পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
হারনাে খাতা।

 “আচ্ছা মানুষগুলাের আসল অবস্থাটা কি? ভেবে ভেবে তার তো কোন কূল কিনারাই আজ পর্য্যন্ত খুঁজে পেলেম না। গাছ থেকে না পড়ে সে মানুষের পেটের থেকে জন্মায়; তা ভিন্ন আর সবই তো তার গাছের ফলের মতই অনিশ্চিত। কোন্‌টা হয়ত ফুলের মধ্যেই লয় পাবে, কোনটা অঙ্কুরেই শুকিয়ে যাবে, কেউ তার চেয়ে বড় হয়ে ঝরে পড়বে, আবার কেউবা টেঁকে থেকে পেকে উঠবে। তা, তাও যে কা’কে কাকে ঠোকরাবে আর কে’বা পড়বে দেবতার নৈবেদ্যে বা রাজভােগে, তারই নাকি কোন ঠিকানা আছে? মানুষগুলােও যেন তেম্‌নি এক একটা গাছের ফল, কুলহারা তরঙ্গ, পথ-হারানো পথিক। হাঁ মানুষ ঠিক যেন পথ হারানাে পথিকই বটে! কোথায় ওদের বাড়ী ঘর, কোথায় ওদের যাত্রা পথের শেষ— তারতো কোন নিকেশই আমি দেখি না। কেবল ঘুরে ঘুরেই পরিশ্রান্ত। একটা গান অনেকদিন আগে শুনেছিলেম, কি কিসে যেন পড়েছিলেম,

‘মন! চল নিজ নিকেতন,
সংসার প্রবাসে, প্রবাসীর বেশে, কেন ভ্রম অকারণ?

কিন্তু ‘নিজের নিকেতন’ কোথায় তার? জন্ম থেকে জন্মান্তর সেতো সেই অনাদি কাল হতেই এমনি করে প্রবাসীর বেশে ভ্রমণ করচে। একি অকারণ? এর উদ্দেশ্য নাকি শেষকালে সেই ‘নিজ নিকেতনে’ পৌঁছান। কিন্তু ক’জন লােকে আজকে পর্য্যন্ত সেখানে পৌঁছতে পারলো আমার যে বড় জান্‌তে ইচ্ছে করে? আমার তাে মনে হচ্ছে, আমি বুঝি কোন দিনই তা পারবাে না। নিজের এ জন্মের বাড়ীখানাকেই মনে হচ্চে যেন সে কতদূরেরই পথে। যেতে গেলে যেন সে পথ আর কখন ফুরবেই না;—তা’ নিজের সেই অসীম অনন্ত পথের শেষ ধারে যে সত্যিকারের বাড়ী আছে, সেখানে আমার পৌঁছে দেবার সাধ্যি কি আর আমার আছে? তা’হলে শুধু এ