বাজী রাও/ষষ্ঠ অধ্যায়
ষষ্ঠ অধ্যায়।





বুন্দেলখণ্ডে অভিযান—জেতপুরের যুদ্ধ—হিন্দুরাজ্য-রক্ষা—মস্তানী—বুন্দেল-খণ্ডে রাজ্য-লাভ ।
পালখেড়ের যুদ্ধ ব্যাপার শেষ করিয়া বাজী রাও ১৭২৮ খৃষ্টাব্দের জুলাই মাসে সাতরায় প্রত্যাবৃত্ত হইলেন। অতপর চারিমাস বর্ষাকাল তিনি বিনা যুদ্ধে অতিবাহিত করেন। শরৎ সমাগমে বিজয়া দশমীর পর তাঁহাকে উত্তর ভারতে ছত্রসালের নিমন্ত্রণ।অভিযান করিতে হয়। মধ্য ভারতের অন্তর্গত বুন্দেলখণ্ডের রাজা ছত্রসাল যবন শত্রুর আক্রমণে বিপন্ন হইয়া তাহাকে সাহায্যার্থ আহ্বান করেন। মোসলমানের হস্ত হইতে ভারতবর্ষের উদ্ধারসাধনই বাজী রাওয়ের জীবনের প্রধান কার্য্য ছিল। সুতরাং তিনি অতীব আগ্রহের সহিত ছত্রসালের আমন্ত্রণ গ্রহণ করিলেন।
ছত্রপতি মহাত্মা শিবাজীর সময়ে বুন্দেলখণ্ডে সর্ব্বত্র মোগল-শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। ছত্রশাল নামক প্রমার বংশীয় জনৈক ক্ষত্রিয় বীর তাঁহার প্ররোচনায় ঐ প্রদেশ হইতে মহম্মদ খান বঙ্গষমোগল শাসন উচ্ছিন্ন করিবার চেষ্টা করেন। শিবাজীর উপদেশক্রমে পরিচালিত হওয়ায় তিনি বুন্দেলখণ্ডে হিন্দুরাজ্য প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হন। কিন্তু মোসলমানগণ সহজে বুন্দেলখণ্ডের আশা পরিত্যাগ করিলেন না। অবসর পাইলেই তাঁহারা ঐ প্রদেশ আক্রমণপূর্ব্বক পুনরধিকার করিবার চেষ্টা করিতেন। ১৭২৮ খৃষ্টাব্দে মহম্মদ খান বঙ্গষ নামক জনৈক রোহিলা সর্দ্দার এই হিন্দুরাজ্য নষ্ট করিবার জন্য যত্নশীল হন। তিনি পূর্ব্বে এলাহাবাদের সুভেদার ছিলেন। ফরক্কাবাদ বা ফরোখাবাদ নগর ইঁহারই দ্বারা স্থাপিত হয়। রাজা ছত্রসাল বিংশতি সহস্র সাদিসৈন্য সহ পুনঃ পুনঃ যুদ্ধ করিয়াও বার্দ্ধক্যপ্রযুক্ত মহম্মদ খানের আক্রমণ রোধ করিতে পারিলেন না। বঙ্গষের সেনাদল বুন্দেলখণ্ড লুণ্ঠন করিয়া ছারখার করিতে লাগিল। দুর্ভাগ্যক্রমে নিকটবর্ত্তী হিন্দুরাজন্যবর্গ এ সময়ে বঙ্গষেরই সহায়তা করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন। তখন নিরুপায় ছত্রসাল বাজী রাওকে হিন্দুদিগের একমাত্র বন্ধু জানিয়া, তাঁহার নিকট সৈন্য সাহায্য প্রার্থনা পূর্ব্বক একটী পত্র লিখিলেন। ঐ পত্রের শেষে নিম্নে উদ্ধৃত শ্লোকটি লিখিত ছিল,―
“যো গতি গ্রাহ-গজেন্দ্রকী, সো গতি ভই হ্যায় আজ।
বাজী জাত বুন্দেলন্কী, রাখো বাজী লাজ॥”
অর্থাৎ “পূর্ব্বকালে নক্রকর্ত্তৃক আক্রান্ত হইয়া গজরাজ যেরূপ বিপন্ন হইয়াছিল, আমরাও অদ্য সেইরূপ বিপন্ন হইয়াছি। বুন্দেলাগণ বাজী হারিতেছে, এ সময়ে, হে বাজীরাও! তুমি তাহাদিগের লজ্জা নিবারণ কর।” এই কাতরোক্তিপূর্ণ পত্র পাঠ করিয়া বাজী রাওয়ের হৃদয় মোসলমানদিগের গ্রাস হইতে বিপন্ন হিন্দুরাজ্যকে রক্ষা করিবার জন্য ব্যাকুল হইয়া উঠিল। তিনি মহারাজ শাহুর অনুমতি গ্রহণপূর্ব্বক দ্বাদশ জন সর্দার ও বিংশতি সহস্র সৈন্যসহ মহম্মদ খানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হইলেন।
বাজী রাও যখন বুন্দেলখণ্ডে প্রবেশ করিলেন, তখন রাজা ছত্রসাল ও তাঁহার পুত্রগণ বঙ্গষের সৈন্যদল কর্ত্তৃক জেতপুর দুর্গের নিকটে অবরুদ্ধ হইয়াছিলেন। এই কারণে বাজীরাও খণ্ড যুদ্ধ।প্রথমে ঐ দুর্গেরই সমীপবর্ত্তী হইলেন। ১৭২৯ খৃষ্টাব্দের ১২ই মার্চ্চ তাহার সহিত বঙ্গষের যুদ্ধ আরম্ভ হইল। বাজীরাও স্বীয় সৈন্যদলকে কয়েকটি ক্ষুদ্র বিভাগে বিভক্ত করিয়া তাহাদিগের একদলকে প্রথমে আক্রমণের আদেশ করিলেন! এই ক্ষুদ্রদলের সহিত যুদ্ধে বঙ্গষের জয়লাভ হয় ও তিনি স্বস্থান ত্যাগ করিয়া অগ্রসর হন তখন মহারাষ্ট্র সৈন্যের অসংখ্য খণ্ডদলগুলি একবার করিয়া মোসলমানদিগকে আক্রমণ ও একবার করিয়া অন্তর্দ্ধান করিতে লাগিল। এই যুদ্ধ-প্রণালীতে মোসলমানেরা ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। ১৫ই মার্চ মহম্মদ খান প্রবল বিক্রমে মহারাষ্ট্রীয়দিগকে আক্রমণ করিলে বাজীরাও সসৈন্যে একটা পর্ব্বতের উপত্যকার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করিলেন, এবং সন্ধ্যাকালে বিদ্যুদ্বেগে তথা হইতে বহির্গত হইয়া বঙ্গষের সেনাদলের উপর আপতিত হইলেন। বঙ্গষের সৈন্যগণও যুদ্ধার্থ প্রস্তুত ছিল। মহারাষ্ট্রীয়েরা অগ্রসর হইবা মাত্র তাহাদিগের তোপখানা হইতে অজস্রধারায় অগ্নিবর্ষণ হুইতে লাগিল। কিন্তু বাজীরাওয়ের অসাধারণ সমরনৈপুণ্যে সেদিনকার নিশাযুদ্ধে চারি জনের অধিক মহারাষ্ট্র সৈনিক নিহত হইল না। মোসলমানেরা বহু চেষ্টায় মারাঠাদিগের কতিপয় উষ্ট্র ও অশ্ব হস্তগত করিলেন।
পরদিন আবার উভয় পক্ষের যুদ্ধ আরব্ধ হইল। বাজী রাও স্বীয় খণ্ড-সেনাদলকে মোসলমানদিগের রসদ আমদানির পথ রুদ্ধ করিতে আদেশ করিলেন। কয়েক দিনের বঙ্গষের অবরোধ।মধ্যেই মহম্মদ খান বাজী রাওয়ের হন্তে সম্পূর্ণ পিঞ্জরবদ্ধবৎ হইলেন। ক্রমে তাঁহার সৈন্যদলে ঘোর দুর্ভিক্ষ ও হাহাকার উপস্থিত হইল। অতি কদর্য্য শস্য ও ২০ টাকা সের দরে বিক্রীত হইতে লাগিল। তথাপি বঙ্গষ দুই মাস পর্যন্ত পরাজয়স্বীকার করিলেন না। প্রত্যহ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যুদ্ধে তাহার সৈন্য বিনষ্ট হইতে লাগিল।
ইত্যবসরে মহম্মদ খানের পুত্র কায়েম খান ত্রিংশৎ সহস্র সৈন্যসহ পিতার সহায়তার জন্য জেতপুর দুর্গের নিকটবর্ত্তী হইলেন। সুতরাং বাজী রাওকে স্বীয় সেনাবল-সহ বঙ্গষের পরাভব।কায়েম খানের অভিমুখে যাত্রা করিতে হইল। জেতপুরের ছয় ক্রোশ দুরে ২৯এ এপ্রিল তারিখে উভয় পক্ষে ঘোরতর যুদ্ধ ঘটে। তাহাতে কায়েম খানের ছত্রভঙ্গ ঘটে এবং তাহার ১৩টা হস্তী, তিন সহস্র অশ্ব ও ৫০।৬০টি উষ্ট্র মারাঠাগণের হস্তগত হয়। এদিকে অবরুদ্ধ বুন্দেলারা বহির্গত হইয়া মহম্মদ খানের উপর আপতিত হওয়ায় তাঁহারও সম্পূর্ণ পরাভব ঘটিল। তিনি জেতপুরের দুর্গে আশ্রয় লইলেন। তখন মহারাষ্ট্রসৈন্য জেতপুর অবরোধ করিল। এবার মোসলমানদিগের মধ্যে এরূপ দুর্ভিক্ষ উপস্থিত হইল যে, তাঁহারা অশ্ব, উষ্ট্র ও গো-গর্দ্দভাদি নিহত করিয়া উদর পুরণ করিতে লাগিলেন। শতমুদ্রার বিনিময়েও একসের গোধূম দুষ্প্রাপ্য হইল! শত্রু পক্ষীয় অনেকে অনশনে প্রাণত্যাগ করিতেছে শুনিয়া বাজীরাও ঘোষণা করিলেন, “যাহারা অস্ত্রত্যাগ করিয়া আশ্রয় প্রার্থনা করিবে, তাহাদিগকে মুক্তিদান করা যাইবে।” তখন দলে দলে মোসলমান আসিয়া আত্মসমর্পণ করিতে লাগিল। বাজী রাও সদ্ব্যবহারে তুষ্ট করিয়া সকলকে বিদায় করিলেন। কিন্তু মহম্মদ খান তথাপি বাজী রাওয়ের শরণাপন্ন না হইয়া স্বীয় পুত্রকে পুনর্ব্বার সসৈন্যে সাহায্যার্থ আগমন করিতে পত্র লিখিলেন। পরিশেষে তাঁহার জননীর চেষ্টায় ফয়জাবাদ হইতে ক্ষুদ্র একদল মোসলমান সৈন্য সহ ৬০ জন পাঠান সর্দ্দার তাঁহার উদ্ধারের জন্য আগমন করিলেন। কথিত আছে, তাঁহাদিগের কৌশলে মহম্মদ খান বঙ্গষ কোনরূপে অক্ষত শরীরে দুর্গ হইতে পলায়ন করিতে সমর্থ হন।[১]
এইরূপে বাজী রাও স্বীয় পরাক্রম-বলে মহম্মদ খান বঙ্গষকে সম্পূর্ণরূপে পরাভূত করিয়া হিন্দুরাজ্য বুন্দেলখণ্ডের স্বাধীনতা রক্ষা করিলেন। অতঃপর তিনি ছত্রসালের সহিত পুরস্কার লাভ।সাক্ষাৎ করিলে বৃদ্ধ নরপতি হর্ষাশ্রুপূর্ণ নয়নে তাঁহাকে আলিঙ্গন ও সকলের সমীপে তাঁহাকে স্বীয় তৃতীয় পুত্র বলিয়া স্বীকার করিলেন। এই বিপদ্ হইতে উদ্ধারের জন্য রাজা ছত্রসাল বাজী রাওকে যমুনাতীরবর্ত্তী ঝাঁশী (ঝান্সী) নামক দুর্গ ও তচ্চতুষ্পার্শ্ববর্তী প্রায় সওয়া দুই লক্ষ টাকা আয়ের ভূসম্পত্তি পুরস্কার-স্বরূপ দান করিয়াছিলেন।
এই সময়ে বাজী রাও কয়েক দিন পান্না-রাজের আতিথ্য গ্রহণ করেন। রাজা ছত্রসাল মহারাষ্ট্রীয় সর্দ্দরদিগকে বিবিধ বসনভূষণ-দানে সম্মানিত করিলেন। বলা বাহুল্য, মস্তানী।বাজী রাওয়ের আদর-সৎকারের সীমা রহিল না। পান্না-নরেশ তাঁহাকে নানা উপঢৌকন-দানে পরিতুষ্ট করিলেন। এই সময়ে বাজী রাও মস্তানী নাম্নী একটি সর্ব্বসৌন্দর্য্যের আধারস্বরূপা রমণী-রত্ন প্রাপ্ত হন। এই যুবতী ছত্রসালের কোনও যবন জাতীয়া উপপত্নীর গর্ভজাতা ছিলেন। বাজী রাওয়ের রূপ গুণের প্রতি কন্যার পক্ষপাত দেখিয়াই হউক, অথবা তাঁহাকেই উপযুক্ত পাত্র ভাবিয়া হউক, ছত্রসাল এই রত্ন-কল্পা কন্যাকে বাজী রাওয়ের হস্তে সমর্পণ করেন। “বুন্দেলখণ্ডের তওয়ারিখ” নামক ঊর্দ্দু ইতিহাস গ্রন্থে লিখিত আছে, জিতেন্দ্রিয় বাজী রাও বৃদ্ধ রাজার অনুরোধ লঙ্ঘন করিতে না পারিয়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও মস্তানীকে গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরে তিনি এই নৃত্য-গীত-বাদ্য-কুশলা যুবতীর গুণে এরূপ মুগ্ধ হন যে, তজ্জন্য রাজকার্য্যেও তাঁহার ব্যাঘাত, ঘটিতে লাগিল। তিনি এক মুহূর্তের জন্যও তাঁহাকে দৃষ্টির অন্তরালে রাখিতে পারিতেন না। প্রায় সকল অভিযানেই মস্তানী তাঁহার সঙ্গে থাকিতেন। তদ্দর্শনে মহারাজ শাহু অতীব অসন্তুষ্ট হইয়া তাঁহাকে পদচ্যুত করিবার ভয় প্রদর্শন করেন। কথিত আছে, এজন্য পরিশেষে তাঁহার ভ্রাতা চিমণাজী আপ্পা সন্ন্যাস গ্রহণ-পূর্ব্বক সংসার-ত্যাগের সঙ্কল্প প্রকাশ করিলে বাজী রাওয়ের চৈতন্যোদয় হয়।
পুণার “শনিবার-বাড়া” নামক প্রাসাদে বাজী রাও মস্তানীর বাসের জন্য একটি স্বতন্ত্র “মহল” নির্দ্দেশ করিয়া দিয়াছিলেন। তাহা “মস্তানী মহল” এবং শনিবার-বাড়ার যে মস্তানীর বংশ।দ্বার দিয়া ঐ মহলে গমন করা যায়, তাহা মস্তানী-দরজা নামে খ্যাত ছিল। মস্তানীর গর্ভে ১৭৩৪ খৃষ্টাব্দে বাজীরাও একটি পুত্র লাভ করেন। তাহার নাম সমশের বাহাদুর। ১৭৬১ খৃষ্টাব্দে পানিপথে মহারাষ্ট্রীয়দিগের সর্ব্বনাশ-কালে সমশের বাহাদুর যথোচিত বীরত্ব প্রকাশ করিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করেন। তিনি পরবর্ত্তী পেশওয়ের কার্য্য-কালে মহারাষ্ট্র সমাজের প্রসিদ্ধ সর্দ্দার শ্রেণীতে পরিগণিত হইয়াছিলেন। তাঁহার পুত্র আল্লী বাহাদুর পেশওয়ে মাধব রাও নারায়ণের সময়ে ৪০ সহস্র সৈন্য সংগ্রহ-পূর্ব্বক বুন্দেলখণ্ডের পরস্পরবিবদমান নরপতিগণের পরাজয় করিয়া বার্ষিক ৭৫ লক্ষ টাকা আয়ের প্রদেশ অধিকার করেন। পেশওয়ের আদেশে মধ্য ভারতের বান্দা নগরে তাঁহার রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি নবাব উপাধিতে ভূষিত হইয়াছিলেন। তাঁহার বংশধরেরা অদ্যাপি “বান্দার নবাব” নামে পরিচিত। ১৮০৩ বান্দার নবাব।খৃষ্টাব্দে মহারাষ্ট্রপতি শেষ বাজী রাও যখন মার্কুইস অব ওয়েলেসলির প্রবর্ত্তিত “সবসিডিয়ারি সিষ্টেম”-সূত্রে আবদ্ধ হন, তখন বান্দার নবাবকে ইংরাজের সৈন্য-পোষণের ব্যয়-স্বরূপ বার্ষিক ৩৬ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা আয়ের রাজ্যাংশ পরিত্যাগ করিতে হয়। কাল-প্রভাবে মস্তানীর বর্ত্তমান-বংশধরেরা ইন্দোরের রাজকুমার কলেজে শিক্ষা সমাপন করিয়া এক্ষণে মধ্য ভারতবর্ষের পোলিটিক্যাল এজেণ্টের অধীনতায় বার্ষিক ৩৬ হাজার টাকা বৃত্তি লইয়া বাস করিতেছেন। সে যাহা হউক, ১৭৪০ খৃষ্টাব্দের ১৭ই এপ্রিল খানদেশে বাজী রাওয়ের মৃত্যু হইলে মস্তানী তাঁহার চিতায় আরোহণপূর্ব্বক দেহত্যাগ করেন।
১৭৩৩ খৃষ্টাব্দে রাজা ছত্রসালের মৃত্যুকালে বাজী রাও তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে গিয়াছিলেন। সেই সময়ে রাজা তাঁহাকে রাজ্যের তৃতীয়াংশ দান করেন। তদবধি বুন্দেলখণ্ডে রাজ্যলাভ।বুন্দেলখণ্ড চৌথ পদ্ধতিসূত্রে মহারাষ্ট্র সাম্রাজ্যের আশ্রয়াধীন হয়। এইরূপে বঙ্গষকে পরাজিত করিয়া বাজী রাও বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে বার্ষিক ৩৩॥০ লক্ষ টাকা আয়ের রাজ্যাংশ ও পান্নার হীরক খনির তৃতীয়াংশ লাভ করেন। ১৭৩৮ খৃঃ মহম্মদ খান বঙ্গষ দ্বিতীয় বার বুন্দেলখণ্ড আক্রমণ করিয়াছিলেন। সেবারেও বাজী রাও ছত্রসালের পুত্র জগৎরাজের সহায়তায় ধাবিত হন। পুনর্ব্বার বঙ্গষের দুর্দশার একশেষ হয়। কথিত আছে, তিনি “নারী-বেশে” বাজী রাওয়ের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া প্রাণভিক্ষা ও বুন্দেলখণ্ডকে স্বাধীন হিন্দুরাজ্য বলিয়া স্বীকার করেন।
গোবিন্দরাও বুন্দেলা নামক জনৈক ব্রাহ্মণ-সর্দ্দারের প্রতি পূর্ব্বোক্ত ৩৩ লক্ষ ৫০ সহস্র মুদ্রা আয়বিশিষ্ট প্রদেশের শাসনভার অর্পণ করা হয়। কাল্পী ও সাগর প্রভৃতি নগর গোবিন্দ রাও কর্ত্তৃক স্থাপিত হয়। বুন্দেলখণ্ড অঞ্চলে মহারাষ্ট্র শক্তির প্রতাপ গোবিন্দ রাওয়ের বাহু-বলেই অক্ষুণ্ণ হইয়াছিল। পানিপথের যুদ্ধে ইঁহার মৃত্যু ঘটে।
- ↑ Vide Syar-ul-Mutakherin, The Bangansh Nawabs of Farrokhabad, Pogson's Boondelas, and the History of the Nawab of Banda.