পোকা-মাকড়/ষষ্ঠ শাখার প্রাণী/পতঙ্গ/পতঙ্গের শ্বাস-প্রশ্বাস

উইকিসংকলন থেকে

পতঙ্গের শ্বাস-প্রশ্বাস

 পতঙ্গদের নিশ্বাস টানার ও নিশ্বাস ফেলার যন্ত্রটি অতি চমৎকার। শ্বাস-প্রশ্বাসের এ-রকম যন্ত্র পতঙ্গ ছাড়া আর কোনো প্রাণীতে দেখা যায় না।

 এখানে একটা পোকার লেজের কতকটার ছবি দিলাম।

চিত্র ৩১।

ছবির চারিধারে মালার মত যে জিনিসটা দেখিতেছ, উহা ফাঁপা নল। পতঙ্গেরা বাহিরের বাতাস লেজের তলার এই সকল নলের ভিতর দিয়া লইয়া শরীরের সর্ব্বত্র চালাইয়া দেয়। এই ব্যবস্থায় বাতাসের অক্সিজেন্ টানিয়া লইয়া পতঙ্গদের দেহের রক্ত পরিষ্কৃত হয়। কাজেই নলের ভিতরে বাতাসের চলাচলই নিশ্বাসের কাজ করে।

 নল খুব বেশি লম্বা হইলে অনেক গোলমালে পড়িতে হয়। লম্বা নল প্রায়ই মাঝে তুব্‌ড়াইয়া যায় এবং তুব্‌ড়াইয়া গেলে নলের ছিদ্র বন্ধ হইয়া যায়;—তখন তাহা দিয়া আর কাজ চলে না। বড় বড় সহরের রাস্তায় যে-সকল লম্বা নল দিয়া জল ছিটানো হয়, সেগুলি যাহাতে তুব্‌ড়াইয়া না যায়, তাহার জন্য কি-রকম ব্যবস্থা আছে, তোমরা দেখ নাই কি? নলের গায়ে এবং কখনো কখনো নলের ভিতরে লোহা বা অপর কোনো ধাতুর মোটা তার জড়াইয়া রাখা হয়। ইহাতে নলের ছিদ্র তুব্‌ড়াইয়া বন্ধ হয় না। নিশ্বাস টানিবার জন্য পতঙ্গের দেহের যে নল তাহা কম লম্বা নয়। কাজেই মাঝে মাঝে ইহার ছিদ্র বন্ধ হইবার আশঙ্কা থাকে এবং তাহাতে পতঙ্গের মৃত্যু হইবার ভয়ও থাকে। এই আশঙ্কা নিবারণ করিবার জন্য ইহাদের দেহের নলের ভিতরে লোহার ইস্প্রিঙের মত সরু তার লাগানো থাকে। যে হাড়ের মত শক্ত জিনিসে পতঙ্গের দেহ ঢাকা থাকে, সেই জিনিস দিয়াই ঐ-সকল নল প্রস্তুত। কাজেই ঐ জড়ানো তার ভিতরে থাকিয়া নলগুলিকে সর্ব্বদা ফাঁপাইয়া রাখে; ইহাতে নল তুব্‌ড়াইতে পারে না।

 এখন তোমরা বোধ হয় ভাবিতেছ, পতঙ্গের দেহের নলে বাহিরের বাতাস প্রবেশের পথ কোথায়? আমরা যেমন নাক মুখ দিয়া বাতাস টানিয়া ফুস্‌ফুসে প্রবেশ করাই, পতঙ্গেরা নিশ্বাস টানার কাজে নাক বা মুখের ব্যবহার করে না। উহাদের লেজের উপরকার প্রত্যেক আংটির পাশে দুইটা করিয়া ছিদ্র থাকে; বাহিরের বাতাস এই সকল ছিদ্র দিয়া নলে প্রবেশ করে। ছবিতে লেজের দুই পাশে যে কালো দাগগুলি দেখিতেছ, তাহাই বাতাস আসা-যাওয়ার পথ।

 তোমরা যদি বোল্‌তা ফড়িং বা অপর পতঙ্গের লেজের অংশ ভালো করিয়া পরীক্ষা কর, তবে দেখিবে, ইহাদের লেজের দিক্‌টা সর্ব্বদা তালে তালে উঠানামা করিতেছে। আমরা নিশ্বাস টানিবার সময়ে বুক্ ফুলাই এবং নিশ্বাস ফেলিবার সময় বুক সঙ্কুচিত করি, কাজেই শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে আমাদের বুক্ তালে তালে উঠা-নামা করে। পতঙ্গেরা লেজটাকে ফুলাইয়া এবং সঙ্কুচিত করিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চালায়।

 পতঙ্গদের নিশ্বাস লওয়া ও নিশ্বাস ছাড়ার কাজ খুব ঘন ঘন চলে। এইজন্য প্রাণরক্ষার জন্য ইহাদের অনেক বাতাসের দরকার হয়। আবদ্ধ ছোট জায়গায় আট্‌কাইয়া রাখিলে, ভালো বাতাসের অভাবে ইহারা মড়ার মত হইয়া যায়, কিন্তু একেবারে মরে না। তার পরে সেগুলিকে যদি কিছুক্ষণ ভালো বাতাসে রাখা যায় তবে আবার সুস্থ হইয়া উঠে।

 বাতাসের অক্সিজেন শরীরে প্রবেশ করিলে প্রাণীরা পুষ্ট হয় এবং তাহাদের লাফালাফি ও চলা-ফেরা করিবার শক্তি বাড়ে। পতঙ্গদের দেহের অনেক জায়গায় নিশ্বাস টানিবার নল লাগানো থাকায় তাহারা অনেক অক্সিজেন পায়। এই জন্যই পতঙ্গেরা এত ছুটাছুটি ও লাফালাফি করিয়াও সহজে ক্লান্ত হয় না।