পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (প্রথম সম্ভার).djvu/২০২: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
→‎মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি: "করিয়া দিয়া, নিরতিশয় কটুকণ্ঠে বলিয়া ফেলিল, মেয়েমানু..." দিয়ে পাতা �
 
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
 
(কোনও পার্থক্য নেই)

২২:০৫, ১০ জুলাই ২০১৮ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিয়া দিয়া, নিরতিশয় কটুকণ্ঠে বলিয়া ফেলিল, মেয়েমানুষ জাতটাই এমনি নেমকহারাম।

বিজয়া পা বাড়াইয়াছিল, বিদ্যুদ্বেগে ফিরিয়া দাঁড়াইয়া, পলকমাত্র এই বর্বরটার মুখের প্রতি তীক্ষ্ম দৃষ্টিপাত করিয়া, নিঃশব্দে ধীরে ধীরে ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গেল; এবং সঙ্গে সঙ্গে বিলাস শুষ্ক হইয়া উঠিল।

সে যে পিতৃভক্তির আতিশয্যবশতঃই বিবাদ করিতেছিল, এ ভ্রম যেন কেহ না করেন। এ সকল লোকের স্বভাবই এই যে, ছিদ্র পাইলেই তাহাকে নিরর্থক বড় করিয়া দুর্বলকে পীড়া দিতে, ভীতুকে আরও ভয় দেখাইয়া ব্যাকুল করিয়া তুলিতেই আনন্দ অনুভব করে—তা সে যাই থাক এবং হেতু যত অসংলগ্নই হোক। কিন্তু বিজয়া যখন তিলার্ধ অবনত না হইয়া তাহাকেই তুচ্ছ করিয়া দিয়া ঘৃণাভরে চলিয়া গেল, তখন এই গায়ে-পড়া কলহের সমস্ত ক্ষুদ্রতা তাহাকে তাহার নিজের কাছেও অত্যন্ত ছোট করিয়া ফেলিল। সে খানিকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া, মুখখানা কালি করিয়া আস্তে আস্তে বাড়ি চলিয়া গেল।

অপরাহ্নকালে রাসবিহারী ছেলে সঙ্গে করিয়া দেখা করিতে আসিলেন। বলিলেন, কাজটা ভাল হয়নি মা। আমার হুকুমের বিরুদ্ধে হুকুম দেওয়ায় আমাকে ঢের বেশী অপ্রতিভ করা হয়েছে। তা যাক, বিষয় যখন তোমার, তখন এ কথা নিয়ে আর অধিক ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাইনে। কিন্তু বারংবার এ রকম ঘটলে আত্মসম্মান বজায় রাখবার জন্যে আমাকে তফাত হতেই হবে, তা জানিয়ে রাখছি।

বিজয়া কোন উত্তর দিল না; বরঞ্চ মৌনমুখে সে অপরাধটা একরকম স্বীকার করিয়াই লইল। রাসবিহারী তখন কোমল হইয়া বিষয়-সংক্রান্ত অন্যান্য কথাবার্তা তুলিলেন। নূতন তালুকটা খরিদ করিবার আলোচনা শেষ করিয়া বলিলেন, জগদীশের দরুন বাড়িটা যখন তুমি সমাজকেই দান করলে মা, তখন আর বিলম্ব না করে এই পূজার ছুটিটা শেষ হলেই তার দখল নিতে হবে—কি বল?

বিজয়া ঘাড় নাড়িয়া কহিল, আপনি যা ভাল বুঝবেন,তাই হবে। টাকা পরিশোধ করবার মেয়াদ ত তাঁদের শেষ হয়ে গেছে!

রাসবিহারী কহিলেন, অনেক দিন। জগদীশ তার সমস্ত খুচরা ঋণ ত্রকত্র করবার জন্যে তোমার বাবার কাছে আট বছরের কড়ারে দশ হাজার টাকা কর্জ নিয়ে কবালা লিখে দেয়। শর্ত ছিল, এর মধ্যে শোধ দিতে পারে ভালই; না পারে, তার বাড়ি-বাগান-পুকুর—তার সমস্ত সম্পত্তিই আমাদের। তা আট বৎসর পার হয়ে এটা ত নয় বৎসর চলছে মা।