পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৯১

মাথার মধ্যে যেন একটা গুরু বেদনা, সর্ব্ব শরীরে যেন হাতুড়ি দিয়া পেরেক ঠোকার ব্যথা চোখের দৃষ্টি কখনও ঝাপসা কখনও জ্বালাময়, —আবার কখনও বা প্রবলবেগে প্রবাহিত অশ্রুর বন্যায় সম্পূর্ণরূপেই তাহা বিলুপ্ত হইয়া যাইতেছিল। তাহার অতীত জীবনের তিনভাগেরও বেশী তো দুঃখের মধ্য দিয়া অতীত হইয়াছে, কিন্তু এত বড় যন্ত্রণা-ভোগ যেন তাহার সে সব ভয়ানক দিনেও ঘটে নাই। একি অসম্ভব সম্ভব হইয়া আজ তাহাকে দেখা দিল? একি সত্য? একি স্বপ্ন নয়? একি কোন যাদুকরের খেলা হইতে পারে না?—এও সম্ভব? এও সম্ভব?

 সে খাতায় কি ছিল? এমন কিছুই না। শুধু একটি দুর্ভাগ্য জীবনের দুঃখময় কাহিনী মাত্র। সংসারের খাতা হইতে ছিঁড়িয়া পড়া কয়েকখানি হারানো পাতা। সে পাতা ক’খানি এই রকম।

 “জীবনটা যেন এলো মেলো হয়ে পড়েছে। এর গ্রন্থি যেখানটায় ছিল, সে আর খুঁজে পাওয়া যায় না,—জট পাকিয়ে গেছে কিনা। লোকে আমার কথা জানতে চায়, তাদের কাছে বল্‌বো কি, আমার নিজের কাছেই সবটা যেন খাপ্ ছাড়া গোলমেলে ও অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মনেই কি ছাই ছিল কিছু? আমি যে কোন দেশের লোক, নামটাই বা কি ছিল, অক্ষর পরিচয় আমার কোন দিন হয়েছিল কিনা, এসবই তো ভুলে বসেছিলেম। মনে পড়িলো কবে? তার বছর দেড়েক বাদে হবে বোধ করি? আচ্ছা ডাক্তার সাহেবের আশ্রয় আমি ছেড়ে আসি কোন্ সময়টায়? মনে পড়ে না। কিছু মনে পড়ে না। হ্যাঁ, ভাব্‌তে ভাব্‌তে এই পর্য্যন্ত মনে হচ্ছে যে, তাঁর ওখানে থাকতে থাকতেই আমি একটু একটু বই টই পড়তে পারছিলুম। এক দিন সাহেবের ছোট ছেলের সঙ্গে ইংরেজীতে কথা কইছি, তাই শুনে মেমসাহেব সাহেবকে ডেকে আনেন। তাঁরা আমার ইংরেজী উচ্চারণের প্রশংসা করে কি একটা