পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
JoyBot (আলোচনা | অবদান)
OCRed
 
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
(কোনও পার্থক্য নেই)

১৬:৪৩, ১১ জুলাই ২০১৮ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"ই3৪ - গল্পগুচ্ছ গাহনিমিত খয়ের আনিয়া নিয়মিত সময়ে তাঁহার বারে আসিয়া উপস্থিত হইত। প্রথম দিনকতক দেখিল, শশিভূষণ একখানা চিয়হীন প্রকাণ্ড কঠোরমতি গ্রন্থ খলিয়া অন্যমনকভাবে পাতা উলটাইতেছেন, সেটা যে মনোযোগ দিয়া পাঠ করিতেছেন তাহাও বোধ হইল না। অন্য সময়ে শশিভূষণ যে-সকল গ্রন্থ পড়িতেন তাহার মধ্য হইতে কোনো না কোনো অংশ গিরিবালাকে বঝাইবার চেষ্টা করিতেন, কিন্তু ঐ পথািলকায় কালো মলাটের পাতক হইতে গিরিবালাকে শনাইবার যোগ্য কি দটো কথাও ছিল না। তা না থাক, তাই বলিয়া ঐ বইখানি কি এতই বড়ো আর গিরিবালা কি এতই ছোটো । প্রথমটা, গরর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গিরিবালা সরে করিয়া, বানান করিয়া, বেণী-সমেত দেহের উত্তরাধ সবেগে দলাইতে দলাইতে উচ্চৈঃস্বরে আপনিই পড়া আরম্ভ করিয়া দিল। দেখিল তাহাতে বিশেষ ফল হইল না। কালো মোটা বইখানার উপর মনে মনে অত্যন্ত চটিয়া গেল। ওটাকে একটা কুৎসিত কঠোর নিষ্ঠর মানুষের মতো করিয়া দেখিতে লাগিল। ঐ বইখানা যে গিরিবালাকে বালিকা বলিয়া সম্পণে অবজ্ঞা করে তাহা যেন তাহার প্রত্যেক দুবোধ পাতা দন্ট মানুষের মুখের মতো আকার ধারণ করিয়া নীরবে প্রকাশ করিতে লাগিল। সেই বইখানা যদি কোনো চোরে চুরি করিয়া লইয়া যাইত তবে সেই চোরকে সে তাহার মাতৃভাণ্ডারের সমস্ত কেয়াখয়ের চুরি করিয়া পরস্কার দিতে পারিত। সেই বইখানার বিনাশের জন্য সে মনে মনে দেবতার নিকট যে-সকল অসংগত ও অসম্ভব প্রার্থনা করিয়াছিল তাহা দেবতারা শানেন নাই এবং পাঠকদিগকেও শনাইবার কোনো আবশ্যক দেখি না। তখন ব্যথিতহাদয় বালিকা দই-একদিন চারপাঠ হতে গরগাহে গমন বন্ধ করিল। এবং সেই দুই-একদিন পরে এই বিচ্ছেদের ফল পরীক্ষা করিয়া দেখিবার জন্য সে অন্য ছলে শশিভূষণের গহসন্মুখবতী পথে আসিয়া কটাক্ষপাত করিয়া দেখিল, শশিভূষণ সেই কালো বইখানা ফেলিয়া একাকী দাঁড়াইয়া হাত নাড়িয়া লোহার গরাদেগলার প্রতি বিজাতীয় ভাষায় বস্তৃতা প্রয়োগ করিতেছেন। বোধ করি, বিচারকের মন কেমন করিয়া গলাইবেন এই লোহাগলার উপর তাহার পরীক্ষা হইতেছে। সংসারেঅনভিজ্ঞ গ্রন্থবিহারী শশিভূষণের ধারণা ছিল যে, পরাকালে ডিমসিথনীস সিসিরো বাকী শেরিডন প্রভৃতি বাগ্মীগণ বাক্যবলে যে-সকল অসামান্য কায করিয়া গিয়াছেন— যেরপে শব্দভেদী শর-বষণে অন্যায়কে ছিন্নভিন্ন, অত্যাচারকে লাঞ্ছিত এবং অহংকারকে ধলিশায়ী করিয়া দিয়াছেন, আজিকার দোকানদারির দিনেও তাহা অসম্ভব নহে। প্রভুত্বমদগবিত উদ্ধত ইংরাজকে কেমন করিয়া তিনি জগৎসমক্ষে লজিত ও অনতপ্ত করিবেন, তিলকুচি গ্রামের জীণ ক্ষুদ্র গহে দাঁড়াইয়া শশিভূষণ তাহারই চর্চা করিতেছিলেন। আকাশের দেবতারা শনিয়া হাসিয়াছিলেন কি তাঁহাদের দেবচক্ষ অশ্রুসিক্ত হইতেছিল, তাহা কেহ বলিতে পারে না। সতরাং সেদিন গিরিবালা তাঁহার দস্টিপথে পড়িল না; সেদিন বালিকার অঞ্চলে জাম ছিল না ; পাবে একবার জামের আটি ধরা পড়িয়া অবধি ঐ ফল সম্বন্ধে সে . অত্যন্ত সংকুচিত ছিল। এমন-কি, শশিভূষণ যদি কোনোদিন নিরীহ ভাবে জিজ্ঞাসা করিত, “গিরি, আজ জাম নেই?” সে সেটাকে গড় উপহাস জ্ঞান করিয়া সক্ষোভে