বাসন্তিকা/দ্বিতীয় দৃশ্য
দ্বিতীয় দৃশ্য
[দৃশ্য-পরিচয়—কুঞ্জবনের এক পার্শ্ব—রাত্রি সবে প্রভাত হোয়েছে—চারিদিকে অন্বেষণ করিতে করিতে বকুলরাণীর প্রবেশ]
( গান )
কোথায় ওগো লুকিয়ে আছো ফুলপিয়াসী দখিন্ হাওয়া
ভোর-নিশীথে স্বপনঘোরে শুনেছি যে তোমার চাওয়া।
অভিসারের তিয়াস ঢেলে,
রক্ত-আগুন বুকে জ্বেলে,
ধরার মাঝে ফুট্লো বকুল প্রেমসায়রে নাওয়া।
তোমার মাঝে হারিয়ে যাবার আজ্কে দাবীদাওয়া।
[গান গাহিতে গাহিতে দখিন্ হাওয়ার প্রবেশ]
( গান )
তন্দ্রালস আঁখি আমার উঠ্লো জেগে কাহার ডাকে,
রূপকুমারী ডাক্ছে বুঝি কুঞ্জবনের ফাঁকে ফাঁকে।
তরুণ রবির অরুণ আলোর উথ্লে ওঠে কাহার হাসি,
কইছে আমার মনের দ্বারে, কোন্ পিয়ারী ভালোবাসি।
লজ্জানত অাঁখির কোণে অভিমানের অশ্রু জাগে,
অভিসারের যায় যে বেলা, কয় সে আপন মনের ফাঁকে।
দঃ হাঃ। তুমি কতক্ষণ এসেছো বকুল?
বকুল। নিশাশেষে সখী বাসন্তিকা যখন এলো তা’র অভিসারে তখন আমারও মন চঞ্চল হোয়ে উঠ্লো তোমার জন্য। সখীকে ঋতুকুঞ্জে পৌঁছে দিয়েই এলাম আমি তোমার অন্বেষণে।
দঃ হাঃ। এসে কি দেখ্লে?
বকুল। দেখলাম প্রকৃতি নীরব, নিথর, স্পন্দনহীন, হাওয়ার রেশ সেখানে নাই। কুঞ্জে কুঞ্জে কোয়েলা ডেকে উঠ্লো আমার আগমনে, কিন্তু তোমার ছোঁয়াচ্ ত লাগ্লো না আমার বুকে।
দঃ হাঃ। তখন, তখন, তুমি কি কোরলে?
বকুল। চারিদিকে ব্যর্থ অন্বেষণের পর আকুলস্বরে তোমায় ডাক্তে লাগলাম, তা’রপর—
দঃ হাঃ। তা’রপর, তা’রপর তোমার সে গানের আকুলতায় আমার অলস তন্দ্রা টুটে গেল, আমি আর স্থির থাক্তে পারলাম না; তাই ছুটে এলাম তোমায় ধরা দিতে।
( গান )
ভোর না হোতে কাহার চাওয়া লাগ্লো আমার বুকে।
ঘুমিয়েছিলাম তখন আমি গভীর স্বপন-সুখে।
তোমার ও গান করুণসুরে,
ডাক দিল মোর মানসপুরে,
অভিসারের পথে আমি ঝাঁপিয়ে এলাম সুখে।
বকুল। কিন্তু এই মুহূর্ত্তে তোমায় কাছে পেয়ে আমার খুব ভালো লাগ্ছে। এই ভালো লাগার জন্য তোমার এ গুরুতর অপরাধ আমি ক্ষমা করলাম। কথায় কথায় অনেক বেলা হোয়ে গেল, ঋতুকুঞ্জে সখী বাসন্তিকার আজ আগমনী উৎসব। আমাদের বিলম্বে সখী হয়ত অধীরা হোয়ে পড়েছে, আমরা না গেলে যে তা’র উৎসব পূর্ণ হোতে পারে না।
দঃ হাঃ। হাঁ, হাঁ, চল।
( গান )
চল বকুল গন্ধ আকুল,
উড়িযে দখিন্ বায়;
আঁচলখানি রাঙ্গিয়ে নিয়ে
প্রেমের অলকায়!
বকুল—সেই আশাতেই বাঁধন-দড়ি
সরিয়ে নিলাম হায়!
যেতে হ’বে অনেক দূরে
ল’য়ে মলয় বায়।
(দুজন)—যেতে হ’বে অনেক দূরে
প্রেমের অলকায়।