পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/১৫৯: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
গেলাম; শুধু এইটাতেই বরাবর খোঁড়াইতে লাগিলাম। এটা কোনদিনই নিজের কাছে সহজ এবং রুচিকর করিয়া তুলিতে পারিলাম না, তবে এই একটা সুবিধা ছিল—সেটা হিন্দুস্থানীদের দেশ! আমি ভাল-মন্দর কথা বলিতেছি না; আমি বলিতেছি, বাঙ্গলা দেশের মত সেখানকার মেয়েরা ‘হাতজোড়া—আর একবাড়ী এগিয়ে দেখ’ বলিয়া উপদেশ দিত না, এবং পুরুষেরাও চাক্‌রি না করিয়া ভিক্ষা করি কেন, তাহার কৈফিয়ৎ তলব করিত না। ধনি-দরিদ্র-নির্ব্বিশেষে প্রতি গৃহস্থই সেখানে ভিক্ষা দিত—কেহই বিমুখ করিত না। এম্‌নি দিন যায়। দিন-পনর ত সেই আম বাগানের মধ্যেই কাটিয়া গেল। দিনের-বেলা কোন বালাই নাই, শুধু রাত্রে মশার কামড়ের জ্বালায় মনে হইত—থাক্‌ মোক্ষসাধন! গায়ের চামড়া আর একটু মোটা করিতে না পারিলে ত আর বাঁচি না! অন্যান্য বিষয়ে বাঙালী যত সেরাই হোক্, এ বিষয়ে বাঙালীর চেয়ে হিন্দুস্থানী চাম্‌ড়া যে সন্ন্যাসের পক্ষে ঢের বেশি অনুকূল, তাহা স্বীকার করিতেই হইবে। সেদিন প্রাতঃস্নান করিয়া সাত্ত্বিকভোজনের চেষ্টায় বহির্গত হইতেছি, গুরুমহারাজ ডাকিয়া বলিলেন—
গেলাম; শুধু এইটাতেই বরাবর খোঁড়াইতে লাগিলাম। এটা কোনদিনই নিজের কাছে সহজ এবং রুচিকর করিয়া তুলিতে পারিলাম না, তবে এই একটা সুবিধা ছিল—সেটা হিন্দুস্থানীদের দেশ! আমি ভাল-মন্দর কথা বলিতেছি না; আমি বলিতেছি, বাঙ্গলা দেশের মত সেখানকার মেয়েরা ‘হাতজোড়া—আর একবাড়ী এগিয়ে দেখ’ বলিয়া উপদেশ দিত না, এবং পুরুষেরাও চাক্‌রি না করিয়া ভিক্ষা করি কেন, তাহার কৈফিয়ৎ তলব করিত না। ধনি-দরিদ্র-নির্ব্বিশেষে প্রতি গৃহস্থই সেখানে ভিক্ষা দিত—কেহই বিমুখ করিত না। এম্‌নি দিন যায়। দিন-পনর ত সেই আম বাগানের মধ্যেই কাটিয়া গেল। দিনের-বেলা কোন বালাই নাই, শুধু রাত্রে মশার কামড়ের জ্বালায় মনে হইত—থাক্‌ মোক্ষসাধন! গায়ের চামড়া আর একটু মোটা করিতে না পারিলে ত আর বাঁচি না! অন্যান্য বিষয়ে বাঙালী যত সেরাই হোক্, এ বিষয়ে বাঙালীর চেয়ে হিন্দুস্থানী চাম্‌ড়া যে সন্ন্যাসের পক্ষে ঢের বেশি অনুকূল, তাহা স্বীকার করিতেই হইবে। সেদিন প্রাতঃস্নান করিয়া সাত্ত্বিকভোজনের চেষ্টায় বহির্গত হইতেছি, গুরুমহারাজ ডাকিয়া বলিলেন—


{{block centre|“ভরদ্বাজ মুনি বসহিঁ প্রয়াগা<br>
{{block center|“ভরদ্বাজ মুনি বসহিঁ প্রয়াগা<br>
যিনহি রামপদ অতি অনুরাগা—”}}
যিনহি রামপদ অতি অনুরাগা—”}}



১১:২৭, ১৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৭
শ্রীকান্ত

গেলাম; শুধু এইটাতেই বরাবর খোঁড়াইতে লাগিলাম। এটা কোনদিনই নিজের কাছে সহজ এবং রুচিকর করিয়া তুলিতে পারিলাম না, তবে এই একটা সুবিধা ছিল—সেটা হিন্দুস্থানীদের দেশ! আমি ভাল-মন্দর কথা বলিতেছি না; আমি বলিতেছি, বাঙ্গলা দেশের মত সেখানকার মেয়েরা ‘হাতজোড়া—আর একবাড়ী এগিয়ে দেখ’ বলিয়া উপদেশ দিত না, এবং পুরুষেরাও চাক্‌রি না করিয়া ভিক্ষা করি কেন, তাহার কৈফিয়ৎ তলব করিত না। ধনি-দরিদ্র-নির্ব্বিশেষে প্রতি গৃহস্থই সেখানে ভিক্ষা দিত—কেহই বিমুখ করিত না। এম্‌নি দিন যায়। দিন-পনর ত সেই আম বাগানের মধ্যেই কাটিয়া গেল। দিনের-বেলা কোন বালাই নাই, শুধু রাত্রে মশার কামড়ের জ্বালায় মনে হইত—থাক্‌ মোক্ষসাধন! গায়ের চামড়া আর একটু মোটা করিতে না পারিলে ত আর বাঁচি না! অন্যান্য বিষয়ে বাঙালী যত সেরাই হোক্, এ বিষয়ে বাঙালীর চেয়ে হিন্দুস্থানী চাম্‌ড়া যে সন্ন্যাসের পক্ষে ঢের বেশি অনুকূল, তাহা স্বীকার করিতেই হইবে। সেদিন প্রাতঃস্নান করিয়া সাত্ত্বিকভোজনের চেষ্টায় বহির্গত হইতেছি, গুরুমহারাজ ডাকিয়া বলিলেন—

“ভরদ্বাজ মুনি বসহিঁ প্রয়াগা
যিনহি রামপদ অতি অনুরাগা—”

 অর্থাৎ ষ্ট্রাইক্‌ দি টেণ্ট—প্রয়াগ যাত্রা করিতে হইবে। কিন্তু কাজ ত সহজ নয়! সন্ন্যাসীর যাত্রা কি না! পা-বাঁধা টাট্টু খুঁজিয়া আনিয়া বোঝাই দিতে, উটের উপরে মহারাজের জিন কসিয়া দিতে, গরুছাগল সঙ্গে লইতে, পোঁটলা পাঁট্‌লি বাঁধিতে গুছাইতে একবেলা গেল! তার পরে রওনা হইয়া ক্রোশ-দুই দূরে সন্ধ্যার প্রাক্কালে বিঠৌরা গ্রামপ্রান্তে এক বিরাট বটমূলে আস্তানা ফেলা হইল। জায়গাটি মনোরম, গুরুমহারাজের দিব্য