পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
হারানাে খাতা।

 নিরঞ্জন তদবস্থাতেই উত্তর দিল “নাওনা ভাই! ঐখানেই তো আছে।” সাতু এই উত্তরই আশা করিয়া পেঁচোর মার হেয় নীতি অবলম্বন করা অনর্থক বোধে উহা হইতে বিরত ছিল। খাম হইতে নোট কয়খানা বাহির করিয়া জিজ্ঞাসা করিল “কত নিই?”

 “যা তোমাদের খুসী।”

 “তাহলে এই পঁচিশের মধ্যে পনের আমরা বকশিষ নিলুম, আর এই দশটা টাকা আমার কাছেই আমানত রইলো, দরকার হ’লে বলবেন বার করে দেব। বাড়ীর দাসী চাকরদের কারু কারু যে বেশ একটু হাত টান আছে, সে ত আমার কাছে ছাপা নেই, কে কখন গেঁড়া দিয়ে দেবে বইতো নয়, কি বলেন মাষ্টর মশাই। রাখবো কি আমার সিন্ধুকে তুলে? তাতে খুব ভাল বিলিতি তৈরি কুলুপ লাগান আছে।”

 নিরঞ্জন সবকথা—সব কেন একটা কথাও—কানে না তুলিয়া অমনি অমনিই জবাব দিয়া চুকিল, “বেশ।”—

 বোকারাম মাষ্টারের নির্বুদ্ধিতা এবং নিজের বুদ্ধিমত্তার তুলনা করিতে করিতে প্রসন্নমনে সাতকড়ি টাকাগুলি লইয়া চলিয়া গেল। মনে মনে বলিল “বাবু তো পঁইত্রিশ টাকা দিয়েছিলেন, আর দশটা কোন চিলে এর মধ্যেই ছোঁ মারলে? অ্যাঁ! আমার মুখের গরাস কেড়ে খায়, সে ত সামান্যি নয়। যা হোক সন্ধান করতে হচ্ছে।”

 বক ফুলের গাছের ডালে সুখসমাসীন পাখীটা একটা তীক্ষ্ণ উচ্চরব করিয়া ডানা ঝাড়া দিতে দিতে উড়িতে আরম্ভ করিয়া কোথায় উধাও হইয়া গেল। সেই আকস্মিকশব্দে চকিত হইয়া উঠিতেই নিরঞ্জনের কর্ণে একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত কণ্ঠের আহ্বান-ধ্বনি প্রবেশ করিল, “মাষ্টার মশাই!”

 আহ্বান নারী-কণ্ঠের, এবং তাহা যে ‘পেঁচোর মা’ শ্রেণীর কাহারও নহে, তাহা নিরঞ্জনের স্বাভাবিক বুদ্ধিই তাহাকে জানাইয়া দিল। সে