পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানো খাতা।
৬৩

পায়ে আছড়াইয়া পড়িয়া কাঁদিয়া কহিল, “মা আপনার বাড়ী বড় নিরাপদ মনে করেই ঢুকেছিলেম, কিন্তু বরং পথে পথে ভিক্ষা করে খাব, তবু এখানে আর থাকতে পরবো না, সকাল হলেই আমি চলে যাব।”

 গৃহিণী নিজের ঘরের খবরে অনভিজ্ঞা নহেন; দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন “কোথায় যাবে?”

 পরিমল চোখ মুছিতে মুছিতে জবাব দিল “যে দিকে দুচোখ যায়।”

 গৃহিণী কুণ্ঠিত মুখে কহিলেন “সে সবখানেই যে মন্দ লোকের কুদৃষ্টি নেই তাই বা কি করে জানবে মা? আমি বলি কি তার চাইতে নিজে একটু সাবধান হয়ে এইখানেতেই থাক। রাত্রে না হয় আমার কাছে এসেই শোবে, সকালে নদী-চান করে আসবে, আমারও বাছারা তবু সময় মতন দুটী ভাত পাবে, আর তোমারও—তা বাছা যে বয়েস তোমার তাতে এই নির্ব্বান্ধব অবস্থা এতে তোমার পক্ষে কোথায় যে ভয় নেই সেত আর বলা যায় না।”

 পরিমল অনেকক্ষণ ঘাড় হেঁট করিয়া ভাবিয়া ভাবিয়া ও এই সংসারাভিজ্ঞা গৃহিণীর সুযুক্তিপূর্ণ উপদেশটাকে কিছুতেই মনের মধ্যে মানিয়া লইতে সমর্থ হইল না। সদ্যপ্রাপ্ত অপমানের আঘাতে তাহার অন্তরের মধ্যে আহত নারীমর্য্যাদা তখন গুমরিয়া ফিরিতেছিল, সে নিঃশব্দেই উঠিয়া আসিল, এবং সেই বাড়ীতে দ্বিতীয় রাত্রি কাটাইবার ভরসা না করিয়াই নিজের পূর্ব্বাশ্রয়েরই দ্বারে আসিয়া দাঁড়াইল। সেই তার বুকফাটান অতীতের সকলটুকু অসহ্য স্মৃতির মাঝখানকেও সে নিজের নারী মর্য্যাদা হানির বহু ঊর্দ্ধে বরণ করিয়া লইয়া কাঙ্গালের মতন কাঁদিয়া আসিয়া একটু আশ্রয় ভিক্ষা করিল। ঠিক সেই সময়টাতে নাকি ভাগ্যে ভাগ্যে সে বাড়ীর ঝি ছাড়িয়া যাওয়ায় বড়ই গণ্ডগোল চলিতেছিল,