বাংলা শব্দতত্ত্ব/চিহ্নবিভ্রাট
চিহ্নবিভ্রাট
নিশিদিন ভরসা রাখিস
ওরে মন হবেই হবে।
এখানে courage বটে hopeও বটে। সুতরাং এটাকে ইংরেজিতে তরজমা করতে হলে ও দুটোর একটাও চলবে না। তখন বলতে হবে—
Keep firm the faith, my heart,
it must come to happen.
উল্টে বাংলায় তরজমা করতে হলে ‘বিশ্বাস’ শব্দের ব্যবহারে কাজ চলে বটে কিন্তু ‘ভরসা’ শব্দের মধ্যে যে একটা তাল ঠোকার আওয়াজ পাওয়া যায় সেটা এখানে থেমে যায়।
ইংরেজি শব্দের তরজমায় আমাদের দাসভাব প্রকাশ পায়, যখন একই শব্দের একই প্রতিশব্দ খাড়া করি। যথা ‘সিম্প্যাথির’ প্রতিশব্দে সহানুভূতি ব্যবহার। ইংরেজিতে সিম্প্যাথি কোথাও বা হৃদয়গত কোথাও বা বুদ্ধিগত। কিন্তু সহানুভূতি দিয়েই দুই কাজ চালিয়ে নেওয়া কৃপণতাও বটে হাস্যকরতাও বটে। ‘এই প্রস্তাবের সঙ্গে আমার সহানুভূতি আছে’ বললে মানতে হয় যে প্রস্তাবের অনুভূতি আছে। ইংরেজি শব্দটাকে সেলাম করব কিন্তু অতটা দূর পর্যন্ত তার তাঁবেদারি করতে পারব না। আমি বলব ‘তােমার প্রস্তাবের সমর্থন করি’।
এক কথা থেকে আর-এক কথা উঠে পড়ল। তাতে কী ক্ষতি আছে। যাকে ইংরেজিতে বলে essay, আমরা বলি প্রবন্ধ, তাকে এমনতরাে অবদ্ধ করলে সেটা আরামের হয় বলে আমার ধারণা। নিরামিষ-ভােজীকে গৃহস্থ পরিবেশন করবার সময় ঝােল আর কাঁচকলা দিয়ে মাছটা গােপন করতে চেয়েছিল, হঠাৎ সেটা গড়িয়ে আসবার উপক্রম করতেই তাড়াতাড়ি সেরে নিতে গেল, নিরামিষ পঙ্ক্তি-বাসী ব্যাকুল হয়ে বলে উঠল ‘যাে আপসে আতা উসকো আনে দেও।’
তােমাদের কোনাে কোনাে লেখায় এই রকম আপ্সে আনেওয়ালাদের নির্বিচারে পাতে পড়তে দিয়ো, নিশ্চিত হবে উপাদেয়, অর্থাৎ ইণ্টারেস্টিং। এবার পত্র দুটোর প্রতি মন দেও। এইখানে বলে রাখি, ইংরেজিতে, যে-চিহ্নকে অ্যাপসট্রফির চিহ্ন বলে কেউ কেউ বাংলা পারিভাষিকে তাকে বলে ‘ইলেক’, এ আমার নতুন শিক্ষা। এর যাথার্থ্য সম্বন্ধে আমি দায়িক নই। এই পত্রে উক্ত শব্দের ব্যবহার আছে।[২]
৮ ডিসেম্বর ১৯৩২
১
একদা আমার মনে তর্ক উঠেছিল যে, চিহ্নগুলো ভাষার বাইরের জিনিস, সেগুলোকে অগত্যার বাইরে ব্যবহার করলে ভাষার অভ্যাস খারাপ হয়ে যায়। যেমন, লাঠিতে ভর ক’রে চললে পায়ের ’পরে নির্ভর কমে। প্রাচীন পুঁথিতে দাড়ি ছাড়া আর-কোনো উপসর্গ ছিল না, ভাষা নিজেরই বাক্যগত ভঙ্গিদ্বারাই নিজের সমস্ত প্রয়োজনসিদ্ধি করত। এখন তার এত বেশি নোকর চাকর কেন। ইংরেজের ছেলে যখন দেশে থাকে তখন একটিমাত্র দাসীতেই তার সব কাজ চলে যায়, ভারতবর্ষে এলেই তার চাপরাশী হরকরা বেহারা বাট্লার চোপদার জমাদার মালী মেথর ইত্যাদি কত কী। আমাদের লিখিত ভাষাকেও এইরকম হাকিমী সাহেবিয়ানায় পেয়ে বসেছে। ‘কে হে তুমি’ বাক্যটাই নিজের প্রশ্নত্ব হাঁকিয়ে চলেছে তবে কেন ওর পিছনে আবার একটা কুঁজ-ওয়ালা সহিস। সব চেয়ে আমার খারাপ লাগে বিস্ময়ের চিহ্ন। কেননা বিস্ময় হচ্ছে একটা হৃদয়ভাব—লেখকের ভাষায় যদি সেটা স্বতই প্রকাশিত না হয়ে থাকে তা হলে একটা চিহ্ন ভাড়া করে এনে দৈন্য ঢাকবে না। ও যেন আত্মীয়ের মৃত্যুতে পেশাদার শোকওয়ালির বুক-চাপড়ানি। ‘অহো, হিমালয়ের কী অপূর্ব গাম্ভীর্য’। এর পরে কি ওই ফোঁটা-সওয়ারি দাঁড়িটার আকাশে তর্জনী-নির্দেশের দরকার আছে— (রোসো, প্রশ্নচিহ্নটা এখানে না দিলে কি তোমার ধাঁধা লাগবে?)। কে, কি, কেন, কার, কিসে, কিসের, কত প্রভৃতি এক ঝাঁক অব্যয় শব্দ তো আছেই তবে চিহ্নের খোশামুদি করা কেন। ‘তুমি তো আচ্ছা লোক’ এখানে ‘তো’— ইঙ্গিতের পিছনে আরো একটা চিহ্নের ধাক্কা দিয়ে পাঠককে ডব্ল্ চমক খাওয়ানোর দরকার আছে কি। পাঠক কি আফিমশোর। ‘রোজ রোজ যে দেরি করে আসো’ এই বাক্যবিন্যাসেই কি নালিশের যথেষ্ট জোর পৌছল না। যদি মনে কর অর্থটা স্পষ্ট হল না তা হলে শব্দযোগে অভাব পূরণ করলে ভাষাকে বৃথা ঋণী করা হয় না— যথা, ‘রোজ রোজ বড়ো-যে দেরি করে আস’। মুশকিল এই যে, পাঠককে এমনি চিহ্ন-মৌতাতে পেয়ে বসেছে, ওগুলো না দেখলে তার চোখের তার থাকে না। লঙ্কাবাটা দিয়ে তরকারি তো তৈরি হয়েছেই কিন্তু সেইসঙ্গে একটা আস্ত লঙ্কা দৃশ্যমান না হলে চোখের ঝাল জিভের ঝালে মিলনাভাবে ঝাঁঝটা ফিকে বোধ হয়।
ছেদ চিহ্নগুলো আর-এক জাতের। অর্থাৎ যতি-সংকেতে পূর্বে ছিল দণ্ডহাতে একাধিপত্য-গর্বিত সিধে দাঁড়ি— কখনো-বা একলা কখনো দোকলা। যেন শিবের তপোবনদ্বারে নন্দীর তর্জনী। এখন তার সঙ্গে জুটে গেছে বাঁকা বাঁকা ক্ষুদে ক্ষুদে অনুচর। কুকুরবিহীন সংকুচিত লেজের মতো। যখন ছিল না তখন পাঠকের আন্দাজ ছিল পাকা, বাক্যপথে কোথায় কোথায় বাঁক তা সহজেই বুঝে নিত। এখন কুঁড়েমির তাগিদে বুঝেও বোঝে না। সংস্কৃত নাটকে দেখেছ রাজার আগে আগে প্রতিহারী চলে— চিরাভ্যন্ত অন্তঃপুরের পথেও ক্ষণে ক্ষণে হেঁকে ওঠে, ‘এই দিকে’ ‘এই দিকে’। কমা সেমিকোলনগুলো অনেকটা তাই।
একদিন চিহ্নপ্রয়োগে মিতব্যয়ের বুদ্ধি যখন আমাকে পেয়ে বসেছিল তখনই আমার কাব্যের পুনঃসংস্করণকালে বিস্ময়সংকেত ও প্রশ্নসংকেত লোপ করতে বসেছিলুম। প্রৌঢ় যতিচিহ্ন সেমিকোলনকে জবাব দিতে কুণ্ঠিত হই নি। কিশোের কমা-কে ক্ষমা করেছিলুম, কারণ, নেহাত খিড়কির দরজায় দাঁড়ির জমাদায়ী মানানসই হয় না। লেখায় দুই জাতের যতিই যথেষ্ট, একটা বড়ো একটা ছোটো। সূক্ষ্ম বিচার করে আরো একটা যদি আনো তা হলে অতি সূক্ষ্ম বিচার করে ভাগ আরো অনেক বাড়বে না কেন।
চিহের উপর বেশি নির্ভর যদি না করি তবে ভাষা সম্বন্ধে অনেকটা সতর্ক হতে হয়। মনে করো কথাটা এই: ‘তুমি যে বাবুয়ানা শুরু করেছ। এখানে বাবুয়ানার উপর ঠেস দিলে কথাটা প্রশ্নসূচক হয়—ওটা একটা ভাঙা প্রশ্ন— পুরিয়ে দিলে দাঁড়ায় এই, ‘তুমি যে বাবুয়ানা শুরু করেছ তার মানেটা কী বলো দেখি।’ ‘যে’ অব্যয় পদের পরে ঠেস দিলে বিস্ময় প্রকাশ পায়। ‘তুমি যে বাবুয়ানা শুরু করেছ’। প্রথমটাতে প্রশ্ন এবং দ্বিতীয়টাতে বিস্ময়চিহ্ন দিয়ে কাজ সারা যায়। কিন্তু যদি চিহ্ন দুটো না থাকে তা হলে ভাষাটাকেই নিঃসন্দিগ্ধ করে তুলতে হয়। তা হলে বিস্ময়সূচক বাক্যটাকে শুধরিয়ে বলতে হয়— ‘যে-বাবুয়ানা তুমি শুরু করেছ’।
এইখানে আর-একটা আলোচ্য কথা আছে। প্রশ্নসূচক অব্যয় ‘কি’ এবং প্রশ্নবাচক সর্বনাম ‘কি’ উভয়ের কি এক বানান থাকা উচিত। আমার মতে বানানের ভেদ থাকা আবশ্যক। একটাতে হ্রস্ব ই ও অন্যটাতে দীর্ঘ ঈ দিয়ে উভয়ের ভিন্ন জাতি এবং ভিন্ন অর্থ বোঝবার সুবিধা হয়। ‘তুমি কি রাঁধছ’ ‘তুমি কী রাঁধছ’— বলা বাহুল্য এ দুটো বাক্যের ব্যঞ্জনা স্বতন্ত্র। তুমি রাঁধছ কিনা, এবং তুমি কোন্ জিনিস রাঁধছ, এ দুটো প্রশ্ন একই নয়, অথচ এক বানানে দুই প্রয়োজন সারতে গেলে বানানের খরচ বাঁচিয়ে প্রয়োজনের বিঘ্ন ঘটানো হবে। যদি দুই ‘কি’-এর জন্যে দুই ইকারের বরাদ্দ করতে নিতান্তই নারাজ থাক তা হলে হাইফেন ছাড়া উপায় নেই। দৃষ্টান্ত: ‘তুমি কি রাঁধ্ছ’ এবং তুমি কি-রাঁধ্ছ।[৩] এই পর্যন্ত থাক।[৪]
৫ নবেম্বর ১৯৩১
২
আমার প্রুফ-সংশোধনপ্রণালী দেখলেই বুঝতে পারবে আমি নিরঞ্জনের উপাসক—চিহ্নের অকারণ উৎপাত সইতে পারি নে। কেউ কেউ যাকে ইলেক বলে (কোন্ ভাষা থেকে পেলে জানি নে) তার ঔদ্ধত্য হাস্যকর অথচ দুঃসহ। অসমাপিকা ক’রে ব’লে প্রভৃতিতে দরকার হতে পারে কিন্তু ‘হেসে’ ‘কেঁদে’-তে একেবারেই দরকার নেই। ‘করেছে বলেছে’-তে ইলেক চড়িয়ে পাঠকের চোখে খোঁচা দিয়ে কী পুণ্য অর্জন করবে জানি নে। করবে চলবে প্রভৃতি স্বতঃসম্পূর্ণ শব্দগুলো কী অপরাধ করেছে যে, ইলেককে শিরোধার্য করতে তারা বাধ্য হবে। ‘যার’ ‘তার’ উপর ইলেক চড়াও নি ব’লে তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। পাছে হল (লাঙল) এবং হল (হইল) শব্দে অর্থ নিয়ে ফৌজদারি হয় সেজন্যে ইলেকের বাঁকা বুড়ো আঙুল না দেখিয়ে অকপটচিত্তে হোলো লিখতে দোষ কী। এ ক্ষেত্রে ওই ইলেকের ইশারাটার কী মানে তা সকলের তো জানা নেই। হোলো শব্দে দুটো ওকার ধ্বনি আছে— এক ইলেক কি ওই দুটো অবলাকেই অন্তঃপুরে অবগুণ্ঠিত করেছেন। হতে ক্রিয়াপদ যে-অর্থ স্বভাবতই বহন করে তা ছাড়া আর কোনো অর্থ তার পরে আরোপ করা বঙ্গভাষায় সম্ভব কি না জানি নে অথচ ওই ভালোমানুষ দাগীরূপে চিহ্নিত করা ওর কোন্ নিয়তির নির্দেশে। স্তম্ভপরে পালঙ্কপরে প্রভৃতি শব্দ কানে শোনবার সময় কোনো বাঙালির ছেলে ইলেকের অভাবে বিপন্ন হয় না, পড়বার সময়েও স্তম্ভ পালঙ্ক প্রভৃতি শব্দকে দিন মুহূর্ত প্রভৃতি কালার্থক শব্দ বলে কোন প্রকৃতিস্থ লোকের ভুল করবার আশঙ্কা নেই। ‘চলবার’ বলবার’ ‘মরবার’ ‘ধরবার’ শব্দগুলি বিকল্পে দ্বিতীয় কোনো অর্থ নিয়ে কারবার করে না তবু তাদের সাধুত্ব রক্ষার জন্যে লেজগুটোনো ফোঁটার ছাপ কেন। তোমার প্রুফে দেখলুম ‘হয়ে’ শব্দটা বিনা চিহ্নে সমাজে চলে গেল অথচ ‘ল’য়ে’ কথাটাকে ইলেক দিয়ে সজ্জিত করেছ। পাছে সংগীতের লয় শব্দটার অধিকারভেদ নিয়ে মামলা বাধে এইজন্যে। কিন্তু সে রকম সুদূর সম্ভাবনা আছে কি। লাখে যদি একটা সম্ভাবনা থাকে তার জন্যে কি হাজার হাজার নিরপরাধকে দাগা দেবে। কোন্ জায়গায় এরকম বিপদ ঘটতে পারে তার নমুনা আমাকে পাঠিয়ে দিয়ো। যেখানে যুক্ত ক্রিয়াপদে অসমাপিকা থাকে সেখানে তার অসমাপ্তি সম্বন্ধে কোনো দ্বিধা থাকতে পারে না। যেমন, বলে ফেল, করে দাও ইত্যাদি। অবশ্য করে দাও মানে হাতে দাও হতেও পারে কিন্তু সমগ্র বাক্যের যোগে সে রকম অর্থবিকল্প হয় না— যেমন কাজ করে দাও। ‘বলে ফেল’ কথাটাকে খণ্ডিত করে দেখলে আর-একটা মানে কল্পনা করা যায়, কেউ-একজন বলে, ‘ফেলো’। কিন্তু আমরা তো সব প্রথমভাগ বর্ণপরিচয়ের টুকরো কথার ব্যবসায়ী নই। ‘তুমি বলে যাও’ কথাটা স্বতই স্পষ্ট, কেবল দুর্দৈবক্রমে, তুমি বল্ নাচে যাও এমন মানে হতেও পারে— সেই ক্কচিৎ দুর্যোগ এড়াবার জন্যে eternal punishment কি দয়া কিংবা ন্যায়ের পরিচায়ক। ‘দেরতা নিশ্বাস ছাড়ি কহিলেন’— সমস্ত বাংলা দেশে যত পাঠশালায় যত ছেলে আছে পরীক্ষা করে দেখো একজনেরও ইলেকের দরকার হয় কি না, তবে কেন তুমি না-হক মুদ্রাকরকে পীড়িত করলে। তােমার প্রুফে তুমি ক্ষুদে ক্ষুদে চিহ্নের ঝাঁকে আমার কাব্যকে এমনি আচ্ছন্ন করেছ যে তাদের জন্য মশারি ফেলতে ইচ্ছে হয়। আমার প্রুফে আমি এর একটাও ব্যবহার করি নি― কেননা, জানি বুঝতে কানাকড়ি পরিমাণেও বাধে না। জানি আমার বইয়ে নানা বানানে চিহ্নপ্রয়ােগের নানা বৈচিত্র্য ঘটেছে ―তা নিয়েও আমি মাখা বকাই নে― যেখানে দেখি অর্থবোধে বিপত্তি ঘটে সেখানে ছাড়া এইদিকে আমি দৃক্পাতও করি নে। প্রুফে যত অনাবশ্যক সংশােধন বাড়াবে ভুলের সম্ভাবনা ততই বাড়বে― সময় নষ্ট হবে, তার বদলে লাভ কিছুই হবে না। ততো যতাে শব্দে ওকার নিতান্ত অসংগত। মতো সম্বন্ধে অন্য ব্যবস্থা। মােটের উপর আমার বক্তব্য এই― পাঠককে গােড়াতেই পাগল নির্বোধ কিংবা আহেলা-বেলাতি বলে ধরে নিয়ো না― যেখানে তাদের ভুল করবার কোনাে সম্ভাবনা নেই সেখানে কেবলি তাদের চোখে আঙুল দিয়ো না― চাণক্যের মত চিহ্নের কুশাঙ্কুরগুলাে উৎপাটিত কোরাে তা হলে বানানভীরু শিশুদের যিনি বিধাতা তাঁর আশীর্বাদ লাভ করবে।
আমি যে নির্বিচারে চিহ্নসূয়যজ্ঞের জনমেজয়গিরি করতে বসেছি তা মনে কোরাে না। কোনাে কোনাে স্থলে হাইফেন চিহ্নটার প্রয়ােজন স্বীকার করি। অব্যয় ‘যে’ এবং সর্বনাম ‘যে’ শব্দের প্রয়ােগভেদ বােঝাবার জন্যে আমি হাইফেনের শরণাপন্ন হই। ‘তুমি যে কাজে লেগেছ’ বলতে বােঝায় তুমি অকর্মণ্য নও, এখানে ‘যে’ অব্যয়। ‘তুমি যে কাজে লেগেছ’ এখানে কাজকে নির্দিষ্ট করবার জন্য ‘যে’ সর্বনাম বিশেষণ। প্রথম ‘যে’ শব্দে হাইফেন দিয়ে ‘তুমি’-র সঙ্গে ও দ্বিতীয় ‘যে’-কে ‘কাজ’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত করলে অর্থ স্পষ্ট হয়। অন্যত্র দেখাে— ‘তিনি বললেন যে আপিসে যাও, সেখানে ডাক পড়েছে’। এখানে ‘যে’ অব্যয়। অথবা তিনি বললেন ‘যে আপিসে যাও সেখানে ডাক পড়েছে।’ এখানে ‘যে’ সর্বনাম, আপিসের বিশেষণ। হাইফেন চিহ্নে অর্থভেদ স্পষ্ট করা যায়। যথা, ‘তিনি বললেন-যে আপিসে যাও, সেখানে ডাক পড়েছে।’ এবং ‘তিনি বললেন যে-আপিসে যাও সেখানে ডাক পড়েছে।’[৫]
১৯৩১