পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
হারানাে খাতা।

বিকৃতিপ্রাপ্ত অপরিচিত মুখ। তবে সেই তাহার পরিচিত সুরের লেখা কোথা হইতে অকস্মাৎ এই অজানাকে আশ্রয় করিয়া আজ এত দিন পরে আবার এই জাগ্রত মধ্যাহ্নে ভাসিয়া আসিল? সেকি স্বপ্ন না সত্য? পরিমলের বুকের মধ্যে সন্দেহ আশঙ্কা ও তার সঙ্গেই মিশ্রিত একটুখানি যেন আগ্রহও এক সঙ্গে একটা অজানা তরঙ্গে তরঙ্গিত হইয়া উঠিতে লাগিল। স্বপ্ন—স্বপ্ন ইহাকে সে কেমন করিয়া বলিবে? মানুষ কখন জাগিয়া থাকিয়া স্বপ্ন দেখিতে পারে? সে উৎসুক-নেত্রে উৎকণ্ঠা ভরিয়া নিরীক্ষণ করিয়া করিয়াই নিরঞ্জনের নতমুখ দেখিতে লাগিল এবং অন্তরে অন্তরে শিহরিয়া পর্য্যবেক্ষণ দৃষ্টিকে ভূমিলগ্ন করিয়া ফেলিয়া পূর্ণ অবিশ্বাসে, দীর্ঘ করিয়া একটা শ্বাস গ্রহণপূর্ব্বক কহিল, “বই তো আমি কিছুই আনিনি, যাহোক একটু পড়ান; ইনি বলে গেছেন, আপনার কাছে পড়তে।”

 নিরঞ্জনের যে কথার স্বরে সে চমকিয়া উঠিয়াছিল,তাহা এই “আপনি কি পড়তে চান বলুন, আমি পড়াচ্ছি।”

 এবার নিরঞ্জন এই কথাটার মধ্য দিয়া অনেকখানিই অনুভব করিল। তাহার চাকরীটা যে কি, এতদিনের পর সেইটাই এবার তাহাকে বুঝাইয়া দিবার সময় আসিয়াছে, তা সেটা যে এমন মূর্ত্তিতেই দেখা দিবে,এ সংশয় সে অভাগার মনের কোনেও কখন উদিত হয় নাই। নরেশ অবশ্য কাজটাকে খুব কঠিন বলিয়াই স্বীকার করিয়া প্রথমাবধি এতৎসম্বন্ধে তাহার কৃতকার্য্যতারও সন্দেহ প্রকাশ করিয়া রাখিয়াছেন, তাঁহাকে অবশ্য দোষ দেওয়া চলে না, কিন্তু সেটা যে এমনই কঠিনরূপে প্রকাশ পাইবে তাহা জানা থাকিলে, নিরঞ্জন হয়ত—তা’জানা থাকিলেই বা নিরঞ্জন কি করিতে পারিত? জীবন ও আশ্রয়দাতাকে সে কি মুখের উপর বলিতে পারিত যে, তাঁহার এই সামান্য কাজটুকুও তাহার দ্বারায়