পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হারানাে খাতা।
৮৫

 “সুন্দর বলেই তো তাকে তার কুৎসিৎ বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে দিলাম। স্বাধীন হয়ে কি আনন্দেই সে উধাও হয়ে নীল আকাশের মধ্যে মিলিয়ে গেল। তার মনে তখন কতই না আনন্দ হচ্ছিল।”

 নরেশ মৌন বিস্ময়ে দু চোখ ভরিয়া সেই এতক্ষণকার নির্ব্বাক এবং এক্ষণে উচ্ছ্বসিতমুখী নারীর সহসা উজ্জ্বল মুখের দিকে চাহিয়া রহিলেন। যেন তাহার মনের ভাবটা একটুখানি হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিয়া চয়ন-করা-এক-গোছা রজনীগন্ধা লইয়াই ফিরিয়া তাহার একটু কাছে আসিয়া দাঁড়াইলেন, শান্তিকণ্ঠে কহিলেন, “সুষমা! স্বাধীন হওয়াই কি সর্ব্বত্র বাঞ্ছিত? স্বাধীনতার মধ্যে কি দুঃখ নেই, লজ্জা নেই?”

 সুষমা ঘাড় হেঁট করিয়া দাঁড়াইয়াছিল, মাথা উঁচু করিয়া বলিল, “আছে, যতদিন না মানুষ নিজের উপর বিশ্বাস কর্‌তে শেখে সে আশঙ্কাও ততদিনের, কিন্তু যদি কোন দেবতার আশীর্ব্বাদ তাকে স্বাবলম্বনের মহৎ শিক্ষায় দৃঢ়করে তুলতে পারে তখন—তারপর থেকে অধীন জীবনেব লজ্জা তার পক্ষে সব চেয়ে বড় লজ্জা হয়ে দাঁড়ায় না কি?”

 নরেশ একটুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া তারপর অতি মৃদু একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস সন্তর্পণে মোচন করিয়া উহার মুখের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “তুমি আমায় আসতে লিখেছিলে কেন?”

 সুষম আবার নতমুখী হইল, নরেশের দৃষ্টি হইতে নিজের মুখ সে একটুখানি আড়াল করিয়া রাখিয়া শান্ত অথচ একটু দৃঢ়স্বরে কহিল “এমন করে আর তো আমার দিন কাটছে না, তারই একটা উপায় করে দেবার জন্য আমি আপনাকে বিরক্ত করতে বাধ্য হয়েছি। আমার অপরাধ দয়া করে নেবেন না। এ মহা পাপকে যখন ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন তখন তো ফেলতেও পারচেন না; কিন্তু যা ভাল হয় কোন কিছু একটা করুন; না