বিষয়বস্তুতে চলুন

বিবিধ কাব্য (১৯৪০)/নীতিগর্ভ কাব্য — রসাল ও স্বর্ণ-লতিকা

উইকিসংকলন থেকে


রসাল ও স্বর্ণ-লতিকা

রসাল কহিল উচ্চে স্বর্ণলতিকারে;—
“শুন মোর কথা, ধনি, নিন্দ বিধাতারে!
নিদারুণ তিনি অতি;
নাহি দয়া তব প্রতি;
তেঁই ক্ষুদ্র-কায়া করি সৃজিলা তোমারে!

মলয় বহিলে, হায়,
নতশিরা তুমি তায়,
মধুকর-ভরে তুমি পড় লো ঢলিয়া;
হিমাদ্রি সদৃশ আমি,
বন-বৃক্ষ-কুল-স্বামী,
মেঘলোকে উঠে শির আকাশ ভেদিয়া!
কালাগ্নির মত তপ্ত তপন তাপন,—
আমি কি লো ডরাই কখন?
দূরে রাখি গাভী-দলে,
রাখাল আমার তলে
বিরাম লভয়ে অনুক্ষণ,—
শুন, ধনি, রাজ-কাজ দরিদ্র পালন!
আমার প্রসাদ ভুঞ্জে পথ-গামী জন।
কেহ অন্ন রাঁধি খায়
কেহ পড়ি নিদ্রা যায়
এ রাজ-চরণে।
শীতলিয়া মোর ডরে
সদা আসি সেবা করে
মোর অতিথির হেথা আপনি পবন!
মধু-মাখা ফল মোর বিখ্যাত ভুবনে!
তুমি কি তা জান না, ললনে?
দেখ মোর ডাল-রাশি,
কত পাখী বাঁধে আসি
বাসা এ আগারে।
ধন্য মোর জনম সংসারে।
কিন্তু তব দুখ দেখি নিত্য আমি দুখী;
নিন্দ বিধাতায় তুমি, নিন্দ, বিধুমুখি!”

* * * মধুর স্বরে
* * * * রে
* * * * * * * *;
* * * * * * * * *
* * * প্রভু
* * * দয়ামি * *
* * * যথা * *
যুদ্ধার্থ গম্ভীরতার বাণী তব পানে!
সুধা-আশে আসে আলি,
দিলে সুধা যায় চলি,—
কে কোথা কবে গো দুখী সখীর মিলনে?”
“ক্ষুদ্র-মতি তুমি অতি”
রাগি কহে তরুপতি,
“নাহি কিছু অভিমান? ধিক্‌ চন্দ্রাননে!”
নীরবিলা তরুরাজ; উড়িল গগনে
যমদূতাকৃতি মেঘ গম্ভীর স্বননে;
আইলেন প্রভঞ্জন,
সিংহনাদ করি ঘন,
যথা ভীম ভীমসেন কৌরব-সমরে।
আইল খাইতে মেঘ দৈত্যকুল রড়ে;
ঐরাবত পিঠে চড়ি
রাগে দাঁত কড়মড়ি,
ছাড়িলেন বজ্র ইন্দ্র কড় কড় কড়ে!
ঊরু ভাঙ্গি কুরুরাজে বধিলা যেমতি
ভীম যোধপতি;
মহাঘাতে মড় মড়ি
রসাল ভূতলে পড়ি,

হায়, বায়ুবলে
হারাইলা আয়ু-সহ দর্প বনস্থলে!
উর্দ্ধশির যদি তুমি কুল মান ধনে;
করিও না ঘৃণা তবু নীচশির জনে!
এই উপদেশ কবি দিলা এ কৌশলে।