পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
হারানাে খাতা।

“ধায় যেন মোর সকল ভালবাসা,—
প্রভু! তোমার পানে তোমার পানে তোমার পানে,—
ধায় যেন মোর গভীরতর আশা—
প্রভু! তোমার টানে তোমার টানে তোমার টানে,—

 গানটা আরম্ভ করিয়াই কিন্তু তাহার মনে হইল, এ গানও আজ ইঁহার সাক্ষাতে তাহার গাওয়া ভাল হয় নাই। অধ্যাত্মিক হিসাবে এ সব খুবই বড় জিনিষ বটে এবং ছোট বড় সবারই এ জিনিষের উপর দাওয়া আছে। কিন্তু মানুষ সব কিছুরই বড়র দিকটার চাইতে ক্ষুদ্র অংশটুকুকেই যে বড় সহজে দেখিতে পায়—অথবা দেখিতেই চাহে। অর্থ বিকৃতি ঘটাইয়া এই সর্ব্বস্বান্তকর আত্ম-নিবেদনকে যে নিজের ভোগে লাগাইতে না পারা যায় তাওতো নয়। তার চেয়ে সে যদি গাহিত,—

“আমার মাথা নত করে দাওহে তোমার চরণ ধুলার তলে,
সকল অহঙ্কার হে আমার ঘুচাও চোখেরই জলে!”

 না, তাহাতেও তার মনের দুর্ব্বলতা হয়ত ধরা পড়িবার সম্ভাবনা ঘুচিত না!—উপায় নাই।

 গান শেষে নরেশ বাজনা ফেলিয়া উঠিয়া দাঁড়াইলেন, ফুল গাছের টবের দিকে অগ্রসর হইতে হইতে প্রশংসাসূচকভাবে বলিয়া উঠিলেন, “বাঃ ভারি সুন্দর সুন্দর ফুল ফুটেচে তো তোমার! সুষমা! তোমার সেই চন্দনা কি কি কথা কইতে শিখেছে? কই সেটাকে যে দেখছিনে? ননীবাবু তো তার প্রশংসা করতে শত মুখ হয়ে ওঠেন।”

 সুষমাও তাহার মান্যবান অতিথির সঙ্গে সঙ্গে উঠিয়া দাঁড়াইয়াছিল; জবাব দিল “সেটাকে আমি খাঁচাখুলে উড়িয়ে দিয়েচি।”

 উড়িয়ে দিয়েছ! ওঃ অসাবধানে উড়ে গেছে বুঝি? সুন্দর পাখীটা ছিল!”