প্রহ্লাদ (প্রচার পুস্তিকা)

উইকিসংকলন থেকে
প্রহ্লাদ
অরোরা ফিল্ম কর্পোরেশনের

নিবেদন

প্রহ্লাদ

ভূমিকায়

শ্রীমান বিভু, শিশির মিত্র, অপর্ণা, কৃষ্ণচন্দ্র, শ্যাম লাহা, হরিধন, রাণী ব্যানার্জী, দেবী চৌধুরী, পারুল কর, জগদিন্দ্র, নিলু, মাষ্টার রঞ্জিত, ঊষা দে, লীলা ঘোষ, জগদীন্দ্র ভট্টাচার্য্য, এবং আরও অনেকে।

সংগঠনে

চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: ফণী বর্মা। চিত্রশিল্পী: বঙ্কু রায়। শব্দযন্ত্রী: পরেশ দাসগুপ্ত। সুরশিল্পী: বিভূতি দত্ত (এ্যাঃ)। আবহসুর শিল্পী: দক্ষিণামোহন ঠাকুর। শিল্পনির্দ্দেশক: সত্যেন রায় চৌধুরী। রসায়নাগারিক: উমাচরণ মল্লিক। সম্পাদক: বিশ্বনাথ মিত্র। কর্মসচিব: সরোজেন্দ্রনাথ মিত্র। সহকারীগণ: পরিচালনায়: নরেশ রায়, প্রবোধ সরকার। চিত্রশিল্পে: বিজয় গুপ্ত, নৃপেন সেনগুপ্ত, বিজয় রায়। শব্দযন্ত্রে: অনিল দাসগুপ্ত। সঙ্গীতে: অরুণ দত্ত। রসায়নাগারে: রমেশ ঘোষ, রবি সেন, অনিল মুখার্জি, নিমাই দে, বঙ্কু প্রামাণিক, পরিমল শীল, প্রভাত ঘোষ। সম্পাদনে: রাসবিহারী সিংহ।

প্রহ্লাদ

 তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করে ত্রিলোক বিজয়ী বীর হিরণ্যকশিপু রাজধানীতে এলেন ফিরে। সমগ্র নগরী মেতে উঠলো আনন্দ উল্লাসে। এমন সময় তাঁর সেনাপতি সম্বর এসে সংবাদ দিলেন, যে, রাজভ্রাতা হিরণ্যাক্ষ বিষ্ণুর হস্তে নিহত হ’য়েছেন। শোকে, ক্রোধে, তাঁর রাজ্যে হরিপূজা নিষেধ করে দিলেন হিরণ্যকশিপু। হরির আরাধনা যে করবে, তার হবে প্রাণদণ্ড! রাজ আজ্ঞা প্রচারিত হ’ল।

 প্রথমেই হরিভক্তির অ্যাভাষ পেয়ে, চরিত্রে সংশোধনের জন্য হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে পাঠিয়ে দিলেন গুরুদেব শুক্রাচার্য্যের কাছে। কিন্তু শুক্রাচার্য্য তখন স্থানান্তরে তপস্যায় মগ্ন ছিলেন তাই প্রহ্লাদের শিক্ষার ভার পড়লো তাঁর দুই পুত্র ষণ্ড আর অমার্কের ওপর। গুরুপুত্রদ্বয় প্রহ্লাদের হরি ভক্তির পরিচয় পেয়ে আতংকিত হলেন। কিছুদিন পরে বিদ্যা পরীক্ষার জন্য রাজদরবারে ডাক পড়লো প্রহ্লাদের। রাজা প্রশ্ন করলেন, সর্ব্ব শাস্ত্রের শেষ কথা কি? হরিভক্তি! প্রহ্লাদ উত্তর দি’ল।

 ক্রুদ্ধ দৈত্যরাজ মশানে নিয়ে গিয়ে প্রহ্লাদের শিরচ্ছেদ আদেশ দিলেন।

 ঘাতকের খড়্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে ভেঙ্গে গেল, অক্ষতদেহে প্রহ্লাদ ফিরে এলো মায়ের বুকে।—ভগবান হরিকে ভুলে যাওয়া তার পক্ষে অসম্ভব, সানুনয়ে প্রহ্লাদ জানিয়ে দিলে তার পিতাকে। এবার রুদ্ধ কারাকক্ষে বিষধর সর্পের মুখে প্রহ্লাদকে নিক্ষেপ করার আদেশ দিলেন হিরণ্যকশিপু। ভক্ত প্রহ্লাদের মুখে হরি গুণগান শুনে বিষধর সর্পও তার মাথা নত করে নি’ল।

 ক্ষিপ্তপ্রায় দৈত্যকুলপতি এরপর প্রহ্লাদকে মত্তহস্তী পদ তলে নিক্ষেপের আজ্ঞা দিলেন। কিন্তু রাখে হরি মারে কে—! মত্ত হস্তী প্রহ্লাদকে সাদর সম্ভ্রমে মাথায় তুলে নিলে। প্রহ্লাদের হরিঠাকুরই যে বার বার তাকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনছেন—একথা হিরণ্যকশিপু কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেন না। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস—অন্য কোন অলৌকিক ব্যাপারে প্রহ্লাদের জীবন রক্ষা হচ্ছে।

 পুত্রকে মার্জ্জনা করবার জন্য রাজাকে বহু অনুনয় করলেন রাণী কয়াধু, কিন্তু তাঁর সমস্ত প্রার্থনাই হ’ল ব্যর্থ। হরির নাম ভুলে-না-যাওয়া পর্য্যন্ত ক্রুদ্ধ রাজার কাছে প্রহ্লাদের ক্ষমা নেই। ....পিতৃদ্রোহী, পিতার আদেশ আমান্যযকারী পুত্রের কণ্ঠে শীলা বেঁধে, তাঁকে সমুদ্রগর্ভে নিক্ষেপের আদেশ দেওয়া হ’ল।

 সেনাপতি সম্বর রাজার এ-আদেশ পালনে অক্ষমতা জ্ঞাপন করলেন।—দৈত্য রাজ তাকে রাজদ্রোহীতার অপরাধে করলেন হত্যা।

 হরির কৃপায় এবারেও প্রহ্লাদের প্রাণ রক্ষা হলো। সমুদ্রগর্ভে নিক্ষিপ্ত প্রহ্লাদকে নারায়ণ তুলে নিলেন নিজের কোলে।

 রাজার শেষ অদেশে প্রহ্লাদকে নিক্ষেপ করা হ’ল জলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। কিন্তু সর্ব্বভূক অগ্নির গ্রাস থেকেও রক্ষা পেলে প্রহ্লাদ বিচিত্র ভাবে।

 * * * * *

 তারপর হরিভক্ত প্রহ্লাদের অলৌকিক প্রভাবে সমস্ত দৈত্যকুল কেমন করে হরিগুণ গানে মেতে উঠলো মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে,—কেমন করে বিদীর্ণ স্তম্ভের মধ্য থেকে নৃসিংহ অবতার আবির্ভূত হয়ে মুক্তি দিলেন বিষ্ণু-বিদ্বেষী ত্রিলোক বিজয়ী হিরণ্যকশিপুকে,—তারই অপরূপ আলেখ্য দেখতে পাবেন অরোরার সশ্রদ্ধ নিবেদন ‘প্রহ্লাদ’, চিত্রে।

গান



(১)


তোর নাম রেখেছি হরিবোলা
মন র সাথে ও আমার মন
খেলনা হরিনামের খেলা॥
প্রেমে মেখে ভক্তিমাটি
গড়না হরির চরণদুটি
আয় দুজনে সেই চরণে
পরিয়ে দিই বনফুলের মালা॥

(২)


মধুর হরি নামের মতন
কি আর আছে ভুবন মাঝে
প্রাণমাতানো অমূল রতন॥

(৩)


কোথায় তুমি কোথায় ওগো হরি
শ্যামল বরণ হৃদয় হরণ।
দাও দরশণ কোথায় হরি
ভূবনমোহন হে নাথ আমার
তোমার চরণ স্মরণ করি॥
নামটি তোমার প্রাণের ঠাকুর
অমিয় অরূপ রূপটি ধরি
চরণ অভয় দাও দয়াময়
পরশ সুধায় জীবন ভরি॥


(৪)


আমি সাপুড়িয়া মেয়ে সাপুড়িয়া

আমি সাপ খেলাই লয়া লয়া
ফণা ধরে হেলাই গো॥
গায়ে ডোরা ডোরা সাজ
বিষধর নাগরাজ
কালিন্দী কালনাগেরে
ফণা ধরে হেলাই গো॥
জংলা হরে বাশী বাজাই,
হিলিবিলি সাপ নাচাই গো
ঝুলির ভিতর মরণ পুরে
দেশে দেশে বেড়াই ঘুরে
বিষহরির কৃপায় নাগের
ফণা ধরে হেলাই গো॥


(৫)


ডাকার মতন ডাকলে পরে
হৃদয় খুলে ওরে
প্রাণের ঠাকুর আপনি এসে
দেখা দেবে তোরে॥

(৬)


হে মহাকাল হে মহাকাল
মহামৃত্যুর রক্ততিলকে মলিন তোমার
ভাল॥
ক্রূর হিংসায় মত্তদানব
হানিছে ভ্রকুটি হায়
প্রেমের ধরণী অশ্রু আকুল
আঘাতের বেদনায়
প্রাণগঙ্গার জীবনছন্দে খুলে দাও
জটাজাল॥
হে নীলকণ্ঠ পান কর তুমি
নাগিনীর হলাহল
অমর লোকের দাও আজি দাও
অমৃত পরিমল
থামাও তোমার প্রলয় নৃত্য
থামাও রুদ্র তাল॥


(৭)
ভূবন মাঝে হেরি তোমারি কত লীলা
তোমারি প্রেম নামে সাগরে ভাসে শীলা॥
তোমারি মহিমায় মরণ ফিরে যায়
জুড়ায় ভবজ্বালা বাধন টুটি হায়
পরাণ কহে ওরে হরির নাম বিলা।


(৮)


হরি বিনা কে আর আছে
ভক্তজনে বুকে টানে
মাতিয়ে তোলা সারা ভবন
মধুর হরিনামের গানে॥
হরি আমার হৃদয় মাঝে
হরি আমার সকল কাজে
হরি আমার জগৎভরা
হরি আমার সকল জানে॥
রাখতে চুরি মারতে হরি
হরি আছে ভুবন ভরি
রবি শশী নিত্য উজল
হরিনামামৃত পানে॥
হরি নাম করেছি যে সার
শমন দেখে ভয় কি এবার
বাঁধব এখন প্রেমের বাধন
নিখিল জনের প্রাণে প্রাণে॥

(৯)


প্রলয় পয়োধি জলে।
ধৃত বানসি বেদং
বিহিত বহিত্র চরিত্রম খেদম্‌
কেশব ধৃত মীন শরীর
জয় জগদীশ হরে॥
তব কর কমল বরে
নখমদ্ভুত-শৃঙ্গং
দলিত-হিরণ্যকশি-তনু-ভৃঙ্গং
কেশব ধূত নরহরি রূপ
জয় জগদীশ হরে॥



মুদ্রণ: সুমুদ্রণ, ১০৪ অখিল মিন্ত্রী লেন, কলিকাতা-৯

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।