পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
হারানাে খাতা।

তাই এবার সেখানে আশ্রয় পাওয়া তার পক্ষে তেমন কঠিন হইল না। তবে বাড়ীর কর্ত্তা এইজন্য একটুখানি আপত্তি তুলিতে ছিলেন যে যদি এর পর এই আইবুড় মেয়ের বিয়ে দিতে হয় ত কি হইবে? তবে এ আপত্তিটা তাঁর টিকিল না, যেহেতু বাটীর গৃহিনী বাসন মাজিতে তখন বেজায় নারাজ থাকায়, নথ ঘুরাইয়া ঐ যুক্তিটাকে এই বলিয়া খণ্ডন করিয়া দিলেন যে সেজন্য অত ভাবিতে হইবে না। সে তখন একটা ঝি জুটিলেই উহাকে কোন একটা অছিলায় দূর করিয়া দিলেই হইবে, এখনত দশদিন কাজ চালাইয়া দিক।” তা ঝি কিন্তু সেই দশদিনে পাওয়া গেল না এবং মাসকতকের পরেই একটা অচিন্তনীয় আশ্চর্য্য কাণ্ড ঘটিয়া গিয়া দেশশুদ্ধ লোককে একেবারে বজ্র স্তম্ভিত করিয়াছিল।

 কলিকাতা অঞ্চলের একজন বড়লোক, ওই অঞ্চলেরই কাছাকাছি তাঁর জমিদারী—একদিন আসিয়া উপস্থিত হইলেন ও উহাদের সম্বন্ধে বিস্তর খোঁজখবর লইয়া হঠাৎ একদিন নিজেই উদ্যোগী হইয়া উহাকে বিবাহ করিয়া বসিলেন। অবশ্য ইহার জন্য তাঁহাকে বিস্তর অযাচিত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিতেও হইয়াছিল। যাহারা ইতঃপূর্ব্বে অনাথাকে অন্ন ও আশ্রয় দিতে নারাজ ছিল, তাহারাই বিশেষ করিয়া তাহার এই আকস্মিকপ্রাপ্ত সুখ সৌভাগ্যের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পুরুষকার প্রদর্শন করিতে পরান্মুখ হন নাই। এমন কি সেখানের একজন উচ্চপদস্থ রাজ কর্ম্মচারী ও অনাহুত উপদেশ এ বিবাহের বিরুদ্ধে বিস্তর অধ্যবসায় প্রদর্শন করিয়া ছিলেন, কিন্তু প্রজাপতির এই আশ্চর্য্য নির্ব্বন্ধ শত বিঘ্ন ঠেলিয়া ফেলিয়াই সম্পন্ন হইয়া গিয়াছিল। বিচিত্রময় জগতে কতই না বিচিত্র ঘটনা ঘটিতেছে, লোকে এই বিবাহকারী যুবককে পাগল বলিয়াই স্থির করিল, ক্কচিৎ কেহ বলিল দয়ালু কিন্তু তাহারাই মুখবিকৃত করিয়া বলিয়াছিল, কিন্তু অতি কিছুই ভাল নয়।