বনবাণী/বনবাণী/পরদেশী

উইকিসংকলন থেকে
পরদেশী

পিয়র্সন কয়েক-জোড়া সবুজরঙের বিদেশী পাখি আশ্রমে ছেড়ে দিয়েছিলেন। অনেক দিন তারা এখানে বাসা বেঁধে ছিল। আজকাল আর দেখতে পাই নে। আশা করি, কোনো নালিশ নিয়ে তারা চলে যায় নি, কিম্বা এখানকার অন্য আশ্রমিক পশু-পাখির সঙ্গে বর্ণভেদ বা সুরের পার্থক্য নিয়ে তাদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাহাঙ্গামা ঘটে নি।


এনেছে কবে বিদেশী সখা
বিদেশী পাখি আমার বনে,
সকাল-সাঁঝে কুঞ্জ-মাঝে
উঠিছে ডাকি সহজ মনে।
অজানা এই সাগরপারে
হল না তার গানের ক্ষতি।
সবুজ তার ডানার আভা,
চপল তার নাচের গতি।
আমার দেশে যে মেঘ এসে
নীপবনের মরমে মেশে
বিদেশী পাখি গীতালি দিয়ে
মিতালি করে তাহার সনে।


বটের ফলে আরতি তার,
রয়েছে লোভ নিমের তরে,
বন-জামেরে চঞ্চু তার
অচেনা বলে দোষী না করে।

শরতে যবে শিশিরবায়ে
উচ্ছ্বসিত শিউলিবীথি,
বাণীরে তার করে না ম্লান
কুহেলিঘন পুরানো স্মৃতি।
শালের ফুল-ফোটার বেলা
মধুকাঙালি লোভীর মেলা,
চিরমধুর বঁধুর মতো
সে ফুল তার হৃদয় হরে।


বেণুবনের আগের ডালে
চটুল ফিঙা যখন নাচে
পরদেশী এ পাখির সাথে
পরানে তার ভেদ কি আছে।
উষার ছোঁওয়া জাগায় ওরে
ছাতিমশাখে পাতার কোলে,
চোখের আগে যে ছবি জাগে
মানে না তারে প্রবাস ব’লে।
আলোতে সোনা, আকাশে নীলা,
সেথা যে চির-জানারই লীলা,
মায়ের ভাষা শোনে সেখানে
শ্যামল ভাষা যেখানে গাছে।

[শান্তিনিকেতন]
৮ বৈশাখ ১৩৩৪