বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (পঞ্চদশ খণ্ড)/২

উইকিসংকলন থেকে

আফসার আলী আহমেদ[১]

 অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে আমরা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিই। ২৫শে মার্চের পর আমি ঐক্যবদ্ধভাবে পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করি। আমি নিজ এলাকায় আত্মগোপন করে যুদ্ধ পরিচালনা করি এবং ভারতে যাওয়ার আগে ইপিআর ও পুলিশদের একত্রিত করে যুদ্ধের জন্য সংগঠিত করি। যুদ্ধে বহু পাক-সেনা নিহত হয়।

 ২৮শে মার্চ আমি ভারতে চলে যাই এবং জলপাইগুড়িতে অবস্থান করতে থাকি। তখন জলপাইগুড়ির ডি,সি আমাকে অপ্রত্যাশিতভাবে গ্রেফতার করেন। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ আমাকে মুক্ত করার জন্য অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। তারপর ২৯শে মার্চ স্কর্ট করে আমাকে কলকাতা নিয়ে যাওয়া হয়। দিল্লীর সাথে যোগাযোগ করে রাজ্য সরকার গ্রেফতারকৃত অবস্থায়ই আমাকে দিল্লী পাঠান। সেখানে আমাকে মুক্তভাবে রাখা হয়। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ-এর সাথে দিল্লীতে আমার সাক্ষাৎ হয়। এরপর আমাকে কলকাতা পাঠিয়ে দেয়া হয়। এবং ভারতের দেওয়ানগঞ্জ ক্যাম্পের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করা হয়।

 এপ্রিল-মে মাসের দিকে আমি আনসার এবং পুলিশদের আমার এলাকায় অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করার নির্দেশ প্রদান করি। ই, পি, আর আনসার এবং পুলিশদের সংগঠিত করে বাংলাদেশের ভেতরে অপারেশন করার জন্য পাঠাই। এরূপ বিভিন্ন অভিযানে তারা কৃতকার্য হন এবং বহু দালাল হত্যা করেন। আমার এলাকায় দীর্ঘ নয় মাস অনবরত যুদ্ধ চলতে থাকে পাক-সেনাদের সাথে। প্রায় এক লক্ষ টাকা আমার এলাকা থেকে সংগ্রহ করে আমি বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে জমা দিই।

 আমার এলাকায় আনুমানিক দেড় হাজার লোক পাক সেনাদের দ্বারা নিহত হয়। এই হত্যাযজ্ঞে সৈয়পুরের বিহারীদের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। এই এলাকায় প্রায় এক হাজার নারীকে নির্যাতন করা হয়। উল্লেখ্য যে, এখানে ২২শে মার্চ তারিখে এই অত্যাচারের হাত থেকে স্থানীয় জনগণকে রক্ষা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। পরে বিহারীরা বিশ্বাসঘাতকতা করে বহু লোককে হত্যা করে। সৈয়দপুরে শতকরা ৯৯ভাগ ঘর-বাড়ী ও বিষয়-সম্পত্তি বিনষ্ট ও লুটপাট হয়। উল্লেখ্য যে, ব্যাঙ্কের টাকা-পয়সাও পুড়িয়ে দেয়া এবং লুটপাট করা হয়। সীমান্তে সৈয়দপুরের বিহারীরা ভারতে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ট্রেনের মধ্যে আটকিয়ে প্রায় চার শত লোককে হত্যা করে। এই ঘটনাটি ঘটে সৈয়দপুর থেকে এক মাইল দূরে। আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ব্রজেন্দ্রলাল ঘোষ নামক এক ব্যাক্তি ও তার দুই ছেলেকে আলবদররা হত্যা করে এবং তার দুই মেয়েকেও অপহরণ করে। প্রতিবেশী সালাউদ্দীন নামে এক ব্যক্তি এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকে তারা প্রাকাশ্য দিবালোকে হত্যা করে। মাহফুজুর রহমান চৌধুরী নামক একজন দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাকেও তারা নৃশংসভাবে হত্যা করে।

সাক্ষর/-

আফসার আলী আহমেদ

২৬-১০-৭২


  1. এন-ই-১২, রংপুর-১২