পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৭৫

ওম্‌নি করিয়াই পথের ধূলার মাঝখান হইতে—শুধু তাই নয়—একেবারে নিজের বুকে তুলিয়া না লইতেন,— তবে আজ তাহার অবস্থা ইহার চাইতেও আর একটু শোচনীয় হইয়া দাঁড়াইত কি না তাও বেশ জোর করিয়া বলা যায় না! স্বামীর দয়া যে কি অসীম, এবং তাঁহার পরে তাহার কৃতজ্ঞতা যে কতই গভীরতর হওয়া উচিত, তাই ভাবিয়া, ও নিজের মধ্যে যে জিনিষটা অপর্য্যাপ্ত হওয়া উচিত ছিল তাহা পর্য্যাপ্ত দেখিয়া, নিজের প্রতি সে বেশ সন্তুষ্ট হইতে পারিল না। মনটাকে অন্যদিকে ফিরাইতে চাহিয়া তাই তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করিল, “আপনার হাতের লেখাটা তো খুবই সুন্দর। ইংরেজী উচ্চারণও খুব কম জানার মতন লাগে না। তাহলে আপনি কেন কাজ কর্ম্ম না করে অত কষ্ট সইছিলেন? কতদিন বাড়ীছাড়া হয়েছেন আপনি?”

 নিরঞ্জন এই প্রশ্নগুলা নতমুখে শুনিয়া গেল। কিন্তু তাহার ভাবশূন্য নিশ্চল শরীরে ইহার উত্তরের কোন চেষ্টা জাগ্রত হইতেছে কি না, তাহার কোনই প্রমাণ পাওয়া গেল না। অগত্যা পরিমল তাহার কৌতুহলবৃত্তিকে দমনে রাখিয়া নিজের পাঠ্য পুস্তকে মনোনিবেশ করিল এবং অনেকখানি পড়া হইয়া গেলে যখন বুঝিতে পারিল যে, তাহার মাষ্টার মশাইএর কানে তাহার পাঠের শব্দটুকু পর্য্যন্ত প্রবেশ করিতেছে না, এম্‌নি গভীরতর অন্যমনস্কতায় তাহার মনকে অভিভূত প্রায় করিয়া রাখিয়াছে, তখন সে কিছুক্ষণ নির্ব্বাকবিস্ময়ে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া থাকিল ও তারপরই কি যেন একটা অজ্ঞাত আতঙ্কে সমস্ত শরীরে ও মনে ভীষণ ভাবে শিহরিয়া উঠিয়া তাড়াতাড়ি সে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। অকস্মাৎ তাহার মনে হইয়া গেল, সে কেন কোন এ-জগতের প্রাণীর সান্নিধ্যে নাই,—এই যে মানুষটির সামনে সে রহিয়াছে, এ পৃথিবীর সঙ্গে ইহার যেন কোথায়ও একটু যোগ আছে