পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা।
৬১

তাহার কিছু মাত্রও ছিল? বিদ্যার মধ্যে বাঙ্গালা ভাষার অক্ষর পরিচয়টুকু আবশ্যক ঘটিয়াছিল, আর বুদ্ধির মধ্যে ভাত ডাল ও দু তিনটা সাধারণ ব্যঞ্জন রান্নার যতটুকু খরচ হয় সেই পর্য্যন্তই। তার পর রূপ,—তা সেটা তাহার নিজের দিক হতে বেশ স্পষ্ট করিয়া জানা নাই। কারণ সে যে বাড়ীর মেয়ে এবং যে সমাজের মানুষ, সেখানে আয়না ধরিয়া বসিয়া নিজের রূপের পরিমাপ করার সুবিধা বা প্রয়োজনই ছিল না। মা ছিলেন, স্নানের পর দিনান্তে একবার করিয়া চুলটা তিনি মোটা চিরুণীতে আঁচড়াইয়া একটা আঁটসাঁট শক্ত খোঁপায় বাঁধিয়া দিতেন, শেষের দিকে যখন তাহার রাজা-স্বামীর দৃষ্টি সে আকর্ষণ করে; সে সময়টায় মা ছাড়িয়া রক্তসম্বন্ধে সম্বন্ধ কোন প্রাণীর সহিতই তাহার সকল প্রকার সম্বন্ধের পাঠই উঠিয়া গিয়াছিল; এবং বাহিরের বা অন্তরের অবস্থাও তাহার পক্ষে এমনই প্রতিকুল যে স্বভাবতঃই নারীর সর্ব্বপ্রধান প্রযত্নে, ধন যে সৌন্দর্য্য তাহাকে রক্ষার চেষ্টা তো নহেই, পরন্তু সর্ব্বপ্রযত্নে উহারই ধংস কামনাই তাহার চিত্তে তখন প্রবলতর। কাজেকাজেই তাহার প্রতি এই সুখ সৌভাগ্যসেবিত কমলাবাণীর বর পুত্রটির যে আকর্ষণ ইহার ভিতর রূপক মোহের এতটুকু কণামাত্রও যে স্থান ছিল না, এই কথাটা জোর গলাতেই বলা যায় এবং গুণগ্রাহীতারও কোন প্রমাণ সে সময়ে ত অন্ততঃ পাওয়া যায় নাই। কাজেকাজেই সেই সুদূর চট্টগ্রামের অশিক্ষিতা অত্যন্ত সাধারণ চেহারার দরিদ্রকন্যা তাহাতে একান্তই অসহায় অনাথাকে গ্রহণ করায় এ পক্ষ হইতে কাহারও কোন সহায়তা লওয়া হয় নাই তাহা নিঃসন্দেহ। কেহ কেহ বলে নাকি শুদ্ধ মাত্র প্রবল অনুকম্পা ও উদারতাই নরেশ চন্দ্রের পত্নী নির্ব্বাচনের ঘটক হইয়াছিল, আবার কাহারও কাহারও