পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
হারানাে খাতা।

কালাে বলে, এত তুচ্ছ ভাববে যদি, তা’হলে কেন আমায় রাণী কর্‌তে নিয়ে এলে? আমি না হয় সেখানে পড়ে থেকে মরেই যেতুম। আমার মতন পােড়াকপালীর মরণই ভাল ছিল যে। আজ যদি আমি আবার তােমায় হারাই, তাহলে বেঁচে থেকে আমার হবে কি?

 আবার—সে আবার বর্ত্তমান আঘাতের ও নিরুদ্ধবেদনায় ভরা অতীত স্মৃতির স্মরণে অজস্র কান্নার ফাটিয়া পড়িল। কিন্তু তার পরই তার মনে হইল, হয়ত এতক্ষণ তার স্বামী তাঁর ভালবাসার জনকে পাশে লইয়া তাহাকে ফেলিয়া কোথায়—কত দূরেই চলিয়া যাইতেছেন। নিজের দুর্ভাগ্যপূর্ণ এবং স্বজনত্যক্ত অতীত আবার যেন নিজের ভয়াবহ মূর্ত্তিখানা লইয়া মনের মধ্যে উকি মারিয়া গেল। অমনই সেই প্রচণ্ড অভিমান যেন বন্যাধারায় ভাসিয়া গেল। সে সহসা বিদ্যুৎবেগে বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া বাহিরের বারান্দায় ছুটিয়া আসিল। কিন্তু সেখানে মােটর প্রভৃতি বাড়ীর কোন গাড়ী প্রতীক্ষা করিতেছে না, খিড়কীর সামনে শুধু একখানা ভাড়াটে গাড়ী দাঁড়াইয়া আছে। পরিমল ইহা দেখিয়া ঈষৎ আশ্বস্তচিত্তে ফিরিয়া যাইতেছিল, সহসা নজরে পড়িয়া গেল নীচে সেই ভাড়া গাড়ীর অভিমুখে একটা ক্ষীণাঙ্গী ও সুন্দরী মেয়ে অগ্রসর হইয়া আসিতেছে। ইহাকে দেখিয়া সে সুষমা বলিয়া মনে করে নাই, কিন্তু যখন তাহারই পশ্চাতে পশ্চাতে আসিয়া নিরঞ্জনও সেই গাড়ীতে উঠিল এবং পরমুহূর্ত্তে নরেশ আসিলেন ও নিরঞ্জনের হাতে একটা চিঠির খাম দিয়া বলিলেন “এই চিঠি দেখালেই তারা সমস্ত ঠিকঠাক করে দেবে। সুষমা! তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ হতে পারবে জেনেই নিরঞ্জনকে আমি তােমায় দিলুম। দেখচি ওর মতন বন্ধু আমার আর জগতে কেউ কোথাও নেই।”—তখন সেই নিরাড়ম্বর বেশধারিণী ও বালিকাকৃতি মেয়েটাকে সুষমা জানিয়া পরিমল