পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
হারানাে খাতা

কিন্তু সে তবুও বরং পদে আছে, নিজের লেখার প্রুফ তার চেয়েও যে ঢের বেশী শক্ত, সে হয়ত তাঁদের জানা নেই।”—বলিয়াই নরেশচন্দ্র হো হো করিয়া প্রাণ খোলা হাসি হাসিয়া ফেলিলেন।

 নিরঞ্জন বলিল “তা’বলে আপনার হস্তাক্ষর অত কদর্য্য নয়; যাই হোক যখনই দরকার হবে আমাকে আপনার লেখা দেবেন। ‘ফেয়ার’ করে দেবো—”

 নরেশচন্দ্র অকস্মাৎ হাসি বন্ধ করিয়া ঈষৎ গম্ভীর হইয়া উঠিলেন, “নিরঞ্জন! তুমি ইংরেজীও বেশ জানো, না? ওকি চুপ করে থাকলে কেন? বলোনা ভাই, ক্ষতি কি তাতে? আমি দেখেছি সে দিন তুমি লাইব্রেরী ঘরে বসে একটা কালো চামড়াবাঁধা কি বই পড়ছিলে, সে বইটা হয় ডিকেন্সের কোন নভেল, কিম্বা বায়রণের কিছু।”

 নিরঞ্জন তাহার নত মুখখানা চকিতে তুলিয়া চাহিল। তাহার সে মুখে যেন আর রক্তের চিহ্ন পর্য্যন্ত ছিল না। স্নান ও শুভ্র অধর তাহার থর থর করিয়া কাঁপিয়া উঠিল। এক মুহূর্ত্ত অত্যন্ত ব্যথিত বেদনায় আর্ত্তচোখে চাহিয়া থাকিয়া পরিশেষে সে যেন অস্ফুট বিলাপের ভাষায় কহিয়া উঠিল, “কি জানি, কেন আবার ওই সব জন্মান্তরের স্মৃতিগুলো আমার মাথার মধ্যে এসে জড়ো হচ্ছে! মনে করেছিলুম, সবই বুঝি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে; কিন্তু ভয় করছে তা বোধ করি না যায়নি—যায়নি—উঃ—” বলিয়াই সে এমন জোর করিয়া কপালটা টিপিয়া ধরিল ও স্বলিত পদে পাশের দেওয়ালে দেহের ভর রাখিল, যে নরেশের বেশ স্পষ্ট করিয়া বুঝিতে আর কিছুই বাকি থাকিল না যে, পূর্ব্বস্মৃতির মতন জ্বালাময় এ লোকটার কাছে যেন তার সেই মুমূর্ষু নিঃসহায় অবস্থাটাও নয়। এইটেকেই সে যেন সব চেয়ে বেশী এড়াইয়া চলিতে চাহে বলিয়াই নিজেকে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সকল সম্বন্ধ হইতে উপড়াইয়া লইয়া