বিষয়বস্তুতে চলুন

বাঙ্গলা ব্যাকরণ/গুণ

উইকিসংকলন থেকে

গুণ।

 পদ বা বর্ণাদি দ্বারা রসের উৎকর্ষ সাধক ধর্ম্মকে গুণ বলে। গুণ তিন প্রকার; মাধুর্য্য, ওজঃ ও প্রসাদ।

 মাধুর্য্য।—বাক্যের যে গুণ থাকিলে চিত্ত আর্দ্র ও দ্রবীভূত হয়, তাহার নাম মাধুর্য্য। আদি, করুণ ও শান্তরসেই সমধিক মাধুর্য্যগুণ থাকা আবশ্যক।

 মাধুর্য্যব্যঞ্জক বর্ণ।—ঙ্ক, ঙ্খ, ঙ্গ, ঙ্ঘ, ঞ্চ, ঞ্ছ, ঞ্জ, ঞ্ঝ, ন্ত, ন্থ, ন্দ, ন্ধ, ম্প, ম্ফ, ম্ব, ম্ভ এবং অনায়াসে উচ্চারিত হয় এমত ল ও র ইহারা মাধুর্য্যব্যঞ্জক বর্ণ। মাধুর্য্যগুণে সমাসশূন্য বা স্বল্প সমাস যুক্ত পদ বিন্যাস করিতে হয়। এইরূপ রচনাই সুললিত হইয়া থাকে। যথা; “তদীয় সৌন্দর্য্য সন্দর্শনে নৃপনন্দন মোহিত হইয়া।” “গগনে উঠিল রবি লোহিত বরণ। আলোক পাইয়া লোক পুলকিত মন।” ইত্যাদি।

 ওজঃ।—রচনার যে গুণ দ্বারা চিত্ত উদ্দীপ্ত হয়, তাহাকে ওজোগুণ কহে। বীর, বীভৎস ও ভয়ানক প্রভৃতি রসেই ওজোগুণ অধিক থাকে। ওজোগুণাত্মক রচনায় যুক্তাক্ষর, টবর্গের বর্ণ এবং শ ষ স অধিক থাকে। আর উহাতে সমাসের বাহুল্যও দৃষ্ট হয়। যথা; “লটাপট জটাজূট সংঘট্ট গঙ্গা। ছলচ্ছল টলট্টল কলক্কল তরঙ্গ” ইত্যাদি।

 প্রসাদ।—যে গুণ থাকিলে প্রবণ মাত্র অর্থগ্রহ হয়, তাহার নাম প্রসাদ গুণ। প্রসাদগুণ সমস্ত রসে ও রচনায় প্রশস্ত। প্রসাদ গুণে সুকুমার সরল বর্ণ ও প্রাঞ্জল পদ বিন্যাস করা আবশ্যক। যথা; “মন দিয়া কর সবে বিদ্যা উপার্জ্জন। সকল ধনের সার বিদ্যা মহাধন। এই ধন কেহ নাহি নিতে পারে কেড়ে। যতই করিবে দান তত যাবে বেড়ে।”