পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
হারানাে খাতা।

যেন বই দিলেন, গড় গড় করে পড়ে গেলুম। ভারী খুসী! ছেলেমেয়েরা তো আমার ঘিরে আনন্দে হাত ধরাধরি করে নাচতেই লেগে গেলো।

 তারপর থেকে আমার ভারি খাতির। সাহেবতো তাঁরা নন, সিন্ধুদেশের লোক। চেহারায় আর পোষকে আমার ওঁদের ইটালিয়ান বলে বোধ হয়েছিল, দুদিন পরে বুঝলুম আমার ভুল। আমার বুদ্ধির দশা ঐ রকমই যে হয়ে পড়েছে। কে বলবে যে এই আমিই একদিন, নাকি ডবল অনার নিয়ে বি এ, পাশ করেছিলুম সব্বার ওপোর হয়ে!

 হায়রে—“ধন জন মান, পদ্মপত্রে জলের সমান” এযে দেখছি তারও চেয়ে বেশী!—বিদ্যে বুদ্ধি এগুলোতে ভিতরের জিনিষ, সেতো আর লুঠ করে নেওয়া যায় না,—অথচ দেখা যাচ্ছে যে তাও ফুরোয়। আর দেহের রূপ! সে যে কেমন করেই একেবারে হুবাহুব একখানা পোড় কাঠের মূর্ত্তি নিতে পারে, সে যেদিন প্রথম দেখি, ঐ সিবিল সার্জ্জন মালখানী সাহেবের বাড়ীতেই তাঁর ছোট মেয়ে সীতার হাতের কৌটায় বসার আয়না দিয়ে, সেদিনের কথা,—এইতো দেখছি বেশ মনেই আছে। সেকি সন্ত্রণাই মনের মধ্যে বোধ করেছিলেম। তারপরই বোধ করি আবার আমার মাথা খারাপ হয়ে যায় ও সেই সময় পাগলামীর ঝোঁকে কেমন করে বেরিয়ে পড়ে পালিয়ে আসি। সেতো মনে নেই। তার জন্যে এখনও আমার কিছুই আশ্চর্য্য বোধ হয় না। তবে মানুষ হয়ে যে জন্মেছে সে যদি মানুষের মধ্যের সকল দুর্ব্বলতারই ঊর্দ্ধে উঠ্‌তে পারে, তা হলেতো আর কথাই থাকে না, সে তো তখন পুরুষোত্তম পদ পায়। আমি যদি সেই জিনিস হতে পারতাম, আমার জীবন ধন্য হয়ে যেত। পারিনি, তাই এই দুর্দ্দশা; সেদিন যে আমিকে আমি চিনতুম, সে আমিকে আর দেখতে পেলুম না। সে আমার যে মৃত্যু হয়েছিল, সে আমার আত্মীয়েরা যে আমায় শ্মশান