পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৪
হারানাে খাতা।

করিয়া বসিল, এবং ইহার মধ্যে প্রসুপ্ত রহিল যাহারা ‘গো-বেচারা’ নহে, তাহাদেরই সম্বন্ধে ঈষৎ একটুখানি গ্লানির আভাস।

 নিরঞ্জন আবার যেন কতকটাই ইতস্ততঃ করিল। তারপর সঙ্কুচিতভাবে সে জবাব দিল, “না না, ওঁকে আমি চিনিনে, আমি অনেকদিন দেশ ছাড়া।”

 ঈষৎ দমিয়া গিয়া পরিমল তখন ছোট্ট করিয়া একটা “ও” বলিয়া নিজের পাঠ্য পুস্তকের পাতা উল্টাইতে আরম্ভ করিল, এবং তৎপরে পুনশ্চ একটুখানি আগ্রহের সহিত প্রশ্ন করিয়া উঠিল, “আচ্ছা, আপনায় বাড়ীতে কে কে আছেন? আপনার মা বাবা নেই বোধ হয়? আচ্ছা, ভাই বোন নিশ্চয়ই আছেন? আর কেউ? আর কোন আত্মীয়?”

 একটা দীর্ঘ ও ব্যথাভারাতুর নিংশ্বাসের শব্দ তাহার সকল উৎসাহকেই দমিত করিয়া দিয়া আরও একটা চাপা দীর্ঘশ্বাসের মতই বাহির হইয়া আসিল,—“কেউ না।”

 পরিমলের বুকের মধ্যে এই আর্ত্তস্বরটা এম্‌নি ভীষণবলে বাজিয়া উঠিল যে, সেই নিঃসঙ্গ নিঃশেষিত মরুভূমির মতই জীবনের ভয়াবহ শূন্যময়তা সে যেন তৎক্ষণাৎ নিজের অন্তরের অন্তরে অনুভব করিল ও তাহার অকৃত্রিম সহানুভূতি একান্তভাবেই এই সর্ব্বহারা এবং আত্মহারা অভাগাকে বেষ্টন করিয়া ধরিল। সে যে জানে,—এই নিঃসঙ্গ নির্ব্বান্ধব পরিত্যক্ত জীবনের দুঃখ যে কি বিষম, কি দুর্ব্বিসহ—সে যে নিজে তার ভুক্তভোগী! সে যে নিজের বুকের ভিতর হইতে এ অপরিমেয় দুঃখের রিক্ততা ও তিক্ততা আজও মর্ম্মে মর্ম্মে অনুভব করিতে পারিতেছে। যদি যে সদয়চিত্ত এই পথপ্রান্তের মরণশয্যালীন দুরবস্থার চরমে পতিত ইহাকে কুড়াইয়া আনিয়া সযত্ন সেবায় জীয়াইয়া তুলিলেন, সেই তাঁহারই উদার অন্তর তাহারও জন্য না কাঁদিত,—যদি সেই তিনিই তাহাকেও