পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/১৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯০
হারানো খাতা।

বাঁচলুমই। ও না থাকলে আর কার ঘাড়ে যেত, আমার ঘাড়ই সে ভাঙ্গতো নিশ্চয়।

 যে সময়টায় সে নরেশচন্দ্রের খাওয়া দাওয়ার তত্ত্বাবধানের জন্য নীচে নামে এবং কোন কোন দিন একবার করিয়া নিরঞ্জনেরও খোঁজটা খবরটা লয়, তেমনি সময় সেদিন নিরঞ্জনের বিজন ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়াই তাহার নজরে পড়িয়া গেল, একখানা মলাট ছেঁড়া পুরাতন খাতা। এই খাতার প্রথম পৃষ্ঠার ছত্র কয়েক মাসে এক সময়ে পড়িয়াছিল, যখন সবে মাত্র এর আরম্ভ। এতদিনে না জানি মাষ্টার মশাই-এর ডায়রিখানা কতদূর অগ্রসর হইল, সেই খবরটা জানার অদম্য কৌতুহলে পরিমল সেথানা চুরি করিয়া লইল। নিশ্চয়ই এইবার সে এই ছদ্মবেশীকে আবিষ্কার করিয়া ফেলিবে। তবে এই যে ডায়রি এ সত্য সত্যই কি ডায়রি-ডায়রি-চ্ছলে লেখা একটা উপন্যাস নয় তো? নরেশের বিশ্বাস নিরঞ্জন একটা ছদ্মবেশী বড়লোক। কিন্তু পরিমলের মনে নিরঞ্জন সম্বন্ধে খুবই যে একটা কিছু প্রকাও ধারণা জমিয়া আছে, তা নয়। তার বিশ্বাস সে একটু লেখাপড়া জানে, বসন্তে স্বাস্থ্যহারা হইয়াছে, হয় গাঁজা খায়, না হয় আধ পাগলা।—সে লোকটা আবার ডায়রি কিসের লিখিবে? তবে গাঁজাথোর হইলে যে ঔপন্যাসিক হইতে নাই, তেমন তো কোন বিধান দেখা যায় না। অল্প বিদ্যা এবং মস্ত অবসর লাভ বরং এ বিষয়ে কিছু সুযোগই তো ওর কাছে। অনায়াসেই এখানা একখান উপন্যাস হইতে পারে। বেশ তো না হয় তাদের মাসিক পত্রিকার খোরাক হইবে।

 পরিমল এই খাতাখানার প্রথমার্দ্ধ শেষ করিয়া যখন বাকি অংশ পড়িতে আরম্ভ করিল, তার চোখে তখন নিরঞ্জনের তেমন সুন্দর ছাঁদের পরিষ্কার লেখাও যেন কতকগুলা অস্পষ্ট কালির আঁকের মতই,—যেন কতকগুলা পোকার ছানার মতনই কিলিবিলি করিয়া উঠিতেছিল। তার