বাংলা শব্দতত্ত্ব/পরিশিষ্ট

উইকিসংকলন থেকে

পরিশিষ্ট

 ১. প্রাচীনকাব্য সংগ্রহ: বিদ্যাপতি

 ২. বাংলা ক্রিয়াপদের তালিকা

 ৩. শব্দচয়ন ১-৬

১. জীবনস্মৃতির ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথ লিখিয়াছেন—

 ‘শ্রীযুক্ত সারদাচরণ মিত্র ও অক্ষয় সরকার মহাশয়ের প্রাচীনকাব্যসংগ্রহ সেসময়ে আমার কাছে একটি লোভর সামগ্রী হইয়াছিল। গুরুজনেরা ইহার গ্রাহক ছিলেন কিন্তু নিয়মিত পাঠক ছিলেন না। সুতরাং এগুলি জড়ো করিয়া আনিতে আমাকে বেশি কষ্ট পাইতে হইত না। বিদ্যাপতির দুর্বোধ বিকৃত মৈথিলী পদগুলি অস্পষ্ট বলিয়াই বেশি করিয়া আমার মনোযোগ টানিত। আমি টীকার উপর নির্ভর না করিয়া নিজে বুঝিবার চেষ্টা করিতাম। বিশেষ কোনো দুরূহ শব্দ যেখানে যতবার ব্যবহৃত হইয়াছে সমস্ত আমি একটি ছোটো বাঁধানো খাতায় নোট করিয়া রাখিতাম। ব্যাকরণের বিশেষত্বগুলিও আমার বুদ্ধি-অনুসারে যথাসাধ্য টুকিয়া রাখিয়াছিলাম।’

 জীবনস্মৃতিতে ‘ভানুসিংহের কবিতা’ অধ্যায়ে রবীন্দ্রনাথ পুনরায় এই প্রসঙ্গে লিখিয়াছেন—

 ‘পূর্বেই লিখিয়াছি, শ্রীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার ও সারদাচরণ মিত্র মহাশয় কর্তৃক সংকলিত প্রাচীনকাব্যসংগ্রহ আমি বিশেষ আগ্রহের সহিত পড়িতাম। তাহার মৈথিলীমিশ্রিত ভাষা আমার পক্ষে দুর্বোধ ছিল। কিন্তু সেইজন্যই এত অধ্যবসায়ের সঙ্গে আমি তাহার মধ্যে প্রবেশচেষ্টা করিয়াছিলাম। গাছের বীজের মধ্যে যে অঙ্কুর প্রচ্ছন্ন ও মাটির নীচে যে-রহস্য অনাবিষ্কৃত, তাহার প্রতি যেমন একটি একান্ত কৌতুহল বোধ করিতাম, প্রাচীন পদকর্তাদের রচনা সম্বন্ধেও আমার ঠিক সেই ভাবটা ছিল। আবরণ মোচন করিতে করিতে একটি অপরিচিত ভাণ্ডার হইতে একটি-আধটি কাব্যরত্ন চোখে পড়িতে থাকিবে, এই আশাতেই আমাকে উৎসাহিত করিয়া তুলিয়াছিল।’

 এই অধ্যয়নের ফলস্বরূপ ১২৮৮ ও ১২৯০ সালের ভারতীতে রবীন্দ্রনাথের যে-সকল প্রবন্ধ ও আলোচনা প্রকাশিত হইয়াছিল সেগুলি এখানে মুদ্রিত হইল।


২. বঙ্গীয় সাহিত্য-পরিষদের অন্যতম উদ্দেশ্যসাধনকল্পে বাংলা ক্রিয়াপদের তালিকা রবীন্দ্রনাথ-কর্তৃক সংগৃহীত ও পরিষদ কর্তৃক প্রচারিত হয়। ইহার সূচনায় পরিষদের সহকারী সম্পাদক ব্যোমকেশ মুস্তফি যে নিবেদন প্রচার করেন তাহা গ্রন্থপরিচয়ে দ্রষ্টব্য।


৩. শব্দচয়ন ১ সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে যে পত্র লেখেন তাহা গ্রন্থপরিচয়ে দ্রষ্টব্য। এই শব্দচয়ন প্রধানত মনিয়ের উইলিয়ম্‌স্‌-এর Sanskrit English Dictionary হইতে সংকলিত। রবীন্দ্রনাথ-ব্যবহৃত ও চিহ্নিত এই অভিধান শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রসদন-সংগ্রহভুক্ত।

 এই প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য যে শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রসদন-সংগ্রহে রবীন্দ্রনাথের হস্তাক্ষরে একটি শব্দসংগ্রহের নােট-বুক আছে; যাহার সকল শব্দ সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধে গৃহীত হয় নাই। যে শব্দগুলি অসংকলিত থাকিয়া গিয়াছে ওই নােটবুক হইতে ‘শব্দচয়ন ২’-এ তাহা সংকলিত হইল।

 উক্ত নােটবুকের একটি প্রতিলিপিতে এই শব্দ ব্যবহারের নিমিত্ত দৃষ্টান্ত বাক্য রবীন্দ্রনাথ রচনা করিয়াছিলেন ‘শব্দচয়ন ২’-এর উপসংহারে সেগুলি সংকলিত হইল।


 বিভিন্ন পত্রলেখকের প্রশ্নের উত্তরে রবীন্দ্রনাথ যে-সকল প্রতিশব্দ রচনা করিয়াছেন তাহা বাংলা শব্দতত্ত্বের দ্বিতীয় পরিবর্ধিত সংস্করণে পরিভাষাসংগ্রহ নামে সংকলিত হইয়াছিল। বর্তমান সংস্করণে শব্দচয়ন ৩-এ পূর্বসংকলিত পরিভাষাগুলি চিহ্নিত করা হইল, এবং তালিকাটিকে পূর্ণতর করিবার চেষ্টা করা হইয়াছে— এই তালিকাও সম্পূর্ণ বলিয়া মনে করা যায় না। বর্তমান গ্রন্থের বিভিন্ন রচনায় রবীন্দ্রনাথ-সৃষ্ট বা সংকলিত যেসব প্রতিশব্দ আছে তাহাও বিধৃত হইল। তা ছাড়া রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য রচনা ও চিঠিপত্র হইতে যথাসাধ্য সংকলন করা হইয়াছে। প্রতি ক্ষেত্রে যথাসম্ভব উৎস উল্লেখ করিয়া দেওয়া হইল।


 যে-সব ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ স্পষ্টত কোনাে উল্লেখসহ বাংলা প্রতিশব্দ প্রয়ােগ করেন নাই অথচ শব্দগুলি ইংরেজি প্রতিশব্দ রলিয়া অনুমান করা যায় তাহা ‘শব্দচয়ন ৪’-এ সংকলিত হইল। এই অনুমানের ক্ষেত্রে মতান্তর থাকিতেই পারে। ভবিষ্যতে বাংলা ভাষায় শব্দসৃষ্টির বিশদ কালানুক্রমিক আলোচনা করিয়া গবেষকগণ আরো নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্ত করিতে পারিবেন আশা করা যায়।

 ‘শব্দচয়ন ৫’ পর্যায়ে ইংরেজি idioms ও phrases-এর রবীন্দ্রনাথ-কৃত বাংলা অনুবাদ সংকলিত হইয়াছে।


 সর্বশেষ পর্যায়ে পরিহাসছলে কৃত প্রতিশব্দ সংকলিত হইয়াছে শব্দচয়ন ৬-এ।

 শব্দচয়ন ১ ও ২ ভিন্ন অন্যান্য তালিকা প্রণয়নে মুখ্যত শ্রীবীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস প্রণীত ‘রবীন্দ্রশব্দকোষ' গ্রন্থের সহায়তা লওয়া হইয়াছে।