পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৮৭

দিয়ে আমি এক মস্ত কাজের ছোট্ট বীজ বপন করেছি। আনিস বেটা! বদরীনারায়ণে গিয়েও তোর কথা আমার মনে জাগ্‌ছিল। পথে এক তোর মত পাঞ্জাবী মেয়ে হাতে পেলুম, তার মা বেটী আমার পা জড়িয়ে পাঁচ বছরের মেয়েকে ফেলে দিয়ে ছুটে পালালো,—বল্লে মেয়েটা যাতে ধর্ম্মপথ পায়। বিস্তর ভেবে ভেবে তোদের কথাই আজ পাঁচ ছ বছর ধরে গেয়ে গেয়ে কিছু টাকার জোগাড় করলাম। এর মধ্যে আরও দুতিনটী ছোট ছোট মেয়ে আমার কথা শুনে তাদের মায়েরা আমায় দিয়ে গেছে। পথের ধারে সদ্য জন্মানো একটাকে কুড়িয়েছি। দুজন বুড়োমানুষের জিম্মায় তাদের রেখে তোকে এই নিতে এসেছি। কি হবে বেটা! গান বাজনা শিখে? হরিকে ডাকবার জন্যে নিজের স্বভাবদত্ত কণ্ঠ যতটুকু আছে তাই যথেষ্ট! কাজ কর্; জগতে এসেছিস্, জন্ম সার্থক কর। যে যেমন জন্ম পেয়েছিস বেটা, তাকেই আবার বড় করে নেওয়া যায়। সবাই কিছু সংসারে আর একজনের বউ হবার জন্যে জন্মায়নি। হাঁড়ি কুঁড়ি সাজিয়ে খেলা নাই বা করতে পেলি? ছেলে হয়ে মা না বল্লেই কি তার মা হওয়া যায় না? যাদের দুঃখের জন্ম, লজ্জার জন্ম, জন্মেই যারা সব হারায়—এমন কি নিজের ধর্ম্ম পর্য্যন্ত— তাদের মা হবে কি চিরদিনই ওই সাত সমুদ্র তের নদী পারের বিদেশী মায়েরাই? তোরা দখল করে নেরে বেটা, দেশের ওই অনাদৃত অংশটাকে তোরা নিজের জোরে দখল কর। ক’রে চরিত্রবলে সকলের দৃষ্টি এই দিকে টেনে আন্। এ একটা কম অভাব নেই ত দেশের!”

 ঠিক নিজেদের অন্তরের প্রতিধ্বনি এবং তাহা শুধু কল্পনা মাত্র নয়, বাস্তবের মূর্ত্তিতে তাহার দেখা পাইয়া সুষমা যে কি নিধিই হাতে পাইল তাহা বলিবার নয়। সে মুখে শুধু পুনঃপুনঃ আনন্দাশ্রুসিক্ত হইতে