পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৪
হারানাে খাতা।

 “হাসপাতালের কম্পাউণ্ডারদের কাছে পরে শুনেছি, ডাক্তার যে দিন বজরা করে আস্‌তে আস্‌তে জ্বলন্ত চিতা থেকে আমায় মাটিতে আছড়ে পড়তে দেখে ছুটে গিয়ে আমায় জীয়ন্ত দগ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করেন, তার পর থেকে প্রায় ছয় মাস পরে আমার গায়ের ঘা শুকিয়ে আমার বাঁচবার আশা দেখা দেয়। এতকাল ধরে হাঁসপাতালের বাহিরে একটা স্বতন্ত্র ঘরে পড়ে আমি মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছি। প্রাণ, জিনিসটা তো কঠিন বড় কম নয়! আচ্ছা এই যে আমি মরে গিয়েও বেঁচে উঠলুম, এর পর থেকে কি আমার পুনর্জ্জন্ম হলো না? আমি কি আর সেই আগের আমিই আছি? মরে যে গিয়েছিলুম, তা ত বুঝতেই পারা যাচ্ছে। পোড়াতে যারা এনেছিল’ তারা আমার নিকট বন্ধু কেউ যে নয়, তা চিতায় তুলে দিয়ে প্রস্থান করার প্রমাণও হচ্ছে। কিন্তু কি ভয়ানক আয়ুর জোর আমার! আর অমন নির্জ্জন ‘শ্মশান’ ঘাটেও কিনা অত বড় ‘বান্ধব’ জুটে গেল! সেই গলা পচা বসন্তের রোগী তুলে এনে, একবেলার পথ বয়ে এনে এই যে ছ মাস ধরে প্রাণপণ চেষ্টায় বাঁচালেন এ কি বড় সহজ কথা। আমার প্রাণটাকে যদি একটুও মায়া করবার দরকার থাক্‌তো, তা’হলে তাঁকে আমার রোজ সকালে উঠে ফুল চন্দনে পূজা করাই উচিৎ ছিল, কিন্তু তা না থাক্‌লেও তাঁর দয়ার যে শেষ হয় না তা আমায় স্বীকার তো করতেই হবে। তাঁর পায়ের তলায় পড়েই এই নূতন জন্মটাকে আমার ক্ষয় করে যাওয়াই উচিত ছিল বই কি! কিন্তু তখন কি আর মাথার কোন ঠিক আছে? কে আমি কি করচি, কোথায় যাব—সবই যে ভুল হয়ে গেছলো। ছ মাসের পর প্রাণের আশা! তার পর পাঁচ ছয় মাস প্রায় পাগলামীর বিকারে কেটে যাবে। ভাল কবে উঠতে বসতেও পেরেছি নাকি ন’মাস দশমাস পরে। সবশুদ্ধ বৎসর দেড়েক আপনা ভোলা হয়ে ছিলুম, অর্থাৎ জীবধর্ম্ম ছাড়া মানুষের ধর্ম্ম বড় কিছুই আমার মধ্যে ছিল না। তবে নিরুপদ্রব