পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
২০৫

বলে পাগলা গারদে না পাঠিয়ে আমায় ভগবান আমার নিজের হাঁসপাতালেরই একপ্রান্তে ঠাঁই দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু কপালে যে বিষয় বিড়ম্বনা লেখা আছে হবে কি—মনুষ্যত্ব ফিরে আসতে না আসতে এই মুখের ছবি আমায় পাগল করে এবার পথেই ঠেলে বার করে দিলে।

 “তার পরের কথা আরও যেন খেইহারা, খাপছাড়া। আসল কথা এই যে, তখন তো আর আমার কথা বলবার জন্য ডাক্তার সাহেবের কম্পাউণ্ডার বা চাকর বাকর কেউ সাক্ষী হয়ে বসেছিল না। কোথায় কোথায় গেলুম, কবে যেন একবার ভাল হয়ে কোনখানে চাকরী করি! শীতকালটা থাকি ভাল, আবার নাকি পাগলামী ঘাড়ে চাপে, তারা তাইতে তাড়িয়ে দেয়। এমনি কি কি ঘটেছিল, ঠিক ঠিক মনে না থাকলেও একটু একটু স্মরণে আসে। শেষে যেখানে চাকরী করি তারাই আমার পাগলা গারদে পাঠিয়ে দেয় বুঝি। তা সেখান থেকে বেরিয়ে অবধি আর পাগল হইনি, তবে নূতন ক’রে জ্বরে পড়ে এমন দশা হলো যে আর খেটে খাবার শক্তিটুকুও ছিল না। দু’চার দিন ভিক্ষে করে কিছু কিছু পেটে দিই, দু’চার দিন না খেয়েই কাটে, তার পর থেকে সকল কথাই বেশ স্পষ্ট মনে আছে। এই যে রাজা আমায় আমার আগের জন্মের মতনই মান দিচ্ছেন, এর কি আমি একটুখানিও যোগ্য?

 “আচ্ছা তা’হলে মানুষের সব চেয়ে বেশী দুর্ভাগ্যটা কিসে? সব হারানো, না জ্ঞান হারানো? বোধ করি জ্ঞান হারানোর মতন পাপের ভোগ আর কিছুতেই নয়। সবই তো আমার এই প্রানের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। সেই জ্ঞানই যদি না রইলো তা’হলে আমার “সব”কে যে আমি হারিয়েছি, তাই আমি জানতে পারলুম কই? দুঃখ জিনিষটা যে সর্ব্বথাই পরিত্যজ্য তাও তো নয়। দুঃখকেও ভোগ কর্‌তে একটা সুখ আছে। আমার যে মা আমার ইহজম্মের আরাধ্যা দেবী ছিলেন, তাঁর বিয়োগ দুঃখকে যদি আমার মন নিশ্চিহ্ণ করে মুছে ফেলে দেয়, তা’হলে