বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/লীলা

উইকিসংকলন থেকে


লীলা

গান

গগনে গগনে আপনার মনে
কী খেলা তব।
তুমি কত বেশে নিমেষে নিমেষে
নিতুই নব।
জটার গভীরে লুকালে রবিরে,
ছায়াপটে আঁক এ কোন্ ছবি রে।
মেঘমল্লারে কী বল আমারে
কেমনে কব।


বৈশাখী ঝড়ে সেদিনের সেই
অট্টহাসি
গুরু গুরু সুরে কোন্ দূরে দূরে
যায় যে ভাসি।
সে সােনার আলো শ্যামলে মিশালাে-
শ্বেত উত্তরী আজ কেন কালাে।
লুকালে ছায়ায় মেঘের মায়ায়
কী বৈভব।

ওগো সন্ন্যাসী, কী গান ঘনালো মনে।
গুরু গুরু গুরু নাচের ডমরু
বাজিল ক্ষণে ক্ষণে।
তোমার ললাটে জটিল জটার ভার
নেমে নেমে আজি পড়িছে বারম্বার,
বাদল আঁধার মাতালো তোমার হিয়া,
বাঁকা বিদ্যুৎ চোখে উঠে চমকিয়া।
চিরজনমের শ্যামলী তোমার প্রিয়া
আজি এ বিরহদীপনদীপিকা
পাঠালো তোমারে এ কোন লিপিকা,
লিখিল নিখিল-আঁখির কাজল দিয়া,
চিরজনমের শ্যামলী তোমার প্রিয়া।


মনে পড়িল কি ঘন কালো এলোচুলে
অগুরুধূপের গন্ধ।
শিখিপুচ্ছের পাখা সাথে দুলে দুলে
কাঁকন-দোলন-ছন্দ?
মনে পড়িল কি নীল নদীজলে
ঘন শ্রাবণের ছায়া ছলছলে,
মিলি মিলি সেই জল-কলকলে
কলালাপ মৃদুমন্দ-

স্থকিত-পায়ের চলা দ্বিধাহত,
ভীরু নয়নের পল্লব নত,
না-বলা কথার আভাসের মতো
নীলাম্বরের প্রান্ত?
মনে পড়িছে কি কাঁখে তুলে ঝারি
তরুতলে-তলে ঢেলে চলে বারি,
সেচনশিথিল বাহু দুটি তারি
ব্যথায় আলসে ক্লান্ত।


ওগো সন্ন্যাসী, পথ যায় ভাসি
ঝরঝর ধারাজলে
তমালবনের শ্যামল তিমিরতলে।
দ্যুলোক ভূলোকে দূরে দূরে বলাবলি
চিরবিরহের কথা।
বিরহিণী তার নত আঁখি ছলছলি
নীপ-অঞ্জলি রচে বসি গৃহকোণে,
ঢেলে ঢেলে দেয় তোমারে স্মরিয়া মনে,
ঢেলে দেয় ব্যাকুলতা।
কভু বাতায়নে অকারণে বেলা বাহি
আতুর নয়নে দু হাতে আঁচল ঝাঁপে।
তুমি চিত্তের অন্তরে অবগাহি
খুঁজিয়া দেখিছ ধৈরজ নাহি নাহি,
মল্লার রাগে গর্জিয়া ওঠ গাহি,
বক্ষে তোমার অক্ষের মালা কঁপে।

যাক যাক তব মন গলে গলে যাক,
গান ভেসে গিয়ে দূরে চলে চলে যাক,
বেদনার ধারা দুর্দাম দিশাহারা
দুখদুর্দিনে দুই কূল তার ছাপে।
কদম্ববন চঞ্চল ওঠে দুলি,
সেইমতো তব কম্পিত বাহু তুলি
টলমল নাচে নাচো সংসার ভুলি-
আজ, সন্ন্যাসী, কাজ নাই জপে জাপে।