পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
হারানাে খাতা।

কিন্তু সে যেন পুরোপুরি এখানের নয়। চেহারাখানা এর মোটামুটী দেখিতে মানুষেরই মত বটে, গলার স্বরও এই দেশেরই সম্বন্ধ জ্ঞাপন করে, কিন্তু না,—তবু না—কিছুতেই ইহাকে যেন রক্তমাংসের জীবিত পদার্থ বলিয়া মনে করিতে পারা যায় না! এ যেন কোথাকার একটা ছায়া,কোন্ দূরান্তর প্রস্থিতের একটুখানি মায়ামূর্ত্তি এর মধ্যে খুঁজিলে, পাওয়া যায়। শুধু সেইটুকু— আর বাকি সবখানিই এর অবাস্তব, অসঙ্গত, অনাসৃষ্টি! পরিমলের মনের মধ্যটা ছমছমে হইয়া উঠিল। এই শব্দহীন,—স্পন্দনেরও চিহ্ন যাহার মধ্যে বেশ সুস্পষ্ট নয়—তাহার সান্নিধ্যকে সভয়ে বর্জ্জন করিয়া উর্দ্ধশ্বাসে সে ছুটিয়া পলাইতে চাহিল।

 নরেশ সেদিন অপরাহ্নে তখন বেড়াইতে বাহির হইতেছিলেন, পরিমল খবর দিয়া তাঁহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়া বলিল, “দেখ, নিরঞ্জনকে আর কোন কাজ দিয়ে আমার জন্য অন্য কোন শিক্ষয়িত্রী ঠিক করে দিতে পারে না? সেই যদি পরিশ্রমই করবে, তা’হলে যাতে কাজ হয়, সেই রকমই তো করা ভাল।”

 নরেশ ইদানীং পরিমলের মুখে মাষ্টার মশাইএর বিদ্যাবুদ্ধি ও বিনয়ের বিস্তর খ্যাতি শুনিতেছিলেন। আজ আবার হঠাৎ এই অনুযোগে কিছু বিস্মিত হইয়া বলিয়া উঠিলেন, “কেন, আবার কি হলো?”

 পরিমল বলিল, “হয় নি কিছুই, তবে পড়া বড় হয় না কিনা তাই বল্‌ছি, উনি বড়ই অন্যমনস্ক, আমার অনেকটা সময় নষ্ট হয়।”

 নরেশ নিজেও এটা লক্ষ্য করিয়াছিলেন। তাই স্ত্রীর কথায় অসন্তুষ্ট হইতে না পারিয়া ঈষৎ চিন্তিত মুখে কহিলেন,“আচ্ছা তা হলে ভেবে চিন্তে দেখি, ওকে আর কি কাজ দিতে পারা যায়। কিছু না দিলে তো ওকে ওম্‌নি রাখা যাবে না, সেই যে হয়েছে মহা মুস্কিল!”

 পরিমল বোধকরি পূর্ব্বাবধি এ বিষয়ে কিছু কিছু ভাবিয়া রাখিয়াছিল,