বাঙ্গালীর প্রতিভা ও সুভাষচন্দ্র/রেঙ্গুন পরিত্যাগ

উইকিসংকলন থেকে

রেঙ্গুন পরিত্যাগ

 ১৯৪৫ সালের এপ্রেল মাসে ব্রিটিশ সৈন্যগণ যখন রেঙ্গুন অভিমুখে অগ্রসর হইতেছিল নেতাজী তখন রেঙ্গুনে ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সৈন্যগণের সম্মুখীন হইবার জন্য কৃতসংকল্প হইয়াছিলেন। তিনি ইহাও স্থির করিয়াছিলেন যে প্রয়োজন হইলে সম্মুখ যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জ্জন করিবেন, তথাপি রেঙ্গুন পরিত্যাগ করিয়া অন্যত্র যাইবেননা। মন্ত্রীগণ এবং জাতীয় বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্ম্মচারিগণ তাঁহাকে অবিলম্বে ব্রহ্মদেশ পরিত্যাগ করিয়া অন্যস্থানে থাকিয়া সংগ্রাম পরিচালনা করিবার জন্য সনির্ব্বন্ধ অনুরোধ করিতেছিলেন। কিন্তু তিনি এই প্রস্তাব একেবারেই অনুমোদন করেন নাই।

 এপ্রেল মাসের ২২শে ব্রিটিশ সৈন্যগণ একেবারেই রেঙ্গুনের উপকণ্ঠে আসিয়া উপস্থিত হইল। নেতাজী অচল, অটল—তিনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিবেন না—কিছুতেই রেঙ্গুন পরিত্যাগ করিবেন না। এদিকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ব্রিটিশের ট্যাঙ্ক রেঙ্গুনে প্রবেশ করিবে, এবং নেতাজীর অমূল্য জীবন কাল স্রোতে ভাসিয়া যাইবে। মন্ত্রীগণ এবং উর্দ্ধতন সামরিক কর্ম্মচারিগণ অশ্রু-সজল-নয়নে নেতাজীকে কহিলেন—“প্রভু এই চরম সময়ে—এই আসন্ন মৃত্যুর প্রাক্কালে আমাদের অনুরোধেও আপনি রেঙ্গুন পরিত্যাগ করুন।” পাষাণ দ্রবীভূত হইল—নেতাজীর হৃদয় টলিল—তাঁহার আত্মঘাতী সংকল্পে প্রবল বাধা উপস্থিত হইল। ২৪শে এপ্রেল সন্ধ্যার অব্যবহিত পরে নেতাজী পদব্রজে রেঙ্গুন পরিত্যাগ করিলেন। পদব্রজে ৩০০ মাইল পথ অতিক্রম করিয়া তিনি তিন সপ্তাহে ব্যাঙ্ককে পৌঁছিলেন। রেঙ্গুন পরিত্যাগ করিবার পর এক সপ্তাহ অতীত হইতে না হইতেই নেতাজী ব্রিটিশ কামানের গভীর গর্জ্জন শুনিতে পাইলেন। ইংরাজ বাহিনী সমাগত প্রায়। এই উপলক্ষে তিনি কিরূপ বিপদের সম্মুখীন হইয়াছিলেন, এবং কিরূপ শারীরিক কষ্ট ভোগ করিয়াছিলেন তাহা তাঁহার সহযাত্রীগণের স্মৃতিপথ হইতে কখনও বিলুপ্ত হইবে না।