পাতা:হাস্যকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুরুবাক্য

অচ্যুত, অপূর্ব, উমেশ কার্তিক ও খগেন্দ্র

 অচ্যুত। গুরুদেব এখনো এলেন না, উপায় কী?

 কার্তিক। আমি তো বিষম মুশকিলে পড়েছি। আমার নাম কার্তিক, আমার ছোটো শালার নাম কীর্তি। আমার স্ত্রী তার ভাইকে কীর্তি বলে ডাকতে পারে কি না এটা স্থির করে না দিলে স্ত্রীর সঙ্গে একত্র বাস করাই দায় হয়েছে। তার উপর আবার গয়লা বেটার নাম কীর্তিবাস; এখন গুরুদেবকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমার স্ত্রী যদি কীর্তিবাস গোয়ালাকে বাসুদেব বলে ডাকে তাহলে বৈধ হয় কি না। বাড়িতে কার্তিকপূজার সময় স্ত্রী কার্তিককে নাত্তিক বলে; নাম খারাপ করার দরুন ঠাকুরের কিম্বা তাঁর মার কোনো অসন্তোষ ঘটে কিনা এও জিজ্ঞাস্য।

 অপূর্ব। আমারও একটা ভাবনা পড়েছে। সেবার শ্রীক্ষেত্রে গিয়ে জগন্নাথকে কুল দিয়ে এসেছিলুম, এখন, এই গরমির দিনে কুলটুকু বাদ দিয়ে যদি তার ঝোলটুকু খাই তাতে অপরাধ হয় কি না।

 অচ্যুত। আমি সেদিন গুরুদেবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেম যে, শাস্ত্রমতে ভোক্তা শ্রেষ্ঠ না ভোজ্য শ্রেষ্ঠ, অন্ন শ্রেষ্ঠ না অন্নপায়ী শ্রেষ্ঠ? তিনি, এমনি এক গভীর উত্তর দিলেন যে, তখন যদিচ আমরা সকলেই জলের মতো বুঝে গেলুম কিন্তু এখন আমাদের কারও একটি কথাও মনে পড়ছে না।

 উমেশ। আমার যতদূর মনে হচ্ছে, বোধ হয় তিনি বলেছিলেন, অন্নও শ্রেষ্ঠ নয়, অন্নপায়ীও শ্রেষ্ঠ নয়, কিন্তু আর-একটা কী শ্রেষ্ঠ, সেইটে যে কী মনে পড়ছে না।

৮৭