বিদ্যাসাগর/পঞ্চবিংশ অধ্যায়

উইকিসংকলন থেকে

পঞ্চবিংশ অধ্যায়।

মেট্রপলিটন।

 ১২৭৬ সালে বা ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দে “ট্রেণিং-স্কুলের”র চিতাভস্মের উপর বিদ্যাসাগরের কীর্ত্তিস্তম্ভ “মেট্রপলিটন ইনষ্টিটিউশন” প্রতিষ্ঠিত হয়। ৺ঠাকুরদাস চক্রবর্ত্তী, ৺যাদবচন্দ্র পালিত, ৺বৈষ্ণবচরণ আঢ্য, ৺মাধবচন্দ্র ধাড়া, ৺পতিতপাবন সেন এবং ৺গঙ্গাচরণ সেন কর্ত্তৃক ১৮৫৯ খৃষ্টাব্দে কলিকাতা শঙ্কর ঘোষের লেনে “ট্রেণিং স্কুল” প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। বিখ্যাত কবি ৺হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকতার ভার প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। কলিকাতার বহুবাজারের দত্ত পরিবার এই স্কুলের লাইব্রেরীর জন্য অনেক পুস্তক দান করিয়াছিলেন। বিখ্যাত ধনী ৺শ্যামাচরণ মল্লিক অন্যরূপ সাহায্য করিতেন। সংস্কৃত কলেজের প্রিন্সিপাল-পদ ত্যাগ করিলে পর বিদ্যাসাগর মহাশয় এই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতৃগণ কর্ত্তৃক অনুরুদ্ধ হইয়া স্কুলের সেক্রেটরীপদে নিযুক্ত হন। এই সময় ঐ স্কুল পরিচালনার্থ একটী কমিটী হয়। এই কমিটী ১৮৬২ খৃষ্টাব্দের মার্চ্চ মাস পর্য্যন্ত নির্ব্বিবাদে ও নির্বিঘ্নে স্কুল পরিচালিত করিয়াছিলেন। এই সময় সভ্যদের মনোমালিন্য উপস্থিত হয়। বিদ্যালয়ের কোন সভ্যের চরিত্রদোষসন্দেহে সেই মনোমালিন্য। স্কুলগৃহে এক দিন একটী মাকড়ী পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে প্রকাশ পাইল, এক জন সভ্য রাত্রিযোগে স্কুলগৃহে বেশ্যা আনিতেন। মাকড়ী সেই বেশ্যারই। মনোমালিন্যের মূলোৎপত্তি এইখানেই। পরে যাঁহার উপর সন্দেহ হয়, তাঁহারই কোন প্রিয় পোষ্য শিক্ষকের পদচ্যুতি লইয়া মতান্তর পাকাপাকি হইয়া উঠিয়াছিল। এই সময় বিদ্যাসাগর মহাশয় স্কুলের সেক্রেটরীপদ পরিত্যাগ করেন। ৺ঠাকুরদাস চক্রবর্তী এবং মাধবচন্দ্র ধাড়া “ট্রেণিং স্কুলে”র বেঞ্চি, চেয়ার প্রভৃতি সরঞ্জাম স্থানান্তরে লইয়া গিয়া, “ট্রেণিং একাডেমি” নামক একটা নূতন স্কুল স্থাপিত করেন। ট্রেনিং স্কুলের অবশিষ্ট অধিষ্ঠাতৃগণ, বিদ্যাসাগর মহাশয়, রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ, রমানাথ ঠাকুব, হীরালাল শীল, রামগোপাল ঘোষ এবং রায় হরচন্দ্র ঘোষ বাহাদুরকে স্কুল পরিচালনের ভার গ্রহণ করিতে অনুরোধ করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় ব্যতীত আর সকলেই ভার গ্রহণে সম্মত হন। বিদ্যাসাগর মহাশয় বলেন, “আর তাঁবেদারীতে কাজ করিতে প্রবৃত্তি হয় না।” প্রতিষ্ঠাতৃগণ বলিলেন—“তাঁবেদারী করিতে হইবে না; স্কুল আপনারই হইল; আমরা পৃষ্ঠপোষক রহিলাম মাত্র।” অনেক সাধাসাধনায় বিদ্যাসাগর মহাশয় ভার গ্রহণ করেন।

 ১২৬৮ সালের বৈশাখ বা ১৮৬১ খৃষ্টাব্দের এপ্রেল মাসে উপরোক্ত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগণ লইয়া একটা কমিটী হয়। রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ সভাপতি ও বিদ্যাসাগর মহাশয় সেক্রেটরী হইয়াছিলেন। ১৮৬১ খৃষ্টাব্দেব নবেম্বর মাসে রায় হরচন্দ্র ঘোষ ও বিদ্যাসাগর মহাশয়ের নামে বাঙ্গাল ব্যাঙ্কে হিসাব খোলা হয়। ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দে “ট্রেনিং স্কুলের” নাম “হিন্দু মেট্রপলিটন ইনষ্টিটিউশন” হয়। ১৮৬৮ খৃষ্টাব্দে মেট্রপলিটনের ভার একা বিদ্যাসাগর মহাশয়ের হস্তে নিপতিত হয়।

 প্রথম মেট্রপলিটনের জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয়কে নিজের অনেক অর্থ ব্যয় করিতে হইয়াছিল। বিদ্যালয়ের বেতন উচ্চশ্রেণী হইতে নিম্নশ্রেণী পর্যন্ত ৩৲ টাকা ছিল বটে, কিন্তু অনেক ছাত্রকেই বিনা বেতনে পড়াইতে হইয়াছিল। নবপ্রতিষ্ঠিত “ট্রেণিং একাডেমি” তখন “মেট্রপলিটনে”র ঘোর প্রতিদ্বন্দ্বী হইয়াছিল। মেট্রপলিটনের পসার-প্রতিপত্তি শীঘ্রই বাড়িয়া যায়। ক্রমে ছাত্রসংখ্যা বাড়িতে থাকে। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অটুট যত্ন ও অধ্যবসায়ে এবং অনন্যপূর্ব্ব শিক্ষাপ্রণালী-গুণে “মেট্রপলিটন” একটা উচ্চশ্রেণীর ইংরেজী বিদ্যালয়ের মধ্যে পরিগণিত হয়। ক্রমে স্কুলের আয়ে স্কুলের কার্য্যনির্ব্বাহ ধাহ হইতে থাকে। তাঁহাকে ইহার জন্য ঘরের পয়সা বাহির করিতে হইত না। স্কুলের পয়সা তিনি কখন ঘরে লইয়া যান নাই।

 প্রথম প্রথম ৺ধারকানাথ মিত্র এবং কৃষ্ণদাস পাল এই স্কুল পরিচালন সম্বন্ধে বিদ্যাসাগর মহাশয়কে সাহায্য করিতেন। ইঁহারাও স্কুলের ম্যানেজার ছিলেন। স্কুলে এফ, এ, ক্লাস খুলিবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিণ্ডিকেটে যে আবেদন করা হয়, সেই আবেদনপত্রে ম্যানেজার বলিয়া ইঁহাদের স্বাক্ষর ছিল।

 ইংরেজী শিক্ষায় বহু হিন্দুসন্তানের নানা কারণে কুপ্রবৃত্তির উদ্রেক হয়। ইহা দেশের দুর্ভাগ্য; কিন্তু ইংরেজী এখন হইয়াছে অর্থকরী বিদ্যা। এই ইংরেজী শিক্ষাপ্রসারণের কৃতিত্ব বিদ্যাসাগর মহাশয় বহু কষ্টেই লাভ করিয়াছেন। মেট্রপলিটনের শিক্ষকতায় অনেক এদেশী ইংরেজী শিক্ষিত ব্যক্তির অর্ধার্জ্জনের উপায় সংস্থান হইয়াছে। মধ্যবিত্ত গৃহস্থ লোকেরা ইংরেজী বিদ্যার্জ্জনের সুলভ পথ পাইয়াছে। ইংরেজী শিক্ষা ভিন্ন উদরান্নের সংস্থান হওয়া আজ কাল দুষ্কর হইয়া পড়িয়াছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় ইংরেজী বিদ্যাপ্রসারণের প্রশস্ততর পথ আবিষ্কার করিয়া যে এ যুগে যশস্বী হইবেন, তা আর বিচিত্র কি? তিনি যে আপন বিদ্যালয়ে ইংরেজ শিক্ষক বা অধ্যাপক নিযুক্ত না করিয়া এদেশীয় শিক্ষক বা অধ্যাপক নিযুক্ত করিতেন, তাহাতে তাঁহার স্বদেশিপোষকতা-প্রবৃত্তির পরিচয় পাই। এদেশী শিক্ষক লইয়া বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দিগ্বিজয়ী।

 পাশ্চাত্য বিদ্যার উৎকর্ষসাধন পক্ষে যে প্রণালী ও পদ্ধতির প্রয়োজন, বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহাতে সিদ্ধহস্ত। পরাধীন অবস্থাতেও সংস্কৃত কলেজে তিনি তাহার চুড়ান্ত পরিচয় দিয়াছিলেন। স্বাধীন অবস্থায় নিজের বিদ্যালয়ে যে তিনি সে সম্বন্ধে অভাবনীয় কৃতিত্ব প্রদর্শন করিবেন, তাহা বলা বাহুল্যমাত্র। এখানে ত আর প্রভূদিগের রোষ কষায়িত কটাক্ষবিক্ষেপের বা শাসনসূচক তর্জ্জনী-তাড়নার বিড়ম্বনা ভোগ করিতে হয় নাই। সত্য সত্যই তাঁহার কৃতিত্বের যশ এখন বিশ্বব্যাপী। অধুনা এদেশীয় অনেক ব্যক্তি ইংরেজী বিদ্যা প্রচারার্থে সেই প্রণালী-পদ্ধতির পথানুসারী। যখন বিদ্যাসাগর যে কোন ইংরেজী বিদ্যাবিশারদ এদেশী লোক পাইতেন, তখনই তাঁহাকে নিজের বিদ্যালয়ে নিযুক্ত করিতেন। বালকদিগের প্রতি কটু ব্যবহার করিবার বা বেত্রাদি দণ্ড দিবার অধিকার কোন শিক্ষকেরই ছিল না। অথচ প্রায় কোন শিক্ষকেই ছাত্রদিগের দুরন্ত দুর্দ্দমনীয়তার জন্য অভিযোগ করিতে হইত না। যখন কোন ছাত্র দুর্দ্দান্ত হইয়া উঠিত, তখন তাহাকে বিদ্যালয় হইতে তাড়াইয়া দেওয়া হইত। এমন কি কখনও কখনও অবিনয়ের অপরাধে কোন কোন শ্রেণীর সমুদায় ছাত্র বিতাড়িত হইত। বিদ্যাসাগর মহাশয় ছাত্রদিগকে, শিক্ষকগণকে এবং ভৃত্য ও অন্যান্য কর্মচারিগণকে সততই সস্নেহ দৃষ্টিতে অবলোকন করিতেন। আমরা জানি, একবার স্কুলের ছাত্রগণ তাঁহার নিকট পৌষ-পার্ব্বণের ছুটি চাহে। বিদ্যাসাগর মহাশয় ছুটী মঞ্জুর করেন; পরস্তু ছাত্র বৃন্দকে সহাস্যে সস্নেহে বলেন,—“তোমাদের অনেকের ত বিদেশে বাড়ী; কলিকাতার বাসায় পিঠে পাইবে কোথায়?” বালকেরা বলিল,—“আপনার বাটীতে।” বিদ্যাসাগর মহাশয় হাসিয়া বলিলেন,—“ভাল, তাহাই হইবে।” তিনি বালকদিগের জন্য বাড়ীতে প্রচুর পিষ্টকের উদ্যোগ করিয়াছিলেন।

 স্বচক্ষে বিদ্যালয়-পরিদর্শন করা তাঁহার একটা স্বাভাবিক অভ্যাস ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয় কোন কার্য্যের ভার অপরের হস্তে দিয়া নিশ্চিন্ত থাকিতেন না। যাহা কিছু করিবার তিনি স্বয়ংই তাহা করিতেন। রুগ্নদেহেও পরনির্ভরতা তাঁহাকে আদৌ স্পর্শ করিতে পারে নাই। এইজন্য এক্ষণে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রকৃত শিষ্য দুষ্প্রাপ্য।

 যখন বিদ্যাসাগর মহাশয়, স্কুল-পরিদর্শনে আসিতেন, তখন তিনি কাহাকেও ‘পূর্বাহ্নে’ তাহা জানিতে দিতেন না। অধ্যাপক অধ্যাপনায় গাঢ় মনোনিবিষ্ট হইয়া আছেন, এমন সময় হয়ত তিনি ধীরে ধীরে আসিয়া, তাঁহাব পশ্চাদ্ভাগে দণ্ডায়মান থাকিতেন। কোন ক্রমে শিক্ষক বা অধ্যাপক, তাঁহাকে দেখিতে পাইয়া সসম্ভ্রমে দণ্ডায়মান হইলে, তিনি বলিতেন,—“তুমি পড়াইতে পড়াইতে উঠিও না; তোমার কর্ত্তব্য তুমি পালন কর। আমার খাতির করিতে গিয়া, তোমার যেন কর্ত্তব্য-ত্রুটি না হয়।” কখনও কোন ছাত্রকে নিদ্রিত দেখিলে, তিনি তাহাকে স্থানান্তরে নিদ্রা যাইবার ব্যবস্থা করিয়া দিতন। স্কুল-পরিদর্শনে তাঁহার নিয়মিত কোন সময় ছিল না; কাজেই ছাত্র, অধ্যাপক, সকলকেই সতত সাধানে থাকিতে হইত। সেই জন্য কোন ক্রমে কোন সময়ে কাহারও কোন বিষয়ে অমনোযোগিতার সম্ভাবনা ছিল না। শিক্ষার চরমোৎকর্ষও সেই সঙ্গে হইযাছিল। স্কুলের শিক্ষক বা অধ্যাপক কান কার্য্যসূত্রে স্কুলের কার্য্যান্তে বাড়ীতে তাঁহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে যাইলে, তিনি সর্বকর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া সর্বাগ্রে তাঁহাকে জলযোগ করাইতেন। এমন শুনিয়াছি যে, তিনি স্বহস্তে আম কাটিয়া খাওয়াইতেন। স্কুলের কোন ভৃত্যের কোনরূপ অসুখ হইলে সর্ব্বকর্ম্ম পরিত্যাগ করিয়া তিনি তাহার চিকিৎসা করাইতেন। বিদ্যালয়ের পুরাতন দ্বারবান কাশীর একটা বিষম স্ফোটকে মৃত্যু হইয়াছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়কে কাশী তাহার ব্যারামের কথা আদৌ জানায় নাই। বিদ্যাসাগর মহাশয় তাহার মৃত্যুর পর, তাহার ব্যারামের কথা জানিতে পারিয়াছিলেন। ইহার পর হইতে তিনি স্কুলের কর্ম্মচারিবর্গের চিকিৎসার্থ এক জন ডাক্তার নিযুক্ত করিয়াছিলেন। এইরূপ তাঁহার অকৃত্রিম সহৃদয়তায় এবং শিক্ষাপ্রণালীর সুশৃঙ্খলায় তাঁহার বিদ্যালয় প্রকৃতপক্ষে সবিশেষ প্রতিপত্তিশালী হইয়াছিল। এ প্রতিপত্তিরও মূলাধার, বিদ্যাসাগরের সাহস, উদ্যম, উৎসাহ ও একাগ্রতা।

 মেট্রপলিটনের বেতন ৩৲ তিন টাকা। অনেকেই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অনুগ্রহে বিনা বেতনে পড়িত। কেহ কেহ তাঁহাকে বঞ্চনাও করিতেন। কলিকাতা সহরের কোন লক্ষপতি বিদ্যাসাগর মহাশয়কে বলিয়া কহিয়া আপনার শ্যালককে বিনা বেতনে স্কুলে ভর্তি করিয়া দেন। অবশ্য বিদ্যাসার মহাশয় জানিতে পারেন নাই, এটী লক্ষপতির শ্যালক; পরন্তু জানিয়াছিলেন, সে অতি দরিদ্র। একদিন বিদ্যাসাগর মহাশয় স্কুলে গিয়া দেখেন, শ্যালকটী দিব্য পরিচ্ছদে ভূষিত; রসগোল্লা পান্তুয়া প্রভৃতি বহু উপাদেয় দ্রবা জলযোগ করিতেছে। বিদ্যাসাগর মহাশয় ইহাতে বিস্ময়ান্বিত হন। পরে তিনি অনুসন্ধানে শ্যালকের প্রকৃততত্ত্ব জানিতে পারেন। তাহার পর সেই লক্ষপতির নিকট গিয়া তিনি বলেন,—“আমার সঙ্গে বঞ্চনা? তোমায় ধিক্! কি কবিয়া তুমি শ্যালকটিীকে বিনা বেতনে স্কুলে ভর্ত্তি করিলে?” লক্ষপতি নির্ব্বাক। শ্যালকটী স্কুল হইতে বিতাড়িত হইয়াছিল।

 মেট্রপলিটনের জন্য বিদ্যাসাগর মহাশয়কে একবার দেওয়ানী মোকদ্দমায় আসামী হইতে হইয়াছিল। মেট্রপলিটন পাথুরিয়া ঘাটার জমীদাবি ৺খেলচ্চন্দ্র ঘোষের ভাড়াটীয়া বাটীতে ছিল। ভাড়া পাওনার দরুণ খেলৎ বাবু, হাইকোর্টে নালিশ করিয়াছিলেন। আসমী হইয়াছিলেন, রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ এবং বিদ্যাসাগর মহাশয়। বাড়ী মেরামত করিবার কথা ছিল। মেরামত হয় নাই বলিয়া, ভাড়া দেওয়া হয় নাই। মোকদ্দমা রুজু হইবার পূর্ব্বে ৺রমানাথ ঠাকুর, হীরালাল শীল ও রামগোপাল ঘোষ গোলযোগ মিটাইবার চেষ্টা করেন। খেলৎ বাবু যাহা চাহেন, ইঁহারা তাহাই দিতে বলেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় ও অন্য মেম্বরগণ তাহাতে রাজি হন নাই। এইজন্য শুনা যায়, রমানাথ ঠাকুর, হীরালাল শীল ও রামগোপাল ঘোষ স্কুলের সম্পর্ক ছাড়িয়া দেন। ১২৭১ সালের ১লা চৈত্র বা ১৮৬৫ খৃষ্টাব্দের ১৩ই মার্চ্চ, বিদ্যাসাগর মহাশয়, স্কুলের অবৈতনিক সেক্রেটারীরূপে খেলৎ বাবুকে এই মর্ম্মে ইংরেজীতে পত্র লিখিয়াছিলেন,—

 “আমি ভাড়ার হিসাবে একেবারে পাঁচ শত টাকা দিতে পারি না। তবে বিল পাঠাইলে মাসিক ভাড়ার হিসাবে বাকি পাওনা ভাড়া দিতে পারি।” যাহা হউক, অবশেষে সকল গোল মিটিয়া গিয়াছিল।

 ১২৭১ সালে বা ১৮৬৪ খৃষ্টাব্দে আখ্যানমঞ্জরীর প্রথম ভাগ প্রণীত, মুদিত ও প্রকাশিত হয়। চরিতাবলী ও জীবনচরিত সম্বন্ধে যে মত, আধ্যানমঞ্জরী সম্বন্ধেও সেই মত।