পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
১৯৩

ঘাটে বিসর্জজন দিয়ে গেছে, সে আমি যে আর বেঁচে নেই, শ্রাদ্ধাধিকারী নেই বলে শ্রাদ্ধ না হয় হয়নি; কিন্তু তার নাম যে মরার হিসাবের সঙ্গে লেখা হয়ে গিয়েছিল; এ জগতের সঙ্গে যে তার কাজ কারবার চুকে গ্যাছে, সেই সব কথাই ওই আয়নার মধ্যে থেকে এক নিমিষের ভিতরে এই নুতন দেখা আধপোড়া ভীষণ মুখখানা আমায় বলে দিলে, আর চেঁচিয়ে উঠে আমি মূর্চ্ছা গেলুম। আর ওকে দেখিনি—কোন দিনই দেখিনি। দেখলে হয়ত এখনও অজ্ঞান হ’য়ে পড়ে যেতেপারি। কি জানি কেনই আমি ওকে সইতে পারিনে,—একেবারেই সইতে পারিনে। যেন মনে হয় ঐ আমার সেই পুরানো অতীতকে—হারানো অতীতকে —আমার কাছে থেকে ডাকাতী করে কেড়ে নিয়েছে। এখন এ মুখ নিয়ে যদিই আমি আমার নিজের ঘরে গিয়ে দাঁড়াই, আমায় কি তারা তাদের সেই পূর্ব্ব পরিচিত রমেশ বলে আদর করে ডেকে নেয়? না পাগল বলে পুলিস ডাকে। এটা আমার জানতে ইচ্ছে করলেও এপর্য্যন্ত পরখ করবার ভরসা আমার হয়নি। লোভ দুএকবার মনে জেগেছিল, কিন্তু কেমন যেন গা ছমছম গা ছমছম করতে লাগলো। আমি যে মরা মানুষ। আগুনজ্বলা চিতা থেকে চুরি করেই না হয় বেঁচে উঠেছি। তা বলে যারা আমায় মর্‌তে দেখেছে তাদের সামনে যাব কেমন করে? ভয়ও হয় লজ্জাও করে। আবার চেহারাখানাও যদি আগের কোন চিহ্ন ধ’রে থাকতো, তাহলেও নয় একটা যাহোক কথা ছিল। যদি কোনও দিন যাই তো সেই ডাক্তার সাহেবকে সঙ্গে করে। কিন্তু তাতেই কি পর্য্যাপ্ত প্রমাণ হবে? তা ছাড়া আমি গিয়েই বা করবো কি? আমার যে কিছু সম্পত্তি ছিল, সে কি আর আজও আমার জন্যে পড়ে আছে? তা ভিন্ন সংসারে বন্ধন বলতে তো আমার কোথাও কিছুই বাকি নেই সে সব যে চুকিয়ে নিয়েছি। নাঃ দরকার নেই, আর জাল প্রতাপচাঁদের দ্বিতীয় প্রহসনে।