পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
হারানাে খাতা।

হয় এই খাঁচার দরজাটা খুলেই দিন। আমি এমন করে থাকলে পাগল হয়ে যাব বোধ হচ্ছে।”

 নরেশচন্দ্র এই কথায় একটুখানি ব্যথিত হইলেন। সহসা জোর করিয়াই একটা দীর্ঘশ্বাস পরিত্যাগ পূর্ব্বক তিনি ঈষৎ আবেগ ভরে কহিয়া উঠিলেন, “আমার নির্ল্লিপ্ততা তোমায় দুঃখ দিয়েছে মনে হচ্ছে, কিন্তু তুমিই যে আমার কাছ থেকে সে অধিকার জোর করে কেড়ে নিয়েছ সুষমা! আমায় যে তুমি বারণ করেছিলে,—তাতেই ত আসি নি।”

 সুষমা মুখ তুলিল না। সেই আধ-ফেরানো মুখেই চাপাকণ্ঠে সে উত্তর দিল “ঈশ্বর জানেন তার জন্য আমি একটুও দুঃখিত নই। আপনার অম্লান চরিত্র আমার জন্য লোকের চোখে আজও ম্লান হয়ে রয়েছে, আর সে দাগ নারায়ণের বুকের ভৃগুপদচিত্নের মতন হয়ত চিরস্থায়ী হয়েই রইলো। এতবড় অভাগীকে যে শুধুই নিজের দয়াগুণে আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন,—তেমন কথা বিশ্বাস করবার মত উদারতা এ সংসারে ক’জনের আছে। তার উপর এখন আপনি বিয়ে করছেন। আপনার স্ত্রী, বৌ-রাণীর কানে যদি ওঠে, আপনাদের দাম্পত্য জীবনের শান্তি নষ্ট হবে, সে আমি জানি বই কি! তা নয়, তা নয়; বিশ্বাস করুন; কিন্তু সত্যি সত্যি আর যে আমি পারছি না। আমার এ বন্ধনহীন অবস্থা আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না! আপনি বুঝতে পারছেন না, আমার এই খাঁচা আমার কত বড় অসহ্যই যে হয়ে উঠেছে। এর বাইরে আমায় কাজ দিন—যাহোক একটা সামান্য কাজ দিন। কাজের অভাবে আমি মরে যাচ্ছি। আমি যে একটা মানুষ, আমি যে যন্ত্র নই, এই মহা বিড়ম্বনায় প্রাণ আমার বার হয়ে যাচ্ছে। শুধু গান, শুধু বাজনা, শুধু খাওয়া ও ঘুমান, এ কি সহ্য় করা যায়?