পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা।
১৮১

 নিরঞ্জন সব কথা শুনিয়া একটা ক্ষুদ্র নিশ্বাস পরিত্যাগ করিল, বলিল “মা! সমাজ বন্ধনের মধ্যে জাতি নীতি কুল গোত্র এ সমুদয়ের নিশ্চয়ই দরকার আছে। কিন্তু তার বাইরে সন্ন্যাসী সম্প্রদায়ে শুধু চাই চরিত্র ও ত্যাগ। তোমার ক্ষুদ্র ইতিহাসে ও-দুটি জিনিষই প্রভূতপরিমাণে দেখতে পেলুম। আমরা মায়ে ছেলেতে যদি কোন সেবাশ্রমে, যদি কোন পুণ্যক্ষেত্রের সন্ন্যাসীপরিচালিত কর্ম্মশালায় সন্ন্যাসগ্রহণ করে কাজ নিই, তা হলে তোমার মা কি ছিল, সে প্রশ্নও যেমন অনাবশ্যক হয়ে যাবে এবং তোমার”—

 নরেশ গভীর আবেগ ও আনন্দোত্তেজনায় নিরঞ্জনকে একেবারে জড়াইয়া ধরিয়া কহিয়া উঠিল “ঠিক বলেছ নিরঞ্জন! সুষমার মত মেয়েরা যখন সমাজের জন্য নয়, তখন ওদের জন্য কোন সামাজিক জীবের আশ্রয়ও সুসঙ্গত নহে। এ সম্বন্ধে আমরা পরে কথাবার্ত্তা কইবো। ওদের মতন মেয়েদের জন্য একটি সন্ন্যাসিনী পরিচালিত আশ্রম করতে পারার বোধ হয় খুবই দরকার আছে।”

 নিরঞ্জন উৎফুল্লকণ্ঠে কহিয়া উঠিল, “এক সময় আমার মনের এটা একটা মস্তবড় কল্পনাই ছিল। মিসনরীরা যেমন পথে কুড়নো (ফাউণ্ডলিং) ছেলে মেয়েদের জন্য আশ্রম করে রাখে, ঠিক তেমনি হিন্দুসমাজ থেকে কেন করা হবে না? যে সব পতিতা নারী, বা পতিতার মেয়ে, সুপথে ফিরতে চায়, তাদের আশ্রয় কোথায়? এই সুষমা-মায়ের মতন নিস্পাপ হয়েও যারা মায়ের পাপের ফলে এ জন্মটা সমাজের বাইরে, অথচ সৎপথে থেকে দৃঢ় তপস্যায় ক্ষয় করতে সমর্থ, তারা কেন সে সুযোগটুকু পাবে না? বৈষ্ণবের আখড়া বা মঠধারীদের আড্ডা যথার্থ রক্ষামন্দির যে নয়, সে জ্ঞান সকলের নেই। এদের দ্বারাও কত কাজ যে করিয়ে নেবার আছে। যে কাজ মিসনরী মেয়েরা এবং তাদের