বাঙ্গালার ইতিহাস (রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রথম ভাগ/দশম পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে
চিত্র ২১

বিহারে আবিষ্কৃত রামপালের দ্বিতীয় রাজ্যাঙ্কে প্রতিষ্ঠিত তারামূর্ত্তি

বাঙ্গালার ইতিহাস
চিত্র ২২

রামপালের পঞ্চদশ রাজ্যাঙ্কে লিখিত অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা


বাঙ্গালার ইতিহাস
চিত্র ২৩

চণ্ডিমৌ গ্রামে আবিষ্কৃত রামপালদেবের ৪২শ রাজ্যাঙ্কে প্রতিষ্ঠিত
বোধিসত্ত্ব মূর্ত্তি


বাঙ্গালার ইতিহাস
চিত্র ২৪

হরিবর্ম্মদেবের ঊনবিংশ রাজ্যাঙ্কে লিখিত অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা


বাঙ্গালার ইতিহাস
চিত্র ২৫

ভাগলপুরে আবিষ্কৃত বজ্রতারা



দশম পরিচ্ছেদ।


পাল-বংশের অধঃপতন।

 বর্ম্মবংশ—বজ্রবর্ম্মা—জাতবর্ম্মা—কৈবর্ত্ত-বিদ্রোহ—দ্বিতীয় মহীপাল—রামপালের কারাবাস—দ্বিতীয় শূরপাল—রামপাল—কৈবর্ত্ত-রাজ ভীম—নষ্টরাজ্য উদ্ধারের চেষ্টা—শিবরাজের বরেন্দ্র আক্রমণ—রামপালের সামন্তচক্র—পীঠী—মথন বা মহন—নৌ-সেতু—ভীমের পরাজয়—হরি—রামাবতী স্থাপন—উৎকল ও কলিঙ্গ জয়—শ্যামলবর্ম্মা—ভোজবর্ম্মা—রামপালের মৃত্যু—রামপালের রাজত্বকালে প্রতিষ্ঠিত মূর্ত্তিদ্বয়—নালন্দায় লিখিত পুথি—রাম-চরিত—যক্ষপাল—হরিবর্ম্মা।

 খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীতে যখন গৌড়-বঙ্গ-মগধ বারংবার বহিঃশত্রু কর্ত্তৃক আক্রান্ত হইতেছিল, তখন বঙ্গে একটি নূতন রাজ্যের সৃষ্টি হইয়াছিল। বিগত বিশ বৎসরের মধ্যে একখানি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হইয়া এই নব-প্রতিষ্ঠিত রাজবংশের কথা জন-সমাজে সুপরিচিত করিয়াছে। নূতন রাজবংশ বর্ম্মবংশ নামে পরিচিত হইয়াছে। আর্য্যাবর্ত্তের পশ্চিম সীমায় পঞ্চনদ প্রদেশের সিংহপুর নগর প্রাচীন যাদব জাতির পুরাতন রাজধানী। চীনদেশীয় শ্রমণ ইউয়ান্ চোয়াং খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগে সিংহপুর রাজ্য দর্শন করিয়াছিলেন[১]। হিমালয়ের পার্ব্বত্য প্রদেশে লক্ষামণ্ডল নামক স্থানে প্রাপ্ত একখানি শিলালিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, বর্ম্মবংশীয় দ্বাদশ জন রাজা খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্য্যন্ত রাজত্ব করিয়াছিলেন[২]। মহারাজাধিরাজ ধর্ম্মপালদেব চক্রয়ুধকে কান্যকুব্জের সিংহাসনে সুপ্রতিষ্ঠিত করণোদ্দেশ্যে বোধ হয়, এই সিংহপুরের যাদব-রাজকে পরাজিত করিয়াছিলেন। রাজেন্দ্রচোল, দ্বিতীয় জয়সিংহ, অথবা গাঙ্গেয়দেবের সহিত এই যাদব-বংশজাত বজ্রবর্ম্মা নামক জনৈক সেনাপতি উত্তরাপথের পশ্চিমার্দ্ধ হইতে পূর্বার্দ্ধে আসিয়া একটি নূতন রাজ্য স্থাপন করিয়াছিলেন। ঢাকা জেলায় বেলাব গ্রামে আবিষ্কৃত বজ্রবর্ম্মার প্রপৌত্র ভোজবর্ম্মদেবের তাম্রশাসন হইতে অবগত হওয়া যায় যে, যাদব-সেনার সমর-বিজয়-যাত্রাকালে বজব্রর্ম্মা মঙ্গলস্বরূপ গণ্য হইতেন[৩]। কোন্ সময়ে কিরূপে বঙ্গের পালবংশের অধিকার লুপ্ত হইয়াছিল, তাহা অবগত হইবার কোন উপায় অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয় নাই।

 বজ্রবর্ম্মা বোধ হয়, কেবল হরিকেল বা চন্দ্রদ্বীপ অধিকার করিয়া নূতন রাজ্য স্থাপন করিয়াছিলেন, তৎপুত্র জাতবর্ম্মা বঙ্গে যাদব-প্রতিভার প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। জাতবর্ম্মা কর্ণদেব ও তৃতীয় বিগ্রহপালদেবের সমসাময়িক ব্যক্তি। তিনি কর্ণের কন্যা বীরশ্রীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন। ভোজবর্ম্মদেবের তাম্রশাসন হইতে অবগত হওয়া যায় যে, জাতবর্ম্মা দিব্য ও গোবর্দ্ধন নামক নরপতিদ্বয়কে পরাজিত, অঙ্গদেশে প্রতিষ্ঠা লাভ এবং কামরূপ-রাজকে পরাজিত করিয়াছিলেন[৪]। দিব্য, বরেন্দ্রের কৈবর্ত্ত-বিদ্রোহের অধিনায়ক; ইনি রামচরিতে দিব্বোক নামে অভিহিত হইয়াছেন[৫]। দিব্বোক বোধ হয়, গৌড় অধিকার করিয়া বঙ্গ আক্রমণ করিয়াছিলেন এবং সেই সময়ে জাতবর্ম্মা তাঁহাকে পরাজিত করিয়াছিলেন। জাতবর্ম্মা অঙ্গদেশে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিলেন। বোধ হয়, কর্ণ অথবা চালুক্যবংশীয় কুমার বিক্রমাদিত্যের সহিত তৃতীয় বিগ্রহপালদেবের যুদ্ধকালে বঙ্গেশ্বর গৌড়েশ্বরের পক্ষ অবলম্বন করিয়াছিলেন। রামচরিতে “দ্বোরপবর্দ্ধন” নামক জনৈক কৌশাম্বী অধিপতির নাম আছে[৬]। অনুমান হয়, লিপিকর-প্রমাদে শ্রীগোবর্দ্ধন স্থানে দ্বোরপবর্দ্ধন লিখিত হইয়াছে এবং এই গোবর্দ্ধনই জাতবর্ম্মা কর্ত্তৃক পরাজিত হইয়াছিলেন। জাতবর্ম্মা কর্ত্তৃক পরাজিত কামরূপাধিপতির নাম অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয় নাই।

 তৃতীয় বিগ্রহপালদেবের জীবিতকালে অথবা তাঁহার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে উত্তরবঙ্গে কৈবর্ত্তগণ বিদ্রোহী হইয়াছিল। সন্ধ্যাকরনন্দী-বিরচিত ‘রামচরিত’ কাব্যে কৈবর্ত্ত-বিদ্রোহ এবং বিদ্রোহ-দমনার্থ রামপালের যুদ্ধাভিযান বর্ণিত হইয়াছে। তৃতীয় বিগ্রহপালদেবের মৃত্যুর পরে তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিতীয় মহীপাল পাল-সাম্রাজ্যের অবশিষ্টাংশের অধিকার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন[৭]। মহীপাল রাজাধিকার পাইয়া মন্ত্রিগণের পরামর্শের বিরুদ্ধে অনীতিক আচরণ আরম্ভ করিয়াছিলেন এবং রামপালকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছিলেন[৮]। রামপালের দ্বিতীয় ভ্রাতা শূরপালও রামপালের সহিত কারাগারে আবদ্ধ হইয়াছিলেন[৯]। মহীপাল ভ্রাতৃদ্বয় কর্ত্তৃক সিংহাসনচ্যুত হইবার ভয়ে তাঁহাদিগকে কারারুদ্ধ করিয়াছিলেন[১০]। খলস্বভাব ব্যক্তিগণ মহীপালকে কহিয়াছিল যে, রামপাল কৃতী এবং ক্ষমতাশালী, সুতরাং তিনি বলপূর্ব্বক তাঁহার রাজ্য গ্রহণ করিবেন অথবা তাঁহাকে হত্যা করিবেন[১১]। এই জন্য মহীপাল রামপালকে শাঠ্যপ্রয়োগে বধ করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন এবং অবশেষে তাঁহাকে কারারুদ্ধ করিয়াছিলেন। রামপালদেব যে সময়ে কারারুদ্ধ সেই সময়ে মহীপাল সামান্য সেনা লইয়া বিদ্রোহিগণের সম্মিলিত সেনাসমূহের সহিত যুদ্ধে পরাজিত হইয়া নিহত হইয়াছিলেন[১২]। তৃতীয় মহীপালদেবের পরে দ্বিতীয় শূরপালদেব পাল-সাম্রাজ্যের অধীশ্বররূপে ঘোষিত হইয়াছিলেন। তখন রাজ্যচ্যুত, রাজধানী হইতে তাড়িত ভ্রাতৃগণ এক স্থান হইতে অন্য স্থানে পলায়নপর বলিয়া বোধ হয় সন্ধ্যাকরনন্দী শূরপালের রাজ্যপ্রাপ্তির বিশেষ উল্লেখ করেন নাই। মনহলিতে আবিষ্কৃত তাম্রশাসনে দ্বিতীয় শূরপালদেব সম্বন্ধে কথিত হইয়াছে যে, “মহেন্দ্রতুল্য মহিমান্বিত, স্কন্দতুল্য প্রতাপশ্রীসমন্বিত, সাহসসারথী, নীতিগুণসম্পন্ন শ্রীশূরপাল নামক নরপাল তাঁহার (দ্বিতীয় মহীপালের) এক অনুজ ছিলেন[১৩]। শূরপাল অন্ততঃ কয়েক দিনের জন্যও গৌড়েশ্বররূপে ঘোষিত না হইলে মদনপালের প্রশস্তিকার কখনই তাঁহাকে নরপতি বলিয়া উল্লেখ করিতেন না। শূরপালদেব রাজ্যাভিষিক্ত না হইলে মদনপালের প্রশস্তিরচয়িতা কখনই তাঁহার নাম করিতেন না। ‘রামচরিতে’ রামপালের পুত্র রাজ্যপালের নাম দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু রাজ্যপাল সিংহাসনে আরোহণ করেন নাই বলিয়া মদনপালের প্রশস্তিকার রামপালের পুত্রগণের মধ্যে কেবল কুমারপাল ও মদনপালের নাম করিয়াছেন।

 দ্বিতীয় শূরপালদেব কোন্ সময়ে সিংহাসন লাভ করিয়াছিলেন, কত দিন রাজ্য করিয়াছিলেন এবং কিরূপে তাঁহার রাজ্যের অবসান হইয়াছিল, তাহা জানিবার কোন উপায়ই নাই। সন্ধ্যাকরনন্দী এই বিষয়ে নীরব। ‘রামচরিতে’ শূরপালের সিংহাসন-লাভের, তাঁহার রাজ্যকালীন ঘটনার এবং তাঁহার মৃত্যুর বিবরণের অভাব দেখিয়া অনুমান হয় যে, রামপাল কোনও উপায়ে শূরপালকে সংহার করিয়া পৈত্রিক রাজাধিকার প্রাপ্ত হইয়াছিল। শূরপালের পরে রামপাল গৌড়-রাজ্যের অধিকার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। রামপালের অভিষেককালে পাল-রাজগণের অধিকার বোধ হয় ভাগীরথী ও পদ্মার মধ্যস্থিত ‘ব’ দ্বীপে সীমাবদ্ধ হইয়াছিল; কারণ, রামপালকে দিব্বোকের রাজ্য উত্তর বঙ্গ অধিকার জন্য ভাগীরথীর উপরে নৌকামেলক বা নৌ-সেতু বন্ধন করিতে হইয়াছিল[১৪]। রামপাল, শূরপালের মৃত্যুর পরে যখন গৌড়-সিংহাসনের অধিকার লাভ করিলেন, তখন দিব্বোকের ভ্রাতুষ্পুত্র ভীম গৌড়-সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। দিব্বোকের পরে বোধ হয়, তাঁহার ভ্রাতা রূদোক গৌড়-রাজ্যের অধিকার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। রূদোকের পুত্র ভীম উত্তরাধিকারসূত্রে উত্তরবঙ্গের সিংহাসনে আরোহণ করিয়াছিলেন[১৫]। সেই সময়ে রামপাল অত্যন্ত হতাশ হইয়া পড়িয়াছিলেন[১৬]। তাঁহার পুত্র রাজ্যপাল ও অমাত্যগণ সর্ব্বদা কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্য সম্বন্ধে তাঁহার সহিত পরামর্শ করিতেন[১৭]। তদনন্তর রামপাল সাম্রাজ্যের প্রধান সামন্তগণের সহিত সাক্ষাৎ করিবার জন্য কিয়দ্দিন পর্য্যটন করিয়াছিলেন এবং আটবিক, অর্থাৎ—বনময় প্রদেশসমূহের সামন্তগণের সহিত মিত্রতা স্থাপন করিয়াছিলেন[১৮]। পর্য্যটনাক্তে রামপাল বুঝিতে পারিলেন যে, সামন্তগণ তাঁহার ব্যবহারে সন্তুষ্ট হইয়াছেন[১৯]। তদনন্তর তিনি পদাতিক, অশ্ব ও গজারোহী সেনা সংগ্রহ করিলেন। এই সময়ে তাঁহাকে নদীতীরস্থিত বহু ভূমি ও বিপুল অর্থ দান করিতে হইয়াছিল[২০]

 ত্রিবিধ সেনা সংগৃহীত হইলে রামপালদেবের মাতুল-পুত্র রাষ্ট্রকূটবংশীয় শিবরাজদেব সেনা লইয়া রামপালের আদেশে গঙ্গা পার হইয়াছিলেন[২১]। মহাপ্রতীহার শিবরাজদেব কৈবর্ত্ত-রাজ্যে অবস্থিত বিষয় ও গ্রামগুলি ভীমবেগে আক্রমণ করায় ভীমের প্রজাগণ বিপন্ন হইয়া পড়িয়াছিল। দেব-ব্রাহ্মণাদির ভূমি রক্ষা করিবার জন্য শিবরাজ “ইহা কোন্ বিষয়, ইহা কোন্ গ্রাম,” ইত্যাদি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে আরম্ভ করিয়াছিলেন[২২]। শিবরাজ বরেন্দ্রী হইতে ভীম কর্ত্তৃক নিযুক্ত রক্ষকগণকে দূর করিয়া দিয়াছিলেন এবং রাজসমীপে প্রত্যাগমন করিয়া রামপালকে জানাইয়াছিলেন যে, তাঁহার পিতৃভূমি শত্রুমুক্ত হইয়াছে[২৩]। শিবরাজ কর্ত্তৃক বরেন্দ্রী অধিকার বোধ হয় দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় নাই; কারণ, ইহার অব্যবহিত পরেই রামপালকে বহু সেনা সমভিব্যাহারে পুনরায় বরেন্দ্রী আক্রমণ করিতে হইয়াছিল। বারেন্দ্র-অভিযানে নিম্নলিখিত সামন্তগণ রামপালের অধীনে যুদ্ধার্থে গমন করিয়াছিলেন;—মগধ এবং পীঠীর অধিপতি ভীমযশঃ, কোটাটবীর বীরগুণ, দণ্ডভুক্তি-রাজ জয়সিংহ, দেবগ্রাম-প্রতিবদ্ধ বালবলভীর বিক্রমরাজ, অপরমন্দারের অধিপতি এবং আটবিক সামন্তচক্রের প্রধান লক্ষ্মীশূর, কুজবটীর শূরপাল, তৈলকম্পের রুদ্রশিখর, উচ্ছালের অধিপতি ময়গলসিংহ, ঢেক্করীয়-রাজ প্রতাপসিংহ, কয়ঙ্গলমণ্ডলের অধিপতি নরসিংহার্জ্জুন, শঙ্কট গ্রামের চণ্ডার্জ্জুন, নিদ্রাবলের বিজয়রাজ, কৌশাম্বীপতি দ্বোরপবর্দ্ধন, পদুবন্বার সোম। এতদ্ব্যতীত রাজ্যপালাদি রামপালের পুত্রগণ পিতার সহিত যুদ্ধযাত্রা করিয়াছিলেন[২৪]। রামপালের মাতুল রাষ্ট্রকূটবংশীয় মথনদেব বা মহনদেব, মহামাণ্ডলিক কাহ্নুরদেব ও সুবর্ণদেব নামক পুত্রদ্বয় এবং ভ্রাতুষ্পুত্র মহাপ্রতীহার শিবরাজদেবের সহিত রামপালের যুদ্ধাভিযানে যোগদান করিয়াছিলেন[২৫]

 মগধ ও পীঠীর অধিপতি ভীমযশঃ ‘রাম-চরিতে’র টীকায় “কান্যকুব্জ-রাজবাজিনীগণ্ঠনভুজঙ্গ” উপাধিতে ভূষিত হইয়াছেন[২৬]। সম্ভবতঃ কান্যকুব্জ-রাজ তৎকর্ত্তৃক পরাজিত হইয়াছিলেন। এই সময়ে কোন্ বংশের কোন্ রাজা কান্যকুব্জের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন, তাহা অদ্যাপি নির্ণীত হয় নাই। প্রতীহারবংশীয় ত্রিলোচনপালের পরে চেদিবংশীয় কর্ণদেব বোধ হয়, কিয়ৎকাল কান্যকুব্জ অধিকার করিয়াছিলেন; কারণ, গাহডবালবংশীয় গোবিন্দচন্দ্রদেবের একখানি তাম্রশাসনে লিখিত আছে যে, ভোজদেব ও কর্ণদেবের পরে চন্দ্রদেব পৃথিবীর অধীশ্বর হইয়াছিলেন[২৭]। গাহডবালবংশীয় চন্দ্রদেব খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর শেষপাদে আবির্ভূত হইয়াছিলেন[২৮]। তৎপূর্ব্বে বোধ হয়, কর্ণদেবের পুত্র যশঃকর্ণদেব কান্যকুব্জের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন; কারণ, যশঃকর্ণদেবের পুত্রবধূ অহ্লণ দেবীর ভেড়াঘাটের শিলালিপি হইতে অবগত হওয়া যায় যে, যশঃকর্ণ চম্পারণ্য বিদারণ করিয়াছিলেন[২৯]। চম্পারণ্য মিথিলার পশ্চিমে অবস্থিত, ইহার বর্ত্তমান নাম চম্পারণ[৩০]। সম্ভবতঃ যশঃকর্ণ ভীমযশঃ কর্ত্তৃক চম্পারণ্যের যুদ্ধে পরাজিত হইয়াছিলেন এবং সে সময়ে তিনি কান্যকুব্জের অধিপতি ছিলেন। পীঠী দক্ষিণ মগধের প্রাচীন নাম। মথনদেবের দৌহিত্রী কান্যকুব্জ-রাজ গোবিন্দচন্দ্রের পত্নী কুমরদেবীর শিলালিপির পাঠোদ্ধারকালে ডাক্তার কোনো (Sten Konow) অনুমান করিয়াছিলেন যে, পীঠী মান্দ্রাজ প্রদেশে অবস্থিত পিট্টপুরমের প্রাচীন নাম[৩১]। কিন্তু খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর চতুর্থ পাদে একই ব্যক্তির মগধ ও দাক্ষিণাত্যের নগরবিশেষের অধিপতি হওয়া অসম্ভব। ‘রাম-চরিতে’র আর এক স্থানে পীঠীর উল্লেখ আছে। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের অষ্টম শ্লোকের টীকায় উল্লিখিত আছে যে, মথনদেব বিন্ধ্যমাণিক্য নামক হস্তিপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া পীঠী ও মগধের অধিপতিকে পরাজিত করিয়াছিলেন[৩২] এবং বরাহ অবতারে নারায়ণ যেমন মেদিনীকে উদ্ধার করিয়াছিলেন, সেইরূপ রামপালের রাজ্য উদ্ধার করিয়াছিলেন। মথনদেবের দৌহিত্রী কুমারদেবীর সারনাথে আবিষ্কৃত শিলালিপি হইতেও অবগত হওয়া যায় যে, মথনদেব কর্ত্তৃক পরাজিত পীঠীপতির নাম দেবরক্ষিত[৩৩]। গৌড়েশ্বরের মাতুল মহন পীঠীপতি দেবরক্ষিতকে পরাজিত করিয়া রামপালের সিংহাসন সুদৃঢ় ভিত্তির উপরে স্থাপন করিয়াছিলেন। সারনাথের শিলালিপিতে মথনদেব “রাজগণের মাতুল” উপাধিতে ভূষিত হইয়াছেন, ইহা হইতে অনুমান হয় যে, সম্ভবতঃ দ্বিতীয় মহীপাল এবং দ্বিতীয় শূরপালও মথনদেবের ভাগিনেয় ছিলেন। সারনাথের শিলালিপিতে মথন কর্ত্তৃক দেবরক্ষিতের পরাজয়ের উল্লেখ দেখিয়া অনুমান হয় যে, সম্ভবতঃ কৈবর্ত্ত-বিদ্রোহকালে অথবা তাহার পূর্ব্বে পীঠীপতি রামপালের বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছিলেন। মথনদেব দেবরক্ষিতকে পরাজিত করিয়া তাঁহাকে স্বপক্ষে আনয়ন করিবার জন্য স্বীয় কন্যা শঙ্করদেবীর সহিত দেবরক্ষিতের বিবাহ দিয়াছিলেন। রামপালের বারেন্দ্র অভিযানের পূর্ব্বে মথন কর্ত্তৃক দেবরক্ষিত পরাজিত হইয়াছিলেন; কারণ, বারেন্দ্র অভিযানকালে ভীমযশঃ মগধ ও পীঠীর অধিপতি ছিলেন এবং মথনের পরিচয়-প্রসঙ্গে দেবরক্ষিতের পরাজয় উল্লিখিত হইয়াছে। পীঠী বর্ত্তমান পিট্টপুরমের প্রাচীন নাম হওয়া অসম্ভব; কারণ, তৃতীয় বিগ্রহপাল অথবা নয়পালের পরে পালরাজবংশের কোন রাজার দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধ যাত্রা করিবার অথবা দাক্ষিণাত্যের কোন স্থানে অধিকার রক্ষা করিবার ক্ষমতা ছিল না। পীঠী দক্ষিণ মগধের অংশের, অর্থাৎ বর্ত্তমান গয়া জেলার প্রাচীন নাম। দেশাবলী নামক গ্রন্থে পীঠঘট্টা নামক একটি স্থানের উল্লেখ আছে[৩৪]। ঘট্টা শব্দদ্বারা এই স্থান গঙ্গা বা অপর কোন নদীর উপরে অবস্থিত ছিল, ইহাই সূচিত হইতেছে। কতকগুলি প্রাচীন মুদ্রায় ‘পঠ’ উৎকীর্ণ আছে দেখিতে পাওয়া যায়[৩৫]। ইহা প্রাচীন পীঠীর মুদ্রা হইলেও হইতে পারে। কিন্তু এই সকল মুদ্রার প্রাপ্তিস্থান নির্ণয় করিবার কোনই উপায় নাই এবং অদ্যাপি ইহাদিগের মুদ্রণকাল নির্ণীত হয় নাই। সামন্তচক্রের নামমালায় সর্ব্বাগ্রে পীঠীপতি মগধাধিপের নাম প্রদত্ত হইয়াছে এবং মূল শ্লোকে তিনি ‘বন্দ্য’ উপাধিতে অভিহিত হইয়াছেন। সম্ভবত ভীমযশঃ গৌড়েশ্বরের সামন্তচক্রের মধ্যে প্রধান ছিলেন। ভীমযশের কোটের পার্ব্বত্যপ্রদেশের অধিপতি বীরগুণের নাম উল্লিখিত হইয়াছে। বীরগুণ ‘রামচরিতে’ “নানারত্নকূটকুট্টিমবিকটকোটাটবীকণ্ঠিরবো দক্ষিণ সিংহাসনচক্রবর্ত্তী” উপাধিতে অভিহিত হইয়াছেন[৩৬]। ডাক্তার কিলহর্ণ কর্ত্তৃক সঙ্কলিত দক্ষিণাপথের খোদিতলিপিমালায় বীরগুণনামধেয় কোন রাজার নাম দেখিতে পাওয়া যায় না[৩৭]। “কোট” অথবা “কোটাটবী” নামক কোন দেশের নাম অদ্যাবধি কোন প্রাচীন লিপিতে আবিষ্কৃত হইয়াছে বলিয়া মনে হয় না। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু বলেন,—ইহা “বিশাল অরণ্যানী-বেষ্টিত উড়িষ্যার গড়জাত প্রদেশ। আইন-ই-আকবরীতে এই স্থান কটক সরকারের অন্তর্গত ‘কোটদেশ’ বলিয়াই অভিহিত হইয়াছে[৩৮]।” ইহা কোটাটবী হইলেও হইতে পারে। দণ্ডভুক্তি-রাজ জয়সিংহ “দণ্ডভুক্তিভূপতিরদ্ভুতপ্রভাবাকরকরকমলমুকুলতুলিতোৎকলেশকর্ণকেশরীসরিদ্বল্লভকুম্ভসম্ভবঃ”[৩৬] উপাধিতে অভিহিত হইয়াছেন। পূর্ব্বে প্রথম রাজেন্দ্রচোলের দিগ্বিজয়-প্রসঙ্গে দণ্ডভুক্তির বর্ত্তমান অবস্থান নির্দ্দিষ্ট হইয়াছে। ইহা বর্ত্তমান মেদিনীপুর জেলার দক্ষিণ ভাগে অবস্থিত ছিল। জয়সিংহ উড়িষ্যার রাজা কর্ণকেশরীকে পরাজিত করিয়াছিলেন। কর্ণকেশরী নাম অদ্যাবধি কোন খোদিতলিপিতে আবিষ্কৃত হয় নাই। কর্ণকেশরী ব্যতীত উড়িষ্যার কেশরিবংশের আর একজন মাত্র রাজার নাম আবিষ্কৃত হইয়াছে। ইঁহার নাম উদ্যোতকেশরী[৩৯]। জয়সিংহের পর দেবগ্রামপ্রতিবদ্ধ বালবলভীর অধীশ্বর বিক্রমরাজ্যের নাম উল্লিখিত হইয়াছে। বালবলভীর অবস্থান অদ্যাবধি অজ্ঞাত রহিয়াছে। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতানুসারে ‘বালবলভী’ বর্ত্তমান ‘বাগড়ী’র প্রাচীন নাম[৪০]। কিন্তু এই উক্তির সমর্থক কোন প্রমাণ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয় নাই। ‘রামচরিতে’ বালবলভীর বিবরণ দেখিয়া বোধ হয় যে, উক্ত দেশ নদীবহুল ছিল[৪১]। উড়িষ্যায় ভুবনেশ্বরে আবিষ্কৃত হরিবর্ম্মদেবের মন্ত্রী ভট্টভবদেবের প্রশস্তিতে বালবলভীর উল্লেখ সর্ব্বপ্রথমে দেখিতে পাওয়া যায়[৪২]। ভুবনেশ্বর-প্রশস্তি এবং ‘রামচরিত’ ব্যতীত ভবদেবভট্ট-বিরচিত ‘প্রায়শ্চিত্তনিরূপণ’ ও ‘তন্ত্রবার্ত্তিকটীকা’ নামক গ্রন্থদ্বয়ে তাঁহার ‘বালবলভীভুজঙ্গ’ উপাধিতে, বালবলভীর নাম দেখিতে পাওয়া যায়[৪৩]। বঙ্গদেশে বর্ত্তমান সময়ে দেবগ্রাম নামে বহু গ্রাম আছে সুতরাং দেবগ্রাম বা বালবলভী যে নদীয়া জেলায় অবস্থিত ছিল এ কথা নিশ্চয়রূপে বলা যাইতে পারে না[৪৪]। বিক্রমরাজের পরে শূরবংশীয় অপরমন্দারের অধিপতি লক্ষ্মীশূরের নাম দেখিতে পাওয়া যায়। তিনি ‘রামচরিতে’ ‘অপরমন্দারমধুসূদনঃ সমস্তাটবিকসামন্তচক্রচূড়ামণিঃ” উপাধিতে বিভূষিত হইয়াছেন। লক্ষ্মীশূরের বংশপরিচয় অথবা তাঁহার নাম অন্য কোন প্রাচীন গ্রন্থ বা শিলালিপিতে আবিষ্কৃত হয় নাই। অপরমন্দারের অবস্থান নির্ণয় করিবার কোন উপায়ই আবিষ্কৃত হয় নাই। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু বলেন যে, অপরমন্দারের বর্ত্তমান নাম মন্দারণ[৪৫], কিন্তু এই সম্বন্ধে সমর্থক প্রমাণের অভাব আছে। ইহার পর কুজবটীর অধীশ্বর শূরপালের নাম দেখিতে পাওয়া যায়। কুজবটীর অবস্থান ও শূরপালের বংশপরিচয় সম্বন্ধে কোন প্রমাণই অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয় নাই। প্রথম রাজেন্দ্রচোলের তিরুমলৈ শিলালিপিতে দণ্ডভুক্তি-রাজ ধর্ম্মপালের নাম পাওয়া গিয়াছে[৪৬]। দণ্ডভুক্তি-রাজ ধর্ম্মপাল এবং কুজবটী-রাজ শূরপাল হয়ত পাল-রাজবংশ সম্ভূত ছিলেন। শূরপালের পরে তৈলকম্পের অধিপতি রুদ্রশিখরের নাম দেখিতে পাওয়া যায়। তৈলকম্পের বর্ত্তমান নাম তেলকুপি[৪৭], ইহা মানভূম জেলায় অবস্থিত। রুদ্রশিখরের পরে উচ্ছালের অধিপতি ময়গলসিংহের নাম প্রদত্ত হইয়াছে। উচ্ছালের অবস্থান ও ময়গলসিংহের পরিচয় সম্বন্ধে কোন প্রমাণই অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয় নাই, তথাপি শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু বলেন যে, উচ্ছাল বর্ত্তমান বীরভূম জেলার কিয়দংশের প্রাচীন নাম। তিনি বলেন,—“শাল নদীর উত্তরবর্ত্তী ‘জৈন উঝিয়াল পরগণা’ প্রাচীন উচ্ছাল নাম রক্ষা করিতেছে[৪৫]। বসুজ মহাশয় বোধ হয় অবগত নহেন যে, বঙ্গদেশের নানা স্থানে উজিয়াল উপাধিযুক্ত পরগণা আছে। সরকার উদনের উজিয়ালঘাটী এবং সুলতানপুর উজিয়াল, সরকার মহ্‌মূদাবাদে উজিয়ালপুর তারা উজিয়াল, হুসেন উজিয়াল, সরকার বাজুহার শাহ উজিয়াল বাজু, জাফর উজিয়াল, নসরৎ উজিয়াল ও মোবারক উজিয়াল, সরকার শরিফাবাদে হুসেন উজিয়াল[৪৮] প্রভৃতি নাম উদাহরণস্বরূপ উল্লিখিত হইল। বসুজ মহাশয়ের রীতি অবলম্বন করিলে বঙ্গদেশের প্রতি বিভাগে এক একটি উচ্ছাল রাজ্য ছিল স্বীকার করিয়া লইতে হইবে। উচ্ছালরাজের পরে ঢেক্করীয়-রাজ প্রতাপসিংহের নাম লিখিত আছে। ঢেক্করীয় নগর উত্তর-রাঢ়ে অবস্থিত ছিল এবং অদ্যাবধি ইহা ঢেকুরি নামে সুপরিচিত। এতদ্ব্যতীত কয়ঙ্গলমণ্ডলের নরসিংহার্জ্জুন, সঙ্কট গ্রামের চণ্ডার্জ্জুন, নিদ্রাবলের বিজয়রাজ, কৌশাম্বীর দ্বোরপবর্দ্ধন এবং পদুবন্বার সোম, রামপালের সামন্তচক্রের মধ্যে উল্লিখিত হইয়াছেন। তন্মধ্যে দ্বোরপবর্দ্ধন বোধ হয়, ভোজবর্ম্মদেবের তাম্রশাসনে উল্লিখিত এবং জাতবর্ম্মার সমসাময়িক গোবর্দ্ধন[৪৯]। কৌশাম্বীর বর্ত্তমান নাম কুশুম্বা, ইহা রাজশাহী জেলায় অবস্থিত। এই স্থানে হুসেন শাহের পুত্র নসরত শাহের রাজত্বকালে নির্ম্মিত একটি প্রাচীন মসজিদ আছে। বসুজ মহাশয় বলেন যে, নিদ্রাবলের বিজয়রাজই সেনবংশীয় বিজয়সেন[৫০], কিন্তু এই উক্তির সমর্থক বিশ্বাসযোগ্য কোন প্রমাণ আবিষ্কার হইয়াছে বলিয়া মনে হয় না।

 রামপাল ও তাঁহার সামন্তগণ নৌকামেলক নৌ-সেতু দ্বারা ভাগীরথী পার হইয়াছিলেন[৫১]। রামচরিতের টীকা হইতে কোন্ স্থানে রামপালের সহিত কৈবর্ত্ত-রাজের যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা বুঝিতে পারা যায় না; তবে ইহা স্থির যে, বরেন্দ্রভূমির দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে কোনও স্থানে এই যুদ্ধ হইয়াছিল। কৈবর্ত্ত-রাজ ভীম, যুদ্ধকালে জীবিতাবস্থায় ধৃত হইয়াছিলেন[৫২]। অন্য একস্থানে লিখিত আছে যে, ভীম হস্তিপৃষ্ঠে ধৃত হইয়াছিলেন[৫৩]। কৈবর্ত্ত-রাজ ধৃত হইয়াছেন শুনিয়া রামপালের সেনাগণ উৎসাহ পাইয়াছিল। ভীম ধৃত হইলে কৈবর্ত্ত-সেনা পরাজিত হইয়া পলায়ন করিয়াছিল। রামপাল যুদ্ধান্তে ভীমের রাজধানী ডমরনগর ধ্বংস করিয়াছিলেন[৫৪]। সন্ধ্যাকরনন্দী ডমরকে শত্রুপক্ষের রাজধানী বলিয়া উপপুর আখ্যায় অভিহিত করিয়াছেন। যুদ্ধান্তে ভীম বিত্তপাল নামক জনৈক কর্ম্মচারীর তত্ত্বাবধানে অবরুদ্ধ হইয়াছিলেন[৫৫] পরাজিত কৈবর্ত্ত-সেনা হরি নামধেয় জনৈক নায়ক কর্ত্তৃক একত্র হইয়াছিল[৫৬]। হরির সহিত যুদ্ধে রামপালের পুত্র (সম্ভবতঃ রাজ্যপাল) বীরত্ব প্রকাশ করিয়া তাঁহাকে পরাজিত করিয়াছিলেন[৫৬]। যুদ্ধান্তে হরি ধৃত হইয়া ভীমের সহিত নিহত হইয়াছিলেন। ইহার পরেই বোধ হয়, সমগ্র বরেন্দ্রভূমি রামপালকর্ত্তৃক অধিকৃত হইয়াছিল। রামপাল ভীমের সেনাগণকে স্বীয় সেনাদলে নিযুক্ত করিয়াছিলেন[৫৭]। বিদ্রোহদমনান্তে রামপালদেব গঙ্গা ও করতোয়ার মধ্যে রামাবতী নাম্নী একটি নূতন নগরী নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন[৫৮]। শ্রীহেতুর চণ্ডেশ্বর ও ক্ষেমেশ্বর এই নূতন নগরের উপযুক্ত স্থান নির্দ্দেশ করিয়াছিলেন[৫৯]। রামপালদেব এই নগরে জগদ্দলমহাবিহার নামে একটি বিহার নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন[৬০]। রামাবতী পাল-রাজবংশের শেষ রাজধানী এবং রামপালের কনিষ্ঠ পুত্র মদনপালের রাজ্যকালেও রামাবতী গৌড়-রাজ্যের রাজধানী ছিল[৬১]। খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতেও রামাবতী নগরী বিদ্যমান ছিল; কারণ, আবুল ফজল প্রণীত আইন-ই-আকবরীতে রমৌতি নগরের উল্লেখ আছে[৬২]। লক্ষ্মণাবতী হইতে যেমন লক্ষ্ণৌতি হইয়াছে, সেইরূপ রামাবতী পারস্য ভাষায় রমৌতি রূপ ধারণ করিয়াছে। ভ্রমক্রমে রমৌতি স্থানে রমরৌতি লিখিত হইয়াছে[৬৩]

 রামাবতী স্থাপনের পরে রামপালদেব উৎকল ও কলিঙ্গ বিজয় করিয়াছিলেন এবং উৎকল-রাজ্য নাগবংশীয় রাজগণকে প্রত্যর্পণ করিয়াছিলেন[৬৪]। রামপালের জনৈক সামন্ত কামরূপ বিজয় করিয়াছিলেন[৬৫]। কামরূপ রাজগণ বোধ হয়, এই সময়ে ক্রমশঃ দুর্ব্বল হইয়া পড়িতেছিলেন, কারণ, গৌড়েশ্বরগণ বারম্বার কামরূপ-রাজ্য জয় করিয়াছিলেন। রামপালের এবং কুমারপালের রাজত্বকালে কামরূপরাজ্য অধিকৃত হইয়াছিল এতদ্ব্যতীত সেনবংশীয় বিজয়সেন ও লক্ষ্মণসেন এক একবার কামরূপ অধিকার করিয়াছিলেন।

দ্বিতীয় শূরপালের রাজ্যকালে বর্ম্মবংশীয় শ্যামলবর্ম্মদেব বঙ্গদেশের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁহার পুত্র ভোজদেবের তাম্রশাসনে তাঁহার রাজ্যকালের কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিবরণ নাই। শ্যামলবর্ম্মা জগদ্বিজয়মল্লের কন্যা মালব্যদেবীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন[৬৬]। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসুর মতানুসারে জগদ্বিজয়মল্ল এবং জগদেকমল্ল একই ব্যক্তি[৬৭], কিন্তু এই উক্তির পক্ষে কোন বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখিতে পাওয়া যায় না। শ্যামলবর্ম্মার পুত্র ভোজবর্ম্মা পিতার মৃত্যুর পরে বঙ্গদেশের অধিকার লাভ করিয়াছিলেন। ভোজবর্ম্মা, তাঁহার পঞ্চম রাজ্যাঙ্কে পৌণ্ড্রভুক্তির অন্তঃপাতী অধঃপত্তনমণ্ডলে কৌশাম্বী অষ্টগচ্ছমণ্ডলসংবদ্ধ উপ্যলিকা বা উপ্পলিকা গ্রাম, মধ্যদেশবিনির্গত উত্তর রাঢ়ের সিদ্ধলগ্রামবাসী পীতাম্বরদেবশর্ম্মার প্রপৌত্র, জগন্নাথ দেবশর্ম্মার পৌত্র, বিশ্বরূপ দেবশর্ম্মার পুত্র, শান্ত্যাগারাধিকৃত রামদেবশর্ম্মাকে প্রদান করিয়াছিলেন[৬৮]। ভোজবর্ম্মা অথবা তাঁহার পুত্র রামপালের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছিলেন। ‘রামচরিত’ হইতে অবগত হওয়া যায় যে, বর্ম্মবংশীয় পূর্ব্বদেশের জনৈক রাজা নিজের পরিত্রাণের জন্য, নিজের হস্তী ও রথ প্রভৃতি রামপালকে উপহার দিয়া তাঁহার আরাধনা করিয়াছিলেন[৬৯]। বর্ম্মবংশীয় নরপতি কর্ত্তৃক রামপালের আশ্রয়গ্রহণের দুইটি কারণ অনুমান করা যাইতে পারে; প্রথম রামপাল কর্ত্তৃক বঙ্গ আক্রমণ এবং দ্বিতীয় সেনবংশীয় সামন্তসেন কর্ত্তৃক বঙ্গদেশ অধিকার। বৃদ্ধ বয়সে রামপালদেব জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজ্যপালদেবের হস্তে রাজ্যভার অর্পণ করিয়া রামাবতীতে বাস করিয়াছিলেন[৭০]। মুদ্গগিরি রা মুঙ্গের অবস্থানকালে রামপালদেব তাঁহার মাতুল মথনদেবের মৃত্যু সংবাদ পাইয়াছিলেন[৭১]। মথনদেবের মৃত্যু সংবাদ শ্রবণ করিয়া রামপালদেব ব্রাহ্মণগণকে বহু ধন দান করিয়া গঙ্গা-সলিলে প্রবেশ পূর্ব্বক প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন[৭২]। তিনি বোধ হয়, পঞ্চত্বারিংশদ্বর্ষকাল গৌড়-সিংহাসনে আসীন ছিলেন; কারণ, তাঁহার ৪২শ রাজ্যাঙ্কে প্রতিষ্ঠিত একটি মূর্ত্তি আবিষ্কৃত হইয়াছে।

 তিব্বতদেশীয় ইতিহাসকার লামা তারানাথ লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন যে, রামপালদেব ষট্চত্বারিংশ বৎসরকাল গৌড়ে রাজত্ব করিয়াছিলেন[৭৩]; ইহা অসম্ভব নহে; কারণ, তাঁহার ৪২শ রাজ্যাঙ্কের খোদিতলিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে। গৌড়ে মুসলমান অধিকারকালে লিখিত “শেখ-শুভোদয়া” নামক সংস্কৃত গ্রন্থ হইতে অবগত হওয়া যায় যে, রামপাল “শাকে যুগ্মবেণুরন্ধ্রগতে” ভাগীরথীগর্ভে অনশনে প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন[৭৪]। অদ্যাবধি রামপালদেবের তিন পুত্রের নাম আবিষ্কৃত হইয়াছে। তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র রাজ্যপাল বোধ হয়, পিতার জীবিতকালেই পরলোক গমন করিয়াছিলেন; কারণ, মনহলিতে আবিষ্কৃত মদনপালদেবের তাম্রশাসনে রাজ্যপালের নাম নাই। রামপালের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুত্র, কুমারপাল ও মদনপাল যথাক্রমে গৌড়-সিংহাসনে উপবেশন করিয়াছিলেন। রামপালের মাতুল মথনদেব এবং তাঁহার ভ্রাতা সুবর্ণদেব, তাঁহাদিগের পুত্র কাহ্নুরদেব এবং শিবরাজদেবের নাম পূর্ব্বেই উল্লিখিত হইয়াছে। ‘রামচরিত’-রচয়িতা সন্ধ্যাকরনন্দীর পিতা প্রজাপতিনন্দী রামপালের মহাসান্ধিবিগ্রহিক ছিলেন[৭৫] এবং তৃতীয় বিগ্রহপালের প্রধান মন্ত্রী যোগদেবের পুত্র বোধিদেব তাঁহার প্রধান অমাত্য ছিলেন[৭৬]

 রামপালদেবের দ্বিতীয় রাজ্যাঙ্কে প্রতিষ্ঠিত একটি তারামূর্ত্তি প্রাচীন উদ্দণ্ডপুর দুর্গমধ্যে আবিষ্কৃত হইয়াছে, এই মূর্ত্তিটি এক্ষণে কলিকাতার চিত্রশালায় রক্ষিত আছে[৭৭]। রামপালদেবের পঞ্চদশ রাজ্যাঙ্কে মগধ-বিষয়ে নালন্দায় গ্রহণকুণ্ড নামক জনৈক লেখক কর্ত্তৃক একখানি অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা গ্রন্থ লিখিত হইয়াছিল:—

 “মহারাজাধিরাজপরমেশ্বরপরমভট্টারকপমসৌগত শ্রীমদ্রামপালদেবপ্রবর্দ্ধমানবিজয়রাজ্যে পঞ্চদশমে সম্বৎসরে অভিলিখ্যমানে যত্রাঙ্কেনাপি সম্বৎ ১৫ বৈশাক্ষ দিনে কৃষ্ণ সপ্তম্যাং ৭ অস্তি মগধবিষয়ে শ্রীনালন্দাবস্থিত লেখক গ্রহণকুণ্ডেন ভট্টারিকা প্রজ্ঞাপারমিতা লিখিতা ইতি”[৭৮]। রামপালদেবের ৪২শ রাজ্যাঙ্কে রাজগৃহবিনির্গত এত্রহাগ্রামবাসী বণিক্ সাধু সহরণ একটি বোধিসত্ত্বমূর্ত্তি প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন[৭৯]। এই মূর্ত্তিটি পাটনা জেলার গিরিয়েক পর্ব্বতের নিকটে চণ্ডীমৌ গ্রামে আবিষ্কৃত হইয়াছিল[৮০] এবং ইহা এক্ষণে কলিকাতার চিত্রশালায় রক্ষিত আছে। সন্ধ্যাকরনন্দীবিরচিত রামচরিত আবিষ্কৃত হইবার পূর্ব্বে রামপালদেবের রাজত্বকালের কোন ঘটনাই বিদিত ছিল না। ডাক্তার ভিনিস্ (Dr. A. Venis) রামপালের মধ্যম পুত্র কুমারপালের মন্ত্রী, কামরূপ-রাজ বৈদ্যদেবের তাম্রশাসন সম্পাদনকালে রামপালের রাজত্বকালের ঘটনাসমূহের বিবরণের অভাব অনুভব করিয়াছিলেন[৮১]। রামচরিত আবিষ্কৃত হইয়া প্রকাশিত হইবার পরে রামপালদেবের রাজত্বকাল নির্ণয় এবং সেই সময়ের ঘটনাবলীর বিবরণ সংগ্রহ করা সম্ভব হইয়াছে।

 ‘রামচরিত’ মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্ত্তৃক ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে নেপালে আবিষ্কৃত হইয়াছিল। ১৯০০ খৃষ্টাব্দে শাস্ত্রী মহাশয় এসিয়াটীক সোসাইটীর কার্য্য-বিবরণীতে ‘রামচরিতে’র সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রকাশ করিয়াছিলেন[৮২]। শাস্ত্রী মহাশয় নেপাল হইতে সম্পূর্ণ মূলগ্রন্থ এবং প্রায় অর্দ্ধগ্রন্থের টীকা এসিয়াটীক সোসাইটীর জন্য আনয়ন করিয়াছেন। এই গ্রন্থ এখন কলিকাতার এসিয়াটীক সোসাইটীর পুস্তকাগারে রক্ষিত আছে। ইহার দ্বিতীয় অধ্যায়ের পঞ্চত্রিংশৎ শ্লোক পর্য্যন্ত টীকা আছে। ইহা ‘রাঘব পাণ্ডবীয়ের’ ন্যায় দ্বর্থ্যবাচক কাব্য। প্রত্যেক শ্লোকের দুইটি টীকা আছে, একটি রামপক্ষে ও অপরটি রামপাল পক্ষে। যে অংশের টীকা পাওয়া যায় নাই, সেই অংশ হইতে ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ করা অতীব দুরূহ। ‘রামচরিত’ মূল ও টীকা তালপত্রে খৃষ্টীয় দ্বাদশ অথবা ত্রয়োদশ শতাব্দীর অক্ষরে লিখিত। মূল গ্রন্থ অপেক্ষা টীকার অক্ষর প্রাচীন বলিয়া বোধ হয়। ‘রামচরিতে’র টীকা ঐতিহাসিকের নিকটে ‘রামচরিত’ অপেক্ষা মূল্যবান গ্রন্থ। টীকা আবিষ্কৃত না হইলে ঐতিহাসিকগণ ‘রামচরিতে’র এত আদর করিতেন কি না সন্দেহ। এই টীকাতেই রামপালের রাজত্বকালের প্রধান প্রধান ঘটনার বিবরণ লিপিবদ্ধ হইয়াছে। ‘রামচরিতে’র প্রথম তিন অধ্যায়ে রামপালের রাজকালের ঘটনা এবং চতুর্থ অধ্যায়ে কুমারপাল, তৃতীয় গোপাল এবং মদনপালদেবের রাজ্যকালের ঘটনাসমূহ বিবৃত হইয়াছে। রামায়ণের উত্তরাকাণ্ডের ন্যায় ‘রামচরিতে’র চতুর্থ অধ্যায় “রামোত্তরচরিত” নামে পরিচিত। খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর শেষার্দ্ধে রামপালকে রামের সহিত তুলনা করা কবিগণের মধ্যে সংক্রামক হইয়া উঠিয়াছিল। বৈদ্যদেবের প্রশস্তি রচয়িতা মনোরথও এই উপমা ব্যবহার করিয়াছেন। “সেই প্রবলপরাক্রমশালী নরপালের রামপাল নামক এক পুত্র জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি পাল-কুলসমুদ্রোত্থিত শীতকিরণ চন্দ্ররূপে প্রতিভাত এবং সাম্রাজ্যলাভে খ্যাতিভাজন হইয়াছিলেন। রামচন্দ্র যেমন অর্ণব লঙ্ঘন করিয়া, রাবণবধান্তে জনক-নন্দিনী লাভ করিয়াছিলেন, রামপালদেবও সেইরূপ যুদ্ধার্ণব সমুত্তীর্ণ হইয়া ভীম নামক ক্ষৌণীনায়কের বধসাধন করিয়া জনকভূমি বরেন্দ্রীলাভে ত্রিজগতে আত্মযশঃ বিস্তৃত করিয়াছিলেন[৮৩]। সম্ভবতঃ সন্ধ্যাকরনন্দী স্বয়ং ‘রামচরিতের’ টীকা রচনা করিয়াছিলেন; কারণ, অপরের পক্ষে এই টীকা রচনা অসম্ভব। শ্লোক মধ্যে একটি শব্দ দ্বারা যে সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহা গ্রন্থকার ব্যতীত অপরের নিকটে দুর্ব্বোধ্য। সন্ধ্যাকরনন্দী পৌণ্ড্রবর্দ্ধনপুরের অধিবাসী ছিলেন[৮৪]। তাঁহার পিতা প্রজাপতিনন্দী রামপালের মহাসান্ধিবিগ্রহিক ছিলেন[৮৫]; সুতরাং সন্ধ্যাকরনন্দী রামপালের রাজ্যকালের ঘটনাসমূহ যতদূর পর্য্যন্ত অবগত ছিলেন, তাহা অপরের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

 রামপালের রাজধানী রামাবতী নগরীর ধ্বংসাবশেষ অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয় নাই। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় শব্দগত সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করিয়া ঢাকা জেলার অন্তর্গত রামপালকে রামাবতী বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন[৮৬]। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু বগুড়া জেলায় মহাস্থানগড়ের নিকট রামপুর নামক স্থানে রামাবতীর অবস্থান নির্দ্দেশ করিয়াছেন[৮৭]। প্রাচীন রামাবতী, সরকার জন্নতাবাদ বা গৌড়ের সীমামধ্যে অবস্থিত ছিল এবং তাহার ধ্বংসাবশেষ কখনই ঢাকা অথবা বগুড়া জেলায় আবিষ্কৃত হইতে পারে না[৮৮]। বগুড়া, সরকার ঘোড়াঘাটে[৮৯] এবং সরকার বাজুহায়[৯০] অবস্থিত এবং রামপাল, সরকার সোণারগাঁওয়ে[৯১] অবস্থিত।

 তিব্বতদেশীয় ইতিহাসকার লামা তারানাথের মতানুসারে যক্ষপাল নামক একজন রাজা রামপালের সিংহাসনের সমাধিকারী ছিলেন[৯২]। গয়ায় যক্ষপাল নামক একজন নরপতির একখানি শিলালিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে। ইহা হইতে অবগত হওয়া যায় যে, শূদ্রকের পৌত্র, বিশ্বাদিত্যের পুত্র, যক্ষপাল সূর্য্যদেবের জন্য একটি মন্দির নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন[৯৩]। যক্ষপালের পিতা বিশ্বাদিত্য নয়পালদেবের পঞ্চদশ রাজ্যাঙ্কে জনার্দ্দন ও গদাধরের মন্দির এবং তৃতীয় বিগ্রহপালদেবের পঞ্চম রাজ্যাঙ্কে বটেশ ও প্রপিতামহেশ্বর মন্দির নির্ম্মাণ করাইয়াছিলেন। তারানাথ যক্ষপালকে রামপালের পুত্ররূপে বর্ণনা করিয়া গিয়াছেন। অনুমান হয়, যক্ষপাল তৃতীয় বিগ্রহপালের মৃত্যুর পরে কিয়ৎকাল স্বাধীনতা অবলম্বন করিয়াছিলেন, এবং সেই জন্যই তিনি গয়ার শিলালিপিতে নরেন্দ্র উপাধিতে অভিহিত হইয়াছেন।

 গয়া জেলার দক্ষিণ-পূর্ব্বাংশের যে বনময় প্রদেশ এখন হাজারীবাগ নামে পরিচিত সেই প্রদেশে খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীর শেষ ভাগ হইতে মানবংশীয় নরপতিগণ রাজ্য করিতেন। এই মানবংশের প্রথম পুরুষ উদয়মান। তিনি খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীর শেষ ভাগে—এই রাজ্যস্থাপন করিয়াছিলেন। উদয়মান ও তাঁহার দুই ভ্রাতা শ্রীধৌতমান এবং অজিতমান বণিক ছিলেন এবং মগধ-রাজ আদিসিংহের রাজ্যকালে অযোধ্যা হইতে তাম্রলিপ্তি বন্দরে আসিয়াছিলেন। প্রত্যাবর্ত্তন কালে উদয়মান মগধ-রাজ আদিসিংহকে সাহায্য করায় তাঁহার প্রিয়পাত্র হইয়াছিলেন। এই সময়ে উদয়মান আদিসিংহের অনুমতি অনুসারে ভ্রমর শাল্মলি গ্রামের অধিপতি হইয়াছিলেন[৯৪]। পাল-রাজগণের অভ্যুদয় কালে নিশ্চয়ই তাঁহাদিগের অধীনতা স্বীকার করিতেন। ১০৫৯ শকাব্দে মগব্রাহ্মণ গঙ্গাধর একটি পুষ্করিণী খনন করাইয়া ছিলেন, এই পুস্করিণীর শিলালেখে উল্লিখিত আছে যে, এই সময়ে (১১৩৭ খৃষ্টাব্দে) রুদ্রমান নামক মানবংশীয় একজন নরপতি মগধের অধিপতি ছিলেন[৯৫]। গঙ্গাধরের কুল প্রশস্তিতে বর্ণমান নামক মানবংশীয় রুদ্রমানের পূর্ব্ববর্ত্তী জনৈক মগধেশ্বরের উল্লেখ আছে[৯৬]। বর্ণমান এবং রুদ্রমান সম্ভবতঃ উদয়মানের বংশজাত। মদনপাল গৌড়নগর হইতে বিজয়সেন কর্ত্তৃক তাড়িত হইলে মানবংশীয় নরপতিগণ সম্ভবতঃ স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়াছিলেন। এই সময়ে গয়ার শাসন-কর্ত্তা বিশ্বাদিত্যের পুত্র যক্ষপালের শীতলা মন্দিরের শিলালিপিতেও কোন পালবংশীয় রাজার নাম নাই। গোবিন্দপুরে আবিষ্কৃত গঙ্গাধরের কুলপ্রশস্তিতে এবং গয়ার শীতলা দেবী মন্দিরে আবিষ্কৃত যক্ষপালের শিলালিপিতে রুদ্রমান এবং যক্ষপাল[৯৭] নরেন্দ্র আখ্যায় অভিহিত হইয়াছেন। কোন্ সময়ে মানবংশীয় রাজগণের বা যক্ষপালের বংশধরগণের অধিকার লুপ্ত হইয়াছিল তাহা নির্দ্দিষ্ট হয় নাই।

 ভোজবর্ম্মদেবের বেলাব তাম্রশাসন হইতে অবগত হওয়া যে, যদুবংশে বীরশ্রী এবং হরি বহুবার প্রত্যক্ষবৎ দৃষ্ট হইয়াছিলেন[৯৮]। এই স্থানে প্রশস্তিকার ইঙ্গিতে জানাইয়াছেন যে, যাদব-বর্ম্মবংশে হরিবর্ম্ম নামে একজন রাজা জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। হরিবর্ম্ম নামক একজন রাজার অস্তিত্ব সম্বন্ধে অনেকগুলি প্রমাণ আবিষ্কৃত হইয়াছে। একখানি শিলালিপি, একখানি তাম্রশাসন এবং দুইখানি হস্তলিখিত গ্রন্থ হইতে হরিবর্ম্মদেবের অস্তিত্বের কথা অবগত হওয়া যায়। শিলালিপিখানি উড়িষ্যা প্রদেশের পুরী জেলায় ভুবনেশ্বর গ্রামে অনন্তবাসুদেব-মন্দির-প্রাঙ্গণে আবিষ্কৃত হইয়াছিল, ইহা এক্ষণে অনন্তবাসুদেব-মন্দিরের প্রাচীরগাত্রে সংলগ্ন আছে। ইহা হরিবর্ম্মদেবের মন্ত্রী ভবদেবভট্টের কুলপ্রশস্তি। ইহা হইতে অবগত হওয়া যায় যে, সাবর্ণগোত্রীয় রাঢ়প্রদেশের সিদ্ধল গ্রামবাসী শ্রোত্রীয়বংশে প্রথম ভবদেবভট্ট জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তিনি গৌড়েশ্বরের নিকট হইতে হস্তিনীভিট্ট গ্রাম প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ভবদেবের বৃদ্ধ প্রপৌত্র আদিদেব বঙ্গরাজের মহামন্ত্রী-মহাপাত্র-মহাসান্ধিবিগ্রহিক ছিলেন। আদিদেবের পৌত্র ‘বালবলভীভুজঙ্গ’ উপাধিধারী ভবদেবভট্ট দীর্ঘকাল হরিবর্ম্মদেবের মন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁহার পরে তাঁহার পুত্রেরও উপদেশদাতা ছিলেন। দ্বিতীয় ভবদেভট্ট রাঢ় দেশে একটি জলাশয় খনন করাইয়াছিলেন এবং ভুবনেশ্বরে নারায়ণ, অনন্ত ও নরসিংহমূর্ত্তি প্রতিষ্ঠা করাইয়াছিলেন[৯৯]। এই শিলালিপি সম্পাদনকালে স্বর্গীয় ডাক্তার কিলহর্ণ বলিয়াছিলেন যে, অক্ষরের আকার দেখিয়া ইহাকে ১২০০ খৃষ্টাব্দের শিলালিপি বলিয়া বোধ হয়[১০০]। এই উক্তির উপরে নির্ভর করিয়া শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ বলিয়াছেন, “কিলহর্ণ-কথিত ঠিকঠাক ১২০০ খৃষ্টাব্দ ভট্টভবদেবের প্রশস্তির কাল না হইলেও, অক্ষরের হিসাবে হরিবর্ম্মার তাম্রশাসন এবং ভবদেবের প্রশস্তি দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্ব্বে ঠেলিয়া লওয়া যায় না[১০১]। বিগত চতুর্দ্দশ বর্ষের মধ্যে আর্য্যাবর্ত্তের উত্তর-পূর্ব্বার্দ্ধে বহু নূতন খোদিতলিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে, বহু রাজ-বংশের কাল নির্ণীত হইয়াছে এবং ইতিহাসের বহু পরিবর্ত্তন হইয়াছে। প্রাচীন ভারতীয় অক্ষর-তত্ত্বের আলোচনাকালে এখন আর বুলার অথবা কিলহর্ণের নাম গ্রহণ করিয়া তাঁহাদিগের অতি প্রাচীন সিদ্ধান্তগুলি প্রমাণরূপে গ্রহণ করিলে চলিবে না। শিলালিপির সহিত শিলালিপি এবং তাম্রশাসনের সহিত তাম্রশাসনের তুলনা করিয়া দেখিলেই স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায় যে, বিহারে আবিষ্কৃত রামপালের দ্বিতীয় এবং দ্বিচত্বারিংশ রাজ্যাঙ্কের শিলালিপি অপেক্ষা ভট্টভবদেবের প্রশস্তি প্রাচীন এবং কমৌলিতে আবিষ্কৃত বৈদ্যদেবের তাম্রশাসন অপেক্ষ হরিবর্ম্মদেবের তাম্রশাসনের অক্ষর প্রাচীন। শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, ব্রাহ্মণকাণ্ডের দ্বিতীয়ভাগে হরিবর্ম্মদেবের তাম্রশাসনের একটি প্রতিলিপি ও উদ্ধৃত পাঠ প্রকাশ করিয়াছেন। শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ, বসুজ মহাশয়ের পাঠোদ্ধার সম্বন্ধে যে মত প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা সম্পূর্ণ সত্য; উদ্ধৃত পাঠ আনুমানিক[১০২]। ১৯০৬ খৃষ্টাব্দে স্বর্গীয় অধ্যাপক হরিনাথ দে এই তাম্রশাসন খানি আমাকে কয়েক দিনের জন্য প্রদান করিয়াছিলেন। সেই সময়ে আমি বসুজ মহাশয়ের উদ্ধৃত পাঠ পরীক্ষা করিবার সুযোগ পাইয়াছিলাম। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর যত্নে নেপালে হরিবর্ম্মদেবের রাজত্বকালে লিখিত দুইখানি হস্তলিখিত গ্রন্থ আবিষ্কৃত হইয়াছে। প্রথমখানি অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা, ইহা হরিবর্ম্মদেবের ঊনবিংশ রাজ্যাঙ্কে লিখিত হইয়াছিল। দ্বিতীয়খানি কালচক্রযানটীকা, ইহার নাম বিমলপ্রভা, ইহা হরিবর্ম্মদেবের ৩৯শ রাজ্যাঙ্কে লিখিত হইয়াছিল। নূতন আবিষ্কার না হইলে হরিবর্ম্মদেবের রাজত্বকাল নির্ণীত হইতে পারে না। তবে ইহা স্থির যে, হরিবর্ম্মদেব শ্যামলবর্ম্মা অথবা ভোজবর্ম্মার পরবর্ত্তী কালে আবির্ভূত হন নাই এবং বজ্রবর্ম্মা বা জাতবর্ম্মার পূর্ব্ববর্ত্তী নহেন। শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, শ্রীযুক্ত রাধাগোবিন্দ বসাক ও শ্রীযুক্ত নলিনীকান্ত ভট্টশালীর[১০৩] মতে হরিবর্ম্মা ভোজবর্ম্মার পরবর্ত্তী এবং শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসুর মতে তিনি বজ্রবর্ম্মারও পূর্ব্ববর্ত্তী[১০৪]

 রামচরিত-রচয়িতা সন্ধ্যাকরনন্দীর জাতি সম্বন্ধে পূর্ব্বে শ্রীযুক্ত অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের সহিত ‘সাহিত্য’ পত্রে বহু তর্ক করিয়াছি। তর্ককালে প্রবীণ ঐতিহাসিক মৈত্রেয় মহাশয় অত্যন্ত অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করিয়াছিলেন; সেই জন্যই অধিক কথা বলিতে পারি নাই। মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় রামচরিত সম্পাদনকালে বলিয়াছিলেন যে, সন্ধ্যাকরনন্দী বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ (Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III, p. 1.)। মৈত্রেয় মহাশয় সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে, সন্ধ্যাকরনন্দীকে কায়স্থ বলিয়া স্থির করাই সহজ ও যুক্তিসঙ্গত। (সাহিত্য, ১৩১৯, ২৩শ বর্ষ, পৃঃ ৯৪৬)। মৈত্রেয় মহাশয় ‘করণ’ শব্দ কায়স্থবাচক মনে করিয়াছেন। কোষগ্রন্থে যে অর্থই থাকুক, ‘করণ’ শব্দে যে জাতি বুঝায় না, তাহার প্রমাণ মৈত্রেয় মহাশয় প্রবর্ত্তিত বরেন্দ্র-অনুসন্ধান-সমিতির চেষ্টাতেই আবিষ্কৃত হইয়াছে। সামন্ত-রাজ লোকনাথের তাম্রশাসনে দেখিতে পাওয়া যায় যে, শ্রীপট্ট প্রাপ্ত ‘করণ’ লোকনাথ ‘শূদ্রার গর্ভে ব্রাহ্মণের ঔরসে জাত পারশবের দৌহিত্র’ ছিলেন। (সাহিত্য, ১৩২১, জ্যৈষ্ঠ, পৃঃ ১৪৪)। লোকনাথকে কায়স্থ বলিতে বোধ হয়, কেহই ভরসা করিবেন না।

 রামচরিতে সন্ধ্যাকরনন্দীকে ‘কলিকালবাল্মীকি’ উপাধিতে ভূষিত করা হইয়াছে:—

অবদানং রঘুপরিবৃঢ়গৌড়াধিপ-রামদেবয়োরেতৎ।
কলিযুগরামায়ণমিহ কবিরপি কলিকালবাল্মীকিঃ॥
—রামচরিত, কবি-প্রশস্তি, ১১।

 লামা তারানাথ তাঁহার বৌদ্ধধর্ম্মের ইতিহাসের শেষভাগে রামচরিতের ন্যায় অনেকগুলি প্রাচীন ঐতিহাসিক গ্রন্থের নামোল্লেখ করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন যে, মগধবাসী পণ্ডিত ক্ষেমেন্দ্রভদ্র প্রণীত একখানি গ্রন্থে রামপালের রাজত্বকাল পর্য্যন্ত সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ প্রদত্ত আছে। ক্ষত্রিয়জাতীয় পণ্ডিত ইন্দ্রদত্ত প্রণীত ‘বুদ্ধপুরাণ’ নামক গ্রন্থে সেনবংশের প্রথম চারি জন রাজার ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে। এতদ্ব্যতীত তিনি ব্রাহ্মণজাতীয় পণ্ডিত ভটঘটী প্রণীত ‘গুরুপরম্পরার ইতিহাস’ নামক গ্রন্থ অবলম্বনে স্বীয় গ্রন্থ রচনা করিয়াছিলেন। এই সকল গ্রন্থের মধ্যে একখানিও অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না।



পরিশিষ্ট (ঝ)

বর্ম্ম-রাজবংশ:—

(ক)

 
বজ্রবর্ম্মা
 
 
 
 
 
 
 
জাতবর্ম্মা
 
বীরশ্রী
 
 
 
 
 
 
 
 
শ্যালমবর্ম্মা
 
মালব্যদেবী
 
 
 
 
 
 
 
 
ভোজবর্ম্মা
 
 

(খ)

 
জ্যোতির্বর্ম্মা
 
 
 
 
 
 
 
হরিবর্ম্মা
 
 

পাল, গাহডবাল, বর্ম্ম, ছিক্কোর, রাষ্ট্রকূট ও কলচুরিবংশের রাজগণের সম্বন্ধ।

 
কান্যকুব্জের
গাহডবালবংশ
পীঠীর ছিক্কোর
বংশ
মগধের রাষ্ট্রকূট
বংশ
পালবংশ
 
দাহলের কলচুরি
বা চেদিবংশ
 
বঙ্গের যাদববংশ
 
 
 
প্রথম মহীপালগাঙ্গেয়
 
 
 
 
 
 
 
 
 
?নয়পাল
 
কর্ণ্ণবজ্রবর্ম্মা
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
বল্লভরাজমহন বা
মথন
সুবর্ণকন্যা
 
তৃতীয় বিগ্রহপাল
 
কন্যা
(যৌবনশ্রী)
যশঃকর্ণকন্যা (বীরশ্রী)
 
জাতবর্ম্মা
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
চন্দ্রদেবদেবরক্ষিত
 
শঙ্করদেবীকাহ্নুরদেবরামপাল২য় মহীপাল২য় শূরপালগয়কর্ণশ্যামলবর্ম্মা
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
গোবিন্দচন্দ্র
 
কুমারদেবীরাজ্যপালকুমারপালমদনপাল
 
 
নরসিংহভোজবর্ম্মা
 
 
 
 
 
 
 
বিজয়চন্দ্রতৃতীয় গোপাল
 
 
 
 
 
 
জয়চ্চন্দ্র
 
 
 
 
 
 
হরিশ্চন্দ্রগোবিন্দপাল

  1. Watters’ On Yuan Chwang, Vol. I, p. 248.
  2. Epigraphia Indica, Vol. I, pp. 12-14.
  3. অভবদথ কদাচিদ্‌যাদবীনাং চমূনাং
    সমরবিজয়যাত্রামঙ্গলং বজ্রবর্ম্মা।
    শমন ইব রিপূণাং সোমবদ্বান্ধবানাং
    কবিরপি চ কবীনাং পণ্ডিতঃ পণ্ডিতানাং॥
    —বেলাব গ্রামে আবিষ্কৃত ভোজবর্ম্মার তাম্রশাসন; সাহিত্য, ১৩১৯, পৃঃ ৩৮২;
    Journal and Proceedings of the Asiatic Society of Bengal, Vol. X, p. 126;
    Epigraphia Indica, Vol. XII, pp. 39-41. 

  4. গৃহ্ণন্ বৈণ্যপৃথুশ্রিয়ং পরিণয়ন্ কর্ণ্ণস্য বীরশ্রিয়ং
    যোঙ্গেষু প্রথয়ঞ্ছ্রিয়ং পরিভবংস্তাং কামরূপশ্রিয়ম্।
    নিন্দন্দিব্যভুজশ্রিয়ং বিকলয়ন্ গোবর্দ্ধনস্য শ্রিয়ং
    কুর্বন্ শ্রোত্রিয়সাচ্ছ্রিয়ং বিততবান্ যাং সার্বভৌমশ্রিয়ম্॥
    —Journal of the Asiatic Society of Bengal. New Series, Vol. X, p. 127. 

  5. “...দিব্যাহ্বয়েন দিব্যনাম্না দিব্বোকেন...।”—রামচরিত, ১।৩৮, টীকা।
  6. “...বর্দ্ধন ইতি কৌশাম্বীপতির্দ্বোরপবর্দ্ধনঃ...।”—রামচরিত, ২।৬, টীকা।
  7. তন্নন্দনশ্চন্দন-বারি-হারি
    কীর্ত্তিপ্রভানন্দিত-বিশ্বগীতঃ।
    শ্রীমান্ মহীপাল ইতি দ্বিতীয়ো
    দ্বিজেশমৌলিঃ শিববদ্বভূব॥ ১৩
    —গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১৫১।

  8. প্রথমমিত্যাদি। প্রথমং পূর্ব্বং পিতরি বিগ্রহপাল উপরতে সতি মহীপালে ভ্রাতরি ক্ষমাভারং ভূভারং বিভ্রতি সতি অনীতিকারম্ভরতে অনীতিকে নীতিবিরুদ্ধে আরম্ভে উদ্যমে রতে সতি মহীপালঃ ষাড্গুণ্যশল্যস্য মন্ত্রিণো গুণিতমবগুণয়ন্ উপষ্টম্ভার ভটীমাত্রাদীষৎগ্রহণেন......।
    —রামচরিত, ১।৩১, টীকা।
  9. অন্যত্র। অপরেণ ভ্রাত্রা সুরপালেন সহ কষ্টাগারং কারাগৃহং মহদবনং রক্ষণং যত্র দুর্দ্দৈবাধীনে নবা নূতনায়সী লোহসম্বন্ধিনী কুশী নিগড়রূপা সা লতেব জঙ্ঘাতরু বিদূরবেষ্টনাৎ তয়া ভেদিনী বিদীর্ণে অকুচে অংসকোটনী জানুনী অষ্ঠীবতী যস্য।
    —রামচরিত, ১।৩৩, টীকা।
  10. অন্যত্র। বিজনে স্থানমবস্থানং তেন ব্যূহো বিগত ঊহো যস্য তস্মিন্ রামপালে ভূতং সত্যং নয়ো নীতং তয়োররক্ষণে যুক্তঃ প্রসক্তো দায়াদো মহীপালো যস্য মায়া লক্ষ্ম্যা মৃগতৃষ্ণয়া মমায়ং লক্ষ্মীং গ্রহীষ্যতীতি মুগ্ধতয়া অন্তরিতে তিরোহিতে ভূমীগৃহাদিগুপ্তক্ষিপ্তে রামপালে সতি।
    —রামচরিত, ১।৩৬, টীকা।
  11. অন্যত্র। মায়িনাং খলানাং ধ্বনিনা অয়ং রামপালঃ ক্ষমোঽধিকারী সর্ব্ব সম্মতঃ ততশ্চ দেবস্য রাজ্যং গ্রহীষ্যতীতি সূচনয়া শঙ্কিতবিপদঃ মামসৌ হনিষ্যতীতি শঙ্কিতাবিপদ্যেন তস্য ভুবোর্ভর্ত্তুর্ম্মহীপালস্য প্রভূতায়া বহুতরায়া নিরাকৃতিপ্রযুক্তিতঃ শাঠ্যপ্রয়োগাৎ উপায়বধচেষ্টয়া তথা ত্বনাকারেনাপন্নে দুর্গতে কনিষ্ঠে ভ্রাতরি রামপালে রক্ষিতরি ভাব্যর্থে।
    —রামচরিত, ১।৩৭, টীকা।
  12. .........মিলিতানন্তসামন্তচক্রচতুরচতুরঙ্গবলবলয়িতবহলমদকলকরিতুরগ-তরণিচরণচারুভটচমূসম্ভারসংরম্ভনির্ভরভয়ভীতরিক্ত-মুক্ত-কুন্তলপলায়মানবিকলসকল সৈন্যেন স্বতঃ ক্ষয়াতিশয়মাসেদুষা সহ সহসৈব বলদ্বিপর্য্যয়কোটিকষ্টতরসমরমারভ্য নিরমজ্জত। রামাধিকারিতাং রামপালস্য তস্মিন্ সময়ে নিগড়বদ্ধস্য আধির্ম্মানসী ব্যথা তৎকরণশীলতাং দধতি এতদগ্রে স্ফুটয়িষ্যতি।
    —রামচরিত, ১।৩১, টীকা; রামচরিত, ১।২৯, টীকা।
  13. তস্যাভূদনুজো মহেন্দ্রমহিমা ক (স্ক) ন্দঃ প্রতাপশ্রিয়া-
    মেকঃ সাহস-সারথির্গুণনয়ঃ শ্রীশূরপালো নৃপঃ [।]
    যঃ স্বচ্ছন্দ-নিসর্গ্গ-বিভ্রমভরা-[ন্] বিভ্রৎ-[সু] সর্ব্বায়ুধ-
    প্রাগল্‌ভ্যেন মনঃসু বিস্ময়-ভয়ং সদ্যস্ততান দ্বিষাং॥ ১৪
    —গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১৫১।

  14. Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, vol. III, p. 14.
  15. অন্যত্র সা ভূমিঃ অভিখ্যয়া নাম্না বরেন্দ্রী ত্রস্তা অস্য দিব্বোকস্য যো অনুজো রূদোকঃ তদীয়তনয়স্য ভীমনাম্নঃ রন্ধ্রপ্রহারিণঃ ক্রিয়াক্ষমস্য অলংকর্ম্মীণস্য যথোক্তক্রমেণ রক্ষণীয়াভূৎ। স তত্র ভূপতিঃ বর্ত্তমানঃ॥
    —রামচরিত, ১।৩৯।
     কৈবর্ত্তনায়ক দিব্বোক সম্ভবতঃ প্রথমে পাল-রাজগণের ভৃত্য ছিলেন। “অতএব কান্তা কমনীয়া দিব্যাহ্বয়েন দিব্যনাম্না দিব্বোকেন মাংসভুজা লক্ষ্ম্যা অংশং ভুঞ্জানেন ভৃত্যেনোচ্চৈর্দশকেন উচ্চৈর্মহতী দশা অবস্থা যস্য অত্যুচ্ছ্রিতেনেত্যর্থঃ দস্যুনা শত্রুণা তদ্ভাবাপন্নত্বাৎ অবশ্যকর্ত্তব্যতয়া আরব্ধং কর্ম্মং ব্রতং ছদ্মনি ব্রতী।
    —রামচরিত, ১।৩৮ টীকা।
  16. অতিশয়েন বিনাশী বিনাশিতমঃ অরির্যাভ্যাং যয়োর্বা তৌ চ সমুচ্চয়ে ভুজৌ বিপক্ষাক্ষিপ্তভুজ্যমানভূমিত্বাৎ বিফলৌ দধৎ। উপগতা ইষ্টতমা মিত্রাণি মাতৃবন্ধবো যস্য সসুতঃ, ধাম শৌর্য্যং স্বং শূন্যং মিথ্যা কলিতবান্।
    —রামচরিত, ১।৪০ টীকা।
  17. অন্যত্র। সখ্যা অমাত্যেন সূনুনা সুতেন চ সহ কৃতৌ পরমৌ মহান্তৌ উহাপৌহৌ ইদং কর্ত্তব্যং ইদং ন কর্ত্তব্যং ইত্যাদিকৌ যেন স্থিরতত স্থিরসম্বিতঃ কৃতনিশ্চয়ঃ উত্থানং উদ্যমং লব্ধবান্॥
    —রামচরিত, ১।৪২ টীকা।
  18. রামপালেন সামন্তচক্রং প্রণিনীষুনা পৃথ্বী পর্য্যটিতা। তত্র ব্যালা আগ্রহারিকা বৈষয়িকা আটবিকা অটবীয়সামন্তাঃ উর্ব্বীভৃদ্রাজা। ইষ্টার্থোঽভিলষিতার্থঃ।
    —রামচরিত, ১।৪৩ টীকা।
  19. অন্যত্র সহ সম্বদ্ধার্থং সামন্তব্রজং বক্ষ্যমাণনায়কং অন্বয়স্যাভ্যুদয়স্য ভবনং অবিতনয়ং গূঢ়ানীতিং মিত্রকোটিপ্রবিষ্টং স রামপালোঽনুমেনে॥
    —রামচরিত, ১।৪৪ টীকা।
  20. দেবেনভুবো বিপুলদ্রবিণস্য চ দানতঃ সুখাচক্রে।
    অমুনা হরিনাগপদাতিলব্ধবহলত্রভাবোঽসৌ॥

     অন্যত্র। অমুনা দেবেন রাজ্ঞাঽসৌ সামন্তব্রজঃ হরয়োঽশ্বা নাগা হস্তিনঃ পদাতয়ঃ এভির্লব্ধো বহলঃ প্রভাবো যেন স তাটকভুবো ভূমের্বিপুলস্য ধনস্য চ দানতস্যাগাৎ অনুকূলিতঃ॥ —রামচরিত, ১।৪৫ টীকা।

  21. অন্যত্র তরসাবলেন শিবরাজেন শিবরাজনাম্না মহাপ্রতীহারেণ রাষ্ট্রকূটমাণিক্যেন অস্য রামপালস্য ভর্ত্তুরাজ্ঞয়া হিতৈষিণা আশু শীঘ্রং গজেন বলবতা সৈন্যবতা তুরঙ্গপুঙ্গবৈঃ খ্যাতং শৌর্য্যং যস্য। খরগুঃ তীক্ষ্ণারশ্মিস্তস্যেব রুগ্ দীপ্তির্যস্য সূর্য্যবত্তেজস্বিনেত্যর্থঃ॥ রণো যুদ্ধং তত্রত্যবিক্রমেণ দীর্ণঃ ভীতঃ ইন্দ্রো যস্মাৎ কেশরিকিশোরসদৃশেন শোভান্বীতেন পঞ্চাঙ্গপ্রসাদালঙ্কারেণ মহাতটিনী গঙ্গা লংঘিতা॥
    —রামচরিত, ১।৪৭ টীকা।
  22. রামচরিত, ১।৪৮ টীকা।
  23. রামচরিত, ১।৪৯।৫০।
  24. অন্যত্র চণ্ডধামভিরুগ্রপ্রতাপৈর্নন্দনৈ রাজ্যপালাদিভির্বিরচিতো হরীণামশ্বানাং কুঞ্জরাণাং গজানাং ব্যূহো যস্য চতুরঙ্গং করিতুরগতরণিপদাতিময়ং অরীন্ জয়ৎ বলং কলয়ন্॥ —রামচরিত, ২।৭ টীকা।
  25. ......... তদীয়নন্দনমহামাণ্ডলিককাহ্নুরদেবসুবর্ণদেবভ্রাতৃজমহাপ্রতীহারশিবরাজদেবপ্রভৃতিমভয়ভুজদণ্ডমুৎকৃষ্টরাষ্ট্রকূটসুভটং......
    —রামচরিত, ২।৮ টীকা।
  26. রামচরিত ২।৫ টীকা।
  27. Indian Antiquary, Vol. XIV, p. 103.
  28. Epigraphia Indica, Vol. IX, p. 304.
  29. চম্পারণ্যবিদারণোদ্গতযশঃশুভ্রাংশুনা ভাসয়-
    ন্নাশাচক্রমবক্রভাবহৃদয়ঃ ক্ষ্মাপালচূড়ামণিঃ। ১৪
    —ভেড়াঘাটের শিলালিপি; Epigraphia Indica, Vol. II, p. 11. 

  30. V. A. Smith—Catalogue of Coins in the Indian Museum, Vol. I, pp. 282, 293.
  31. Epigraphia Indica, Vol. IX, p. 322.
  32. অন্যত্র এতেষু সমস্তসামন্তেযু তথাবিধেষু বিবিধেষু বিদ্যমানেষু চ রামপালঃ দুগ্ধসিন্ধুরাজমথনগোত্রপ্রভবং দুগ্ধো নির্দুগ্ধো গালিতগর্ব্বত্বাৎ গৃহীতবহুতরকরিতুরগদ্রবিণপণত্বাচ্চ সিন্ধুরাজঃ পীঠীপতির্দেবরক্ষিতো নাম যেন তেন মথনেন মথননাম্না মহনইতি প্রসিদ্ধাভিধানেন রাষ্ট্রকূটকুলতিলকেন...তথাহি মহনেন বিন্ধ্যমাণিক্যং করেণুরাজমারুহ্য সমরসীমন্যুল্লাসিতশল্যশতকোটিপাটিতোদ্ভটসুভটং শঙ্কটভরট্টমন্দোৎকটকরিঘটাঘোটকপটলঃ স পীঠীপতির্মগধাধিপো নির্দ্দুদুহে।
    —রামচরিত, ২।৮ টীকা।
  33. গৌড়েদ্বৈতভটঃ সকাণ্ডপটিকঃ ক্ষত্রৈকচূড়ামণিঃ
    প্রখ্যাতো মহণাঙ্গপঃ ক্ষিতিভুজাম্মান্যোভবন্মাতুলঃ।
    তং জিত্বা যুধি দেবরক্ষিতমধাৎ শ্রীরামপালস্য যো
    লক্ষ্মীং নির্জ্জিত-বৈরি-রোধনতয়া দেদীপ্যমানোদয়াম্॥ ৭
    —Epigraphia Indica, Vol. IX, p. 324.

  34. Journal of the Asiatic Society of Bengal, 1904, pt. I, p. 178, Note 1.
  35. Catalogue of coins in the Indian Museum, Vol. I, p. 163.
  36. ৩৬.০ ৩৬.১ রামচরিত, ২।৫ টীকা।
  37. Epigraphia Indica, Vol. VII, pp. 1-170.
  38. বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (রাজন্যকাণ্ড), পৃঃ ১৯১।
  39. Epigraphia Indica, vol. V, App. p. 90, No. 668.
  40. Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III. p. 14.
  41. “দেবগ্রামপ্রতিবদ্ধসুধাচক্রবালবালবলভীতরঙ্গবহলগলহস্তপ্রশস্তহস্তবিক্রমো...।”
  42. Epigraphia Indica. Vol. VI, p. 207.
  43. Ibid. pp. 204-06.
  44. শ্রীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ বসু এইমত প্রকাশ করিয়াছেন।
     —বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (রাজন্যকাণ্ড), পৃঃ ১৯৮।
  45. ৪৫.০ ৪৫.১ বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, (রাজন্যকাণ্ড), পৃঃ ১৯৯।
  46. Epigraphia Indica, Vol IX, p. 232.
  47. Cunningham’s Archaeological Survey Report, Vol VII, p. 169.
  48. Ain-i-Akbari, Vol II, (Jarret’s Trans.) pp. 129-140.
  49. Journal and Proceedings of the Asiatic Society of Bengal, Vol. X, p. 127.
  50. বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, (রাজন্যকাণ্ড) পৃঃ ১৪৫।
  51. অন্যত্র মহাবাহিন্যাং গঙ্গায়াং তরণিসম্ভবেন নৌকামেলকেন গুপ্তায়াং চ্ছন্নায়াং সম্যগুত্তরণং মুখরিতদিক্কোলাহলো যস্মিন্। —রামচরিত, ২।১০ টীকা।
  52. রামচরিত, ২।১৭ টীকা।
  53. রামচরিত, ২।২০ টীকা।
  54. অন্যত্র। অপি সমুচ্চয়ে। স রামপালো ভবস্য সংসারস্যাপদম্ বিপদম্ ডমরমুপপুরং শত্রুকৃতমলাবীৎ।......ডমরপক্ষে দ্রবিণং ধনং, অবিতা রক্ষিতা প্রজা যেন করপল্লবলীলয়া আয়ুধচেষ্টয়া অবধূতনিখিলনৃপং যথা ভবতি॥—রামচরিত, ১।২৭ টীকা।
  55. অথ বহুতরসা দৃত্যা যুক্তো রামেণ বিত্তপালস্য।
    সূনোরভ্যাসে সহসা সৌরেশিতনয়ঃ প্রৈষি॥
    —রামচরিত ২।৩৬।

  56. ৫৬.০ ৫৬.১ Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III, p. 14.
  57. অথ ভীমানীং তেন মহাতরসাশনৈরমেয়বলম্।
    সমচীয়ত হরিসুহৃদা সুবিহতপরমণ্ডলাবরোধেন॥
    —রামচরিত, ২।৩৮।

  58. অপ্যভিতো গঙ্গারতোয়ানর্ঘপ্রবাহপুণ্যতমাম্।
    অপুনর্ভবাহ্বয়মহাতীর্থবিকলুষোজ্বলামন্তঃ॥
    —রামচরিত, ৩।১০।

  59. কুর্ব্বদ্ভিঃ শংদেবেন শ্রীহেত্বীশ্বরেণ দেবেন।
    চণ্ডেশ্বরাভিধানেন কিল ক্ষেমেশরেণ চ সনাথৈঃ॥
    —রামচরিত, ৩।২।

  60. Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III, p. 14.
  61. মদনপালদেবের তাম্রশাসন এই “রামাবতীনগর পরিসরসমাবাসিত শ্রীমজ্জয়স্কন্ধবার” হইতে প্রদত্ত হইয়াছিল।—গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১৫৩।
  62. Journal of the Royal Asiatic Society, 1896, p. 113.
  63. Ain-i-Akbari (Jarrett’s Trans,) Vol. II, p. 131.
  64. ভবভূষণসন্ততিভুবমনুজগ্রাহজিতমুৎকলত্রং যঃ।
    জগদবতিস্ম সমস্তং কলিঙ্গতস্তান্ নিশাচরান্ নিঘ্নন্॥
    —রামচরিত, ৩।৪৫।

     শ্রীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ বলিয়াছেন যে, এই শ্লোকে ‘ভবভূষণ’ অর্থে চন্দ্র বুঝায় এবং ‘ভবভূষণসন্ততি’ অর্থে সোমবংশীয় রাজা বুঝায়।” ‘রামচরিতে’র ভূমিকায় শাস্ত্রী মহাশয় লিখিয়াছেন,—"He (Rampala) conquered Utkala and restored it to the Nagavamsis.” ইহা দ্বারা বুঝা যায়, শাস্ত্রী মহাশয় ‘ভবভূষণসন্ততি’ পদ ‘নাগবংশীয়’ অর্থে গ্রহণ করিয়াছেন। নাগ ভবের (শিবের) ভূষণ হইলেও নাগবংশীয় কোন রাজা উড়িষ্যায় কখনও রাজত্ব করিয়াছেন বলিয়া এ পর্য্যন্ত জানা যায় নাই। উড়িষ্যার পার্ব্বত্যপ্রদেশে নাগবংশীয় রাজগণের বিস্তৃত অধিকার ছিল। সুহৃদ্‌বর রায় বাহাদুর শ্রীযুক্ত হীরালাল ‘গৌড়রাজমালা’ প্রকাশিত হইবার পূর্ব্বে অন্ততঃ পাঁচখানি খোদিতলিপি ও একখানি তাম্রশাসনের বিবরণ প্রকাশ করিয়াছিলেন। (Epigraphia Indica, Vol. IX, pp. 161-164, 176 etc.) পক্ষান্তরে ‘রামচরিতে’র (২।৫) টীকা হইতে জানা যায়, রামপালের রাজ্য লাভের অব্যবহিত পূর্ব্বে উৎকলে ‘কেশরী’-উপাধিধারী একজন নৃপতি ছিলেন। ভীমের সহিত যুদ্ধোদ্যত রামপালের সহিত যাঁহারা যোগদান করিয়াছিলেন, তন্মধ্যে ‘উৎকলেশ-কর্ণকেশরীর’ পরাভবকারী দণ্ডভুক্তি-ভূপতি জয়সিংহের নাম দৃষ্ট হয়।” খৃষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর শেষপাদে একই প্রদেশে গঙ্গাবংশীয় অনন্তবর্ম্মা চোড়গঙ্গ ও কেশরিবংশীয় কর্ণকেশরীর অধিকার ছিল, তখন সেই প্রদেশে নাগবংশীয় রাজগণের অধিকার কেন থাকিতে পারে না, তাহা বুঝিতে পারা যায় না। সে সময়ে উড়িষ্যায় সোমবংশীয় নরপতিগণের অধিকার ছিল কিনা, তাহা অদ্যাবধি নির্ণীত হয় নাই।

  65. তস্যজিতকামরূপাদিবিষয়বিনিবৃত্তঃ মানসম্পাদ্যঃ।
    মহিমানমায়ননৃপো যতমানস্য প্রজাভিরক্ষার্থম্॥
    —রামচরিত, ৩।৪৭।

  66. তস্য মালব্যদেব্যাসীৎ কন্যা ত্রৈলোক্যসুন্দরী।
    জগদ্বিজয়মল্লস্য বৈজয়ন্তী মনোভবঃ
    —Journal of the Asiatic Society of Bengal, New Series, Vol. X, p. 170.

  67. বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস, (রাজন্যকাণ্ড), পৃঃ ২৮৬।
  68. Journal of the Asiatic Society of Bengal, vol. X, pp. 128-129.
  69. স্বপরিত্রাণনিমিত্তং পত্যা যঃ প্রাগ্দিশীয়েন।
    বর-বারণেন চ নিজ-স্যন্দন-দানেন বর্ম্মণারাধে॥
    —রামচরিত, ৩।৪৪।

  70. তত্র স রাজা নিবসন্নানাবিষয়সন্নিবেশেন।
    সূনুসমর্পিতরাজ্যো রামঃ কান্তা সখশ্চিরং রেমে॥
    —রামচরিত, ৪।১।

  71. প্রাপ্তে কালে সরিতি দুর্ব্বাসসাদিত্যাশ্রবসেতুঃ।
    বৃষজিন্মথনোঽস্ততনুর্নিঃশ্রেণিকয়াদ্রিসুতপুরান্তরয়া॥
    ইত্যধিমুদ্গিরি কলয়ন্ ব্রহ্মভুবঃ স্বং বহুপ্রদাতাঽসৌ।
    কৃতনিশ্চয়ঃ কৃতার্থঃ প্রাস্থিত পৃথ্বীপতির্মহাসরিতং॥
    —রামচরিত, ৪।৮-৯।

  72. জনজাতে রুদতি শুচা সারবমগ্রাহ্য তজ্জলং পুণ্যং।
    বিরহসহপরিজনৈদুর্ব্বিষহং রামো জগাম স স্বভুবং॥
    —রামচরিত, ৪।১০।

  73. Indian Antiquary, Vol. IV, p. 366.
  74. শাকে যুগ্মবেণুরন্ধ্রগতে (?) কন্যাং গতে ভাস্করে
    কৃষ্ণে বাক্পতি-বাসরে যমতিথৌ যামদ্বয়ে বাসরে।
    জাহ্নব্যাং জলমধ্যতস্ত্বনশনৈর্ধ্যাত্বা পদং চক্রিণো
    হা পালান্বয়-মৌলি-মণ্ডনমণিঃ শ্রীরামপালো মৃতঃ॥
    —গৌড়রাজমালা, পৃঃ ৷৷৴৹।

  75. তস্য তনয়ো মতনয়ঃ করণ্যানামগ্রণীরনর্ঘগুণঃ।
    সান্ধিশ্রীপদাসম্ভাবিতাভিধানতঃ প্রজাপতির্জাতঃ॥
    —রামচরিত; কবিপ্রশস্তি, ৩।

  76. যস্য শুদ্ধসচিবঃ পুরা ভবদ্বোধিদেব ইতি তত্ত্ববোধভূঃ।
    বিশ্বগেববিদিতোঽদ্ভুতৈক্ত ণৈরূজ্ঝিতাত্মসদৃশঃ ক্ষিতাবয়ং॥ ৫
    —কমৌলির তাম্রশাসন, গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১২৯।

  77. বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকা, ১৫শ ভাগ, পৃঃ ১৩।
  78. Catalogue of Sanskrit Manuscripts in the Bodleian Library, Cambridge, Vol. II, p. 250, no 1428.
  79. Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. V, pp. 93-94.
  80. Cunningham’s Archaeological Survey Report, Vol. XI, p. 169.
  81. Epigraphia Indica, Vol. II, pp. 348-49.
  82. Proceedings of the Asiatic Society of Bengal, 1900, p. 70.
  83. তেনে যেন জগৎত্রয়ে জনকভূলাভাদ্‌যথাবদ্যশঃ
    ক্ষৌণীনায়কভীমরাবণবধাদ্‌যুদ্ধার্ণ্ণবোল্লংঘনাৎ॥ ৪
    —গৌড়লেখমালা, পৃঃ ১২৯।

  84. বসুধাশিরোবরেন্দ্রীমণ্ডলচূড়ামণিঃ কুলস্থানং।
    শ্রীপৌণ্ড্রবর্দ্ধনপুরপ্রতিবদ্ধঃ পুণ্যভূঃ বৃহদ্বটুঃ॥
    —রামচরিত, কবিপ্রশস্তি, ১।

  85. রামচরিত, কবি প্রশস্তি, ১৩।
  86. Memoirs of the Asiatic Society of Bengal, Vol. III, p. 14.
  87. বঙ্গের জাতীয় ইতিহাস (রাজন্যকাণ্ড), পৃঃ ২০৯।
  88. Ain-i-Akbari (Jarrett’s Trans,), vol. II, p. 131.
  89. Ibid, p. 135.
  90. Ibid. pp. 337-38.
  91. Ibid, pp. 138-39.
  92. Indian Antiquary, Vol. IV, p. 366.
  93. Ibid, Vol. XVI, p. 64.
  94. Epigraphia Indica, Vol. II, pp. 345-47.
  95. তদন্তরে মাননরেন্দ্র চন্দ্রমাঃ
    স রুদ্র মানোজনি যেন ভূভুজা।
    স্বমেদিনীমণ্ডলমাদিকোলবৎ
    বলাদমিত্রাম্বুনিধেঃ সমুদ্ধৃতং॥ ২৪
    —Ibid, p. 336.

  96. আণীতৌ নিজরাজ্যমুজ্জ্বলয়িতুম যত্নাৎ প্রতীতাত্মনা
    সংবাসায় নরেশ্বরেণ শিবিরোং শ্রীবর্ণ্ণমানেন তৌ।
    তস্যাক্ষামবলম্ব্য তৎকুলমিদং তাভ্যামপি প্রাপিতং
    কাঞ্চিৎ কোটিমনুগুরাং গুণভুব কীর্ত্তির্রীভূতেরপি॥ ১০
    Ibid pp. 334.

  97. Indian Antiquary, Vol. XVI, 1887, p. 65, V. 10.
  98. সোপি প্রাপ যদুং ততঃ ক্ষিতি (ভু)-জাং বংশোয়মুজ্জৃম্ভতে।
    বীরশ্রীশ্চহরিশ্চ যত্র বদ্ভ(হু)শঃ প্রত্যক্ষমেবৈক্ষ্যত॥
    —Journal of the Asiatic Society of Bengal, New Series, Vol. X, pp. 126-7. 

  99. Epigraphia Indica, Vol. V, pp. 205-7.
  100. Ibid, p. 205.
  101. গৌড়রাজমালা, পৃঃ ৫৬, পাদটীকা।
  102. গৌড়রাজমালা, পৃঃ ৫৫।
  103. The Dacca Review, 1912, July, p. 138.
  104. প্রবাসী, ১৩২০, পৃঃ ৪৫৭।