পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০২
হারানাে খাতা।

বিচক্ষণ বৃদ্ধ কবিরাজ ছিলেন—মকরধ্বজ সুরকির গুঁড়ো মেশাতে না জানায়, তাঁর কিছুমাত্র পশার ছিল না। তাঁকে দিয়ে খাঁটি মকরধ্বজ তৈরিটা শিখে নেবার চেষ্টা করতে লেগে পড়া গেল। তাঁকে আমার সহায় করে কস্তুরী ভৈরব বা মহামৃত্যুঞ্জয় রসে কস্তুরীর বদলে আদা বাটা বন্ধ করে দেশের লোক যাতে খাঁটি জিনিষটা পায় আর বিলিতি ওষুধের মতন নিঃসঙ্কোচে মারাত্মক রোগীকে খাওয়াতে পারে, তারই জন্যে উঠে পড়ে লাগবো মনে করেছিলেম। তা কপালে তো দেশের সেবা করবার পুণ্য সঞ্চিত করা ছিলনা হবে কি করে?

“আমার কবিরাজখানায় সত্যকার মুক্তাভস্ম, স্বর্ণভস্ম—করাতের গুঁড়ো নয়,—নিখুত নেপালী কস্তুরী এবং যত রকম গাছ গাছড়া পাওয়া সম্ভব ছিল, ক্রমে ক্রমে যোগাড় করে তুল্‌ছি, এমন সময় এমন মারাত্মক হয়ে আমাদের দেশে বসন্ত মড়ক দেখা দিলে যে তার কাছে আসল নকল সব রকমের কস্তুরী ভৈরব বা মৃত্যুঞ্জয় রস ভয় পেয়ে পালিয়ে রইলো। হরিনাম সহজে তো কেউ নেয় না। তা একদিনের মধ্যে অমনি পঁচিশবারই হয়ত ঐ নাম গানটা কানে শোনা তো যেতই, মুখেও বলতে হয়েছে বই কি পাড়া পড়শীর খাতিরে। মা আমার জন্যে ভয় করলেও নিজে নির্ভয়ে পড়সীর সেবায় ছুটে যেতেন; আমায় এঁটে উঠতে না পেরে কপাল চাপড়ে খুন হতেন, কিন্তু তবু জোর ক’রে বারণ করতেন না, কেঁদে বলতেন ‘ও নিজের কাজ করে রাখচে, বারণ আমি করবো কি করে? বিপদতারণ তো আছেন, তাঁকেই প্রাণপণে ডাকচি।’

“প্রথমে এ বাড়ীতে বসন্তের ছোঁয়া লাগলে সুখদার মাকে। তাঁর সেবা আমরা তিন জনেই কর্‌ছিলুম, কিন্তু দুজনেই আমরা একদিনের আড়া আড়িতে দুজনকারই মাকে হারিয়ে ফেল্লেম। সুখদা মেয়ে মানুষ সে লুটোপুটি করে তার হারানো জিনিষের জন্য চেঁচিয়ে কেঁদে শোক প্রকাশ করলে, কিন্তু বেটাছেলে হয়ে জন্মেছি বলে আমার কত বড় ক্ষতি