পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৫৫

বাগবাজারের রায়েদের মেয়ে কি চো-গাঁয়ের জমিদার-রাজাদের কেউ, তা’হলে কক্ষণই আমার উপর এতটা জোর উনি চালাতে পারতেন না। আমি দুঃখী, আমার কেউ কোথাও নেই, মনে কষ্ট হ’লে যে একদিন বাপের বাড়ী যাবার ভয় দেখাব, তারও আমার উপায়টুক যে নেই সে জানেন কি না, তাই না আমায় সব কিছুতেই বাধ্য করতে সাহস করেন!”

 পরিমলের দুঃখ যেন বুক তার ছাপাইয়া উঠিতে গেল। তারপর মুখ তুলিতেই হঠাৎ নজর পড়িল তাহার খাটের সামনাসামনি রক্ষিত কাপড়ের আলমারিটার আয়না আঁটা কবাটের উপর। দুচোখ ভরা জলের উপর আরও খানিকটা জলের আমদানী করিয়া সে সবেগে মুখখানা ফিরাইয়া লইল। তাই কি ছাই শরীরে তার খুব খানিকটা রূপই আছে! ওই যে বিধাতার পরম করুণার দান,—পার্থিব কোন কিছুরই বিনিময়ে যেটা ক্রয় করিবার উপায় নাই বলিয়া কত কত ধনী গৃহের বিলাসী মেয়েরা অসাধ্য সাধনার আরাধনায় সারাজন্ম ধরিয়া লাগিয়া আছেন এবং সম্পূর্ণরূপে সকলপ্রযত্ন হইতে না পারায় ভাগ্য ও তাহার নিয়ন্তাকে মনে মনে অভিশাপ দিতেও ত্রুটী করিতেছেন না,—পরিমলও সেই বস্তুটার অভাব আজ যেন বড় বেশী করিয়াই নিজের মধ্যে অনুভব করিল। এতদিন নিজের রূপহীনতার কথা মনে করিবার অবসরটুকুও তাহার ঘটে নাই বলিয়াই বোধ করি সেকথা তাহার মনে ছিল না। বরং ভোগে ও স্বাস্থে যে দরিদ্র জীবনের অপরিজ্ঞাত সৌন্দর্য্য সে তাহার এই নবযৌবনোদ্ভাসিত নবজীবনে লাভ করিয়াছিল,তাহাই ছিল এতদিন তাহার কাছে পরমাশ্চর্য্যের মতই পরম বিস্মিয়কর। কিন্তু আজ সেদিক দিয়া নহে, আর একটা দিক হইতে—অতিরিক্ত পাওয়ার গুরু বোঝার ভারটা যখন মাথার উপর বড় বিষম বলিয়া ঠেকিতেছিল, তখন নিঃস্ব দেনদার চারিদিকে হাতড়াইয়া ঋণশোধের একটা সিকি পয়সা পর্য্যন্ত খুঁজিয়া