পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/পতঙ্গ/পতঙ্গের পা

উইকিসংকলন থেকে

পতঙ্গের পা

 আমাদের পায়ে মোটামুটি কতগুলি অংশ আছে মনে করিয়া দেখ। কুঁচ্‌কি হইতে হাঁটু পর্য্যন্ত একটা অংশ আছে। তার পরে হাঁটু হইতে পায়ের গোছ পর্য্যন্ত আর একটা অংশ রহিয়াছে। সর্ব্বশেষে আঙ্গুল লইয়া পায়ের পাতা আছে। তাহা হইলে দেখা যাইতেছে, তিনটি বড় অংশ লইয়াই আমাদের পায়ের সৃষ্টি হইয়াছে। আঙুল ইত্যাদিতে অনেক জোড় আছে সত্য, কিন্তু বড় জোড় ঐ তিনটি। পতঙ্গদের পায়ে মোটামুটি ঐ-রকম তিনটি অংশ আছে। আমাদের পায়ের পাতায় যেমন অনেক জোড় থাকে, পতঙ্গদের পায়ের পাতায় সেই রকম জোড় আছে। এই জোড়ের সংখ্যা দুই হইতে পাঁচ পর্য্যন্ত দেখা যায়। এই সকল জোড়ের গায়ে নখের মত অংশ বাহির করা থাকে। কিন্তু সব পতঙ্গের ছয়খানা পা সমান লম্বা নয়। যে-সব পোকা লাফাইয়া চলে, তাহাদের পিছনের দুখানা পা খুব লম্বা হয়। বুড়ো মানুষ শীতের সময়ে যেমন হাঁটু মুড়িয়া বসে, ঐ সকল পোকাদের পিছনের পা স্বভাবতই সেই রকম মোড়া থাকে। ফড়িং ও উচ্চিংড়ের পিছনের পা খুব লম্বা এবং ঐ-রকমে মোড়া আছে দেখিবে। যে-সব পতঙ্গ জলে সাঁতার দিতে পারে, তাহাদের পায়ের পাতা বেশ চওড়া থাকে। দাঁড় টানিয়া যেমন নৌকা চালানো হয়, দাঁড়ের মত চওড়া পায়ে জল কাটিয়া তাহারা সাঁতার দেয়। মাছিরা কি-রকমে চলে, তাহা তোমরা দেখিয়াছ। তাহারা ফড়িঙের মত লাফায় না। বেশ ভদ্রভাবে পা ফেলিয়া চলে, আবার খাড়া দেওয়ালের গায়ের উপর দিয়া বেশ চলিয়া বেড়ায়। দেওয়ালের গা হইতে কেন পড়িয়া যায় না,—ইহা তোমাদের কাছে আশ্চর্য্য বলিয়া বোধ হয় না কি? আমি ছেলেবেলায় ভাবিতাম, আমরা দেওয়ালের গায়ে পা দিয়া চলিতে পারি না, তবে কেন পিঁপ্‌ড়ে ও মাছিরা দেওয়ালের গায়ে পা লাগাইয়া ছুটাছুটি করে?

 তোমাদিগকে প্রথমে একটা খুব সাধারণ কথা বলিব। ইহা বুঝিতে পারিলে, টিক্‌টিকি প্রভৃতি প্রাণীরা মাটিতে না পড়িয়া কি-রকমে দেওয়ালের গায়ে হাঁটিয়া বেড়ায়, তাহা বুঝিতে পারিবে। চাবির যে দিক্‌টায় ছিদ্র থাকে, সেটা মুখের মধ্যে দিয়া ভিতরকার বাতাস টানিয়া লইলে কি হয়, তোমরা দেখ নাই কি? আমরা ছেলেবেলায় একটা চাবি পাইলেই মুখে দিয়া তাহার ছিদ্রের ভিতরকার বাতাস টানিয়া লইতাম। এই অবস্থায় চাবিটার মুখ জোরে জিভে বা ওষ্ঠে লাগিয়া যাইত। তোমরা একবার এই রকম পরীক্ষা করিয়া দেখিয়ো। চাবির ছিদ্রে বাতাস থাকে না, তাই বাহিরের বাতাসের চাপে চাবি জিভে বা ওষ্ঠে আট্‌কাইয়া যায়। টিক্‌টিকি প্রভৃতির পায়ের পাতায় কতকটা ঐ-রকম ব্যবস্থা আছে। পায়ের তলা হইতে উহারা বাতাস বাহির করিতে পারে। এই জন্য বাহিরের বাতাসের চাপে পা দেওয়ালের গায়ে জোরে আট্‌কাইয়া যায়। কিন্তু মাছিরা যে-রকমে দেওয়ালে পা আট্‌কাইয়া চলা-ফেরা করে, তাহা স্বতন্ত্র। আমরা যখন মাছির কথা বলিব, তখন এই বিষয়টি ভালো করিয়া বুঝাইব।

  গঙ্গা ফড়িঙের সম্মুখের দু’টা পা খুব বড় এবং মোটা। সেগুলির গায়ে আবার করাতের মত দাঁত-কাটা। ইহারা এই দুটি পা অস্ত্রের মত ব্যবহার করে। প্রজাপতির পা আবার অন্য রকমের। পিছনের পা এত ছোট যে, তাহা নাই বলিলেই হয়। সাম্‌নের পায়েই উহাদের কাজ চলিয়া যায়। যে-সব পতঙ্গ মাটির তলে গর্ত্তে বাস করে, তাহাদের পা মাটি খোড়া এবং তাহা সরাইয়া ফেলিবার উপযুক্ত করিয়া প্রস্তুত হইয়াছে; সুতরাং দেখা যাইতেছে যে, পতঙ্গের যে-রকমটি দরকার পায়ের আকৃতি প্রকৃতি ঠিক সেই রকম হইয়া দাঁড়াইয়াছে। ইহা খুব আশ্চর্য্য ব্যাপার নয় কি?