পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ/পিঁপ্‌ড়ের বাসা-ত্যাগ

উইকিসংকলন থেকে

পিঁপ্‌ড়ের বাসা-ত্যাগ

 এক জায়গায় বহুকাল বাস করিলে, তাহা ক্রমে বাসের অনুপযুক্ত হয়। তখন হয় ত মড়ক বা অন্য কিছু উৎপাত দেখা দিয়া সেখানকার লোকজনকে দেশ-ছাড়া করে। আমাদের দেশের অনেক পুরানো গ্রাম ও নগর এই রকমে নষ্ট হইয়া গিয়াছে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলমান রাজাদের রাজধানী গৌড় এক সময়ে খুব বড় সহর ছিল। ইহা বোধ হয় তোমরা ইতিহাসে পড়িয়াছ। কিন্তু এখন তাহা জনশূন্য ঘোর জঙ্গল। গৌড়ের বড় বড় সুন্দর বাড়ী ভাঙিয়া চুরিয়া মাটির সঙ্গে মিশিয়া রহিয়াছে। এক সময়ে ভয়ানক মড়কের ভয়ে লোকজন দেশ ছাড়িয়া পলাইয়াছিল বলিয়াই গৌড়ের এমন দুর্দ্দশা। পিঁপ্‌ড়েরা মাটির নীচে যে-সকল নগরের মত বাসা বানায়, তাহাতে উহারা চিরকাল থাকিতে পারে না। বাসের একটু অসুবিধা হইলে বা কোনো রকম মড়ক দেখা দিলে, তাহার বাসা ছাড়িয়া নূতন জায়গায় বাসা তৈয়ার করে। তোমরা এই রকম বাসা-ভাঙা পিঁপ্‌ড়ের দল দেখ নাই কি? বাসা ভাঙার সময়ে অসংখ্য পিঁপ্‌ড়ে সারি বাঁধিয়া নূতন জায়গার দিকে চলে। বাসায় যে-সকল ডিম, বাচ্চা ও পুত্তলি-পিঁপ্‌ড়ে থাকে, সেগুলিকে তাহারা ফেলিয়া যায় না। তোমরা যদি লক্ষ্য কর তবে প্রত্যেক কর্ম্মী পিঁপ্‌ড়েকে তখন একএকটি সাদা জিনিষ মুখে লইয়া চলিতে দেখিবে। ঐ জিনিষগুলি পুত্তলি-পিঁপ্‌ড়ে। পুত্তলি-অবস্থায় পিঁপ্‌ড়ের বাচ্চা মড়ার মত পড়িয়া থাকে, এজন্য সেগুলিকে মুখে করিয়া লইয়া যাইতে কর্ম্মীদের কোনো কষ্ট হয় না।

 আমরা এ-পর্য্যন্ত মাটির তলাকার পিঁপ্‌ড়েদের কথা বলিলাম। পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার রকমের পিঁপ্‌ড়ে আছে। ইহাদের সকলেই মাটির তলায় বাস করে না। কেহ গাছের শুক্‌নো পাতা একত্র করিয়া বাসা বাঁধে। আবার কেহ আমাদের ফকির ও সন্ন্যাসীর মত পথে পথে ঘুরিয়া বেড়ায় এবং যেখানে-খুসি-সেখানে বাস করে,—ইহাদের স্থান বা অস্থানের জ্ঞান নাই। এই তিন হাজার পিঁপ্‌ড়ের জীবনের কথা মোটামুটি এক রকম হইলেও, তাহাদের চাল-চলনে অনেক পার্থক্য আছে। কাজেই একটু একটু ইহাদের পরিচয় দিতে গেলেও একখানা প্রকাণ্ড বই লেখা দরকার হয়। আমরা এখানে অন্য পিঁপ্‌ড়েদের কথা না বলিয়া আমাদের বাংলা দেশের কয়েকটি পিঁপ্‌ড়ের কথা বলিব।