বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/দোল

উইকিসংকলন থেকে
দোল

আলোকরসে মাতাল রাতে
বাজিল কার বেণু।
দোলের হাওয়া সহসা মাতে,
ছড়ায় ফুলরেণু।
অমলরুচি মেঘের দলে
আনিল ডাকি গগনতলে,
উদাস হয়ে ওরা যে চলে
শূন্যে-চরা ধেনু।

দোলের নাচে সে বুঝি আছে
অমরাবতীপুরে?
বাজায় বেণু বুকের কাছে,
বাজায় বেণু দূরে।
শরম ভয় সকলি ত্যেজে
মাধবী তাই আসিল সেজে,
শুধায় শুধু ‘বাজায় কে যে
মধুর মধু সুরে’।

গগনে শুনি একি এ কথা,
কাননে কী যে দেখি!
এ কি মিলনচঞ্চলতা
বিরহব্যথা এ কি!

আঁচল কাঁপে ধরার বুকে,
কী জানি তাহা সুখে না দুখে।
ধরিতে যারে না পারে তারে
স্বপনে দেখিছে কি।

লাগিল দোল জলে স্থলে,
জাগিল দোল বনে-
সোহাগিনীর হৃদয়তলে,
বিরহিণীর মনে।
মধুর মোরে বিধুর করে
সুদূর তার বেণুর স্বরে,
নিখিলহিয়া কিসের তরে
দুলিছে অকারণে।

আনো গো আনো ভরিয়া ডালি
করবীমালা লয়ে,
আনো গো আনো সাজায়ে থালি
কোমল কিশলয়ে।
এসো গো পীত বসনে সাজি,
কোলেতে বীণা উঠুক বাজি,
ধ্যানেতে আর গানেতে আজি
যামিনী যাক বয়ে।

এসো গো এসো দোলবিলাসী,
বাণীতে মোর দোলো-

ছন্দে মোর চকিতে আসি
মাতিয়ে তারে তোলো।
অনেক দিন বুকের কাছে।
রসের স্রোত থমকি আছে,
নাচিবে আজি তোমার নাচে
সময় তারি হল।

কিশোর, আজি তোমার দ্বারে
পরান মম জাগে।
নবীন কবে করিবে তারে
রঙিন তব রাগে।
ভাবনাগুলি বাঁধন-খোলা
রচিয়া দিবে তোমার দোলা,
দাঁড়িয়ো আসি হে ভাবে-ভোলা,
আমার আঁখি-আগে।