পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৬৯

তার স্বভাবের বিরুদ্ধ একটু বিস্মিত ও উত্তেজিত ভাবে মুখ ফিরাইতেই এক সুদর্শনা নারীর সহিত মুখামুখী হইয়া গেল। রমণীর সাজসজ্জায় ও হাবভাবে তাহাকে উচ্চ জগতের জীব বলিয়া চিনিয়া লইতে উহার বিলম্ব ঘটিল না এবং এই পরিচয়ে একাধারে বিপন্ন, বিরক্ত ও বিজড়িত হইয়া পড়িয়া নিরঞ্জন যেন আড়ষ্ট হইয়া গেল, হাত তুলিয়া ইহার উদ্দেশ্যে সে একটা ভদ্রতার নমস্কার পর্য্যন্ত জানাইতে সমর্থ হইল না।

 ঘরে আসিয়া ঢুকিয়াছিল বাড়ীর কর্ত্রী স্বয়ং। স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তর্ক করিয়াছিল বলিয়াই সে নিজের সেই ভুল শোধরাইয়া লইবার সদিচ্ছায় তাঁহার দ্বিতীয় আদেশের অপেক্ষা না রাখিয়াই নিজেকে প্রায়শ্চিত্ত করাইতে আনিয়াছিল,— কিন্তু সে যে এত কঠিন, এ ধারণা তার একটু পূর্ব্বেও ছিল না। নিরঞ্জনের মুখের দিকে সে চাহিতে ভরসা করে নাই, তাহার জুতাখোলা পায়ের দিকেই তার চোখ ছিল। বসন্তের গভীরতর ক্ষত চিহ্নের সেখানেও অভাব ছিল না। তার উপর সেই দুর্ব্বল শীর্ণ পা দুখানি থর থর করিয়া কাঁপিতেছে লক্ষ্য করিয়া কিছু দয়ার্দ্র ভাবেই বলিয়া ফেলিল “আমি আপনার কাছে পড়তে এসেছিলুম, যদি আপনার শরীর ভাল না থাকে, তাহলে আজ থাক।”

 এই বলিয়াই সে উহার দিকে পিছন ফিরিতে গিয়া পশ্চাত হইতে এমন একটা সুর শুনিতে পাইল এবং তাহাতে এমন করিয়াই সে চমকাইয়া উঠিল যে, যেন সেই ক্ষীণ দুর্ব্বল ও ত্রস্ত কণ্ঠস্বর একটা আকস্মিক বর্শার মতই আসিয়া পড়িয়া তাহার পিঠের হাড়ের মধ্যে তার তীক্ষ্ণ ফলাটাকে সবেগে বিঁধিয়া দিয়াছিল। ভয়ার্ত্ত মুখের পাংশু ছবি লইয়া আবার সে চকিতভাবে ফিরিয়া দাঁড়াইল।

 সাম্‌নে তাহার কীটদষ্ট পুরাতন জীর্ণ পুঁথির মতই এক বসন্তক্ষত বিকৃত এবং আগুনে বা অপর কোন দাহ্য পদার্থের দ্বারায় অধিকতর