায় অমন কথা বলবেন না, আমি আপনার অতি দীন হীনা মেয়ে।”

 নরেশ নিরতিশয় বিস্ময়ের সহিত কহিলেন “তোমাদের দুজনে চেনাশোনা হলো কি করে?”

 শুনিয়া হঠাৎ নরেশ যেন গভীর অন্ধকারের মধ্যে এক ক্ষীণ আলোক রেখার সন্ধান পাইলেন। হাত ধরিয়া বলিলেন “নিরঞ্জন! যাকে তুমি মা বলে উল্লেখ করতে যাচ্ছিলে, একান্ত অসহায় জেনে অনেক মন্দলোকে