পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নবম পরিচ্ছেদ

ছােটরে করিয়া ঘৃণা করিছ যে পাপ,
তােমারে করেছে নীচ তারি অভিশাপ।
তাদের না কর যদি উচ্চাসন দান,
ঘুচিবে না কভু তব ‘নীচ’ অপমান।

—প্রবাসী

 সুর্য্যের আলােভরা অলস মধুর মধ্যাহ্নে কলিকাতার এই কোলাহলবিরল অংশ প্রায় পল্লীবিজনতা প্রাপ্ত হইয়া একখানি দৃশ্যের মতই প্রশান্ত হইয়া আছে। এই দীপ্ত স্নিগ্ধ দিনটীর দিকে চাহিয়া নিরঞ্জন তাহার নিরালা ঘরে চুপ্‌টী করিয়া একটি চৌকির উপর খােলা জানালার ধারে বসিয়াছিল।

  এই জানালার নীচের বাগানের রং বেরংএর কৃষ্ণকলি, জিনিয়া আর রজনীগন্ধা একেবারে প্রচুরতররূপে ফুটিয়া আছে। ইহারই ঠিক সাম্‌নাসাম্‌নি বাড়ীর সীমাবিভাগের প্রাচীরের গায়ে একটা বক ফুলের গাছ আধহেলা হইয়া রহিয়াছে; তাহার ডালপালার মধ্য হইতে একটা লুকানাে পাখীর তীক্ষ মধুর শিষ্ দেওয়ার শব্দ বাহির হইয়া আসিতেছিল। মধ্যে মধ্যে ইহারই ঠিক পাশের অপরাজিতার ঝােপটাকে নাড়া দিয়া কয়েকটা শালিক কি যেন খুঁটিয়া খাইতেছিল, এবং কিচির মিচির শব্দে আনন্দ বা নিরানন্দ প্রকাশ করিতেছিল, সেটা কিন্তু বেশ বােধগম্য হইতেছিল না। বাগানের জমিটি নববর্যার কয়েকটি বর্ষণ পাইয়াই নয়নসােভন শ্যামলতায় যেন চিকণ হইয়া উঠিয়াছিল এবং সেই আর্দ্র তৃণ হইতে একটা অতি মৃদু সজল গন্ধ যেন সঙ্কুচিতভাবে উত্থিত হইয়া অনিচ্ছামন্থরভাবে বাতাসের সহিত মিশ্রিত হইয়া গিয়াছিল। প্রকৃতির