পাতা:হারানো খাতা - অনুরূপা দেবী.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
হারালে খাতা।

গেলে কেন? গান অবশ্য ভালই লেগেছিল, যেদিন হয় তখন একদিন শুন্‌লেই চল্‌তো। বিশেষতঃ ওদের বাড়ী গিয়ে গান শুন্‌তে আমার তেমন প্রবৃত্তিও হচ্ছিল না। এ হয়ত ভালই হলো।”—

 আর কি বলিতেছিলেন বলা শেষ হইল না, পথের পাশের কর্দ্দমাক্ত অন্ধকার হইতে,কে একজন বলিয়া উঠিল—বাবু! “বাবু মশাই গানশুনবেন?”

 নরেশচন্দ্র কি বলিতেছিলেন ভুলিয়া গিয়া মুক্তকণ্ঠে হাসিয়া উঠিয়া কহিয়া উঠিলেন, “ওই শােন হে ননীলাল! গান শুনবার আবার অভাব কি, যে তার জন্য এই গলির কাদা ভাঙ্গতে হবে? গান স্বয়ং এসেই আমাদের আমন্ত্রণ করছে!—কই কে গান শােনাতে চাইছিলে গা? এসাে না, গান আমি শুন্‌তে রাজী আছি।”

 মােটর গাড়ীর পাশ কাটাইয়া অর্দ্ধান্ধকার গলির ওধার হইতে একটি ছােট্ট মেয়ে এধারে আসিয়া দাঁড়াইল। মেয়েটার পরণে একখানি গােলাপ রংএর সন্তোষপুরের ডুরে, গায়ে একটি ঢলঢলে গােলাপী সিল্কের বাজারে কেনা জ্যাকেট, এক হাত কাঁচের ঝুরো চুড়ি, কপালে তেলেজলে চকচকানো চুলের পাতা নামানো এবং তাহারই নীচে একখানা বড় গুলপােকার টিপ। বয়স তাহার সাত আট বছরের বেশী মনে হয় না। পাতলা ও অপুষ্ট দেহ, কিন্তু রংটুকু দিব্য ফুটফুটে এবং মুখখানিও সুন্দর।

 এই বৃষ্টির রাত্রে জনবিরল অপরিচ্ছন্ন গলির মধ্যে একা এমন সুসজ্জ একটি ছােট বাঙ্গালীর মেয়েকে গান শুনাইতে ব্যগ্রভাবে উদ্যত দেখিয়া নরেশচন্দ্র কিছু বিস্ময় বােধ করিলেন। সাজ পোষাক চেহারায় তাহাকে ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হয়, ভিখারীর মেয়ে কখনই নয়। তবে এমন করিয়া সে পথের মধ্যে গান শুনাইতে চাহিল কি জন্য—এই কথাই তিনি মনে মনে ভাবিতেছিলেন। এমন সময় মেয়েটী ঈষৎ একটুখানি সঙ্কোচের